মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০

আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর - WE ARE GREEN, WE ARE CLEAN : শিশুদের অংশগ্রহণ



১.  গ্রেটা থানবার্গ নামে  ছবির ছোট মেয়েটিকে অনেকেই হয়তো টেলিভিশনে দেখেছি, সতের বছর বয়সী জলবায়ুকর্মী গ্রেটা সুইডেনের স্টকহোমে বড় হয়েছে। গ্রেটার মা মালেনা আরম্যান একজন অপেরা গায়ক এবং সাবেক ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী। তার বাবা সাভান্তে থানবার্গ একজন অভিনেতা। তাদের পূর্বপুরুষ সাভান্তে আরহেনিয়াস নামে একজন ‘গ্রীণ হাউস ইফেক্টের মডেল’ এর বিজ্ঞানী ছিলেন, যিনি ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে রসায়নের জন্য নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। দুই মেয়ের মধ্যে বড় গ্রেটা আট বছর বয়সে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে শিখেছিলেন তবে তার বাবা-মা জলবায়ুকর্মী ছিলেন না। গ্রেটার এস্পারগার্স সিনড্রোম ব্যাধি রয়েছে এবং এটি একটি অনুগ্রহ হিসাবে সে বর্ণনা করে থাকে। যা অন্যদের চেয়ে আলাদা হওয়ার একটি "পরাশক্তি” হিসেবে মনে করে। 

২. "স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট" নামে একটি অনলাইন সাইডে গ্রেটা জড়িত হয় এবং জলাবায়ু সম্পর্কে পড়তে থাকে। জলবায়ু বিষয়ে নিয়মিত পড়াশুনা করায় শুক্রবার দিনে তার স্কুলের পড়ালেখা বাদ দিতে হয়, অল্পসময়ে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীরা তার সাথে অনলাইনে সম্পৃক্ত হতে থাকে। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০,০০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী তার সাথে যুক্ত হয়েছে। ইউরোপ জুড়ে "স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট" আন্দোলন বিস্তারের কাজ শুরু করে, পরিবেশ সুরক্ষার বিষয় চিন্তা করে সে ভ্রমণের সময় রেলপথ বেছে নিয়েছে। বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের সাথে জলবায়ু সুরক্ষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য এই কিশোরী পুরো ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত থাকে। জাতিসংঘের একটি জলবায়ু সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার জন্য সে ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে ভ্রমণ করেছে। পরিবেশগত বিষয়টি চিন্তা করে আকাশ পথে উড়তে সে অস্বীকার করে বরং একটি রেসিং ইয়টে (নৌকা) দু'সপ্তাহ যাত্রা শেষে সভাস্থলে পৌঁচ্ছে।
ছবি: স্নেহা গমেজ ও ক্যাথি গমেজ, মনিপুরিপাড়া, ঢাকা
৩. নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের শীর্ষ সম্মেলনে (২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ) বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে গ্রেটা থানবার্গ বলেছে- ভবিষ্যতের সমস্ত প্রজন্মের চোখ আপনাদের উপর রয়েছে এবং আপনারা যদি আমাদের ব্যর্থ করতে চান তবে আমি বলি - আমরা  কখনই আপনাদের ক্ষমা করব না। গ্রেটা আরো বলেছে- শিশুদের জীবন বাঁচাতে, স্বাস্থ্য রক্ষা করতে এবং পড়াশুনা অব্যাহত রাখার গুরুত্বপূর্ণ কাজের সমর্থন করার জন্য আমি সবাইকে আহ্বান করছি। গ্রেটা একটি অনলাইন বিবৃতিতে প্রকাশ করেছে-  জলবায়ু সঙ্কটের মতো করোনাভাইরাস মহামারীটি একটি শিশু-অধিকার সঙ্কট, এটি এখন এবং দীর্ঘমেয়াদে সমস্ত শিশুকে প্রভাবিত করবে, তবে দুর্বল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সতের বছর বয়সী জলবায়ু কর্মী গ্রেটা করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় এবং শিশুদের সম্ভাব্য ক্ষতিকর পরিণতি থেকে বাঁচাতে তার পুরস্কারের অর্থ (১০০,০০০ ইউএস ডলার) জাতিসংঘের শিশু তহবিলে দান করেছে।

৪. করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এ বছর বিশ্বে ব্যতিক্রমী আয়োজনের মাধ্যমে বিভিন্ন সংগঠন “বিশ্ব ধরিত্রী দিবস” পালন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশে ‘ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস ও লিটল সিটিজেন্স ফর ক্লাইমেট’ নামে সংগঠনটির উদ্যোগে ‘নিরাপদ ধরিত্রী সবুজ অরণ্য, নিশ্চিত করবে দুর্জয় তারুণ্য" শ্লোগানে আয়োজন করা হয়েছে "ক্লাইমেট স্ট্রাইক অন অনলাইন"। তাদের একটি প্রতিবেদন অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে (বিডিনিউজ২৪.কম)। এতে অংশ নিয়েছে উপকূলবর্তী জেলা ভোলার শিশু জলবায়ুকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার ও ফেইসবুকে প্ল্যাকার্ড ও ছবি প্রদর্শন এবং ভিডিও বার্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তারা অংশ গ্রহণ করে।

৫. ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা থেকে অংশগ্রহণকারী সাবিয়া আক্তার মীম বলে- "করোনার মধ্যেও থেমে নেই জলবায়ু পরিবর্তন। মনপুরার ৩ নং সাকুচিয়া ইউনিয়ন ক্রমাগত ভাঙছে। আমরা করোনা নিয়ে কাজ করছি কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনকে নিয়ে উদাসীন। তাই আমার দাবি সংকটকে সংকট মনে করে কার্যকর পদক্ষেপ  গ্রহণ করুন।" চরফ্যাশন উপজেলার আরজু মনি বলে- "নিরাপদে বেঁচে থাকতে একটি সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশ থাকা আবশ্যক। আর এরকম একটা পৃথিবী আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে চাই। আর সেজন্য কার্বনডাইঅক্সাইড নিঃসরণ কমাতে হবে। বৃক্ষ নিধন বন্ধ করতে হবে। আমাদের কোনো কার্যক্রমে যেন পৃথিবীর ক্ষতি না  হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।" রাবিকুল নামের একজন শিশু ফেইসবুকে বলে, "আজ আমি নিরাপদ পৃথিবী চাই। আমি চাই না জলবায়ু বিপর্যয়ে কোনো শিশু তার ভবিষ্যৎ হারাক। তাই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।"

৬. নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের শীর্ষ সম্মেলনে (২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ) গ্রেটা থানবার্গ বলেছে- আমার বার্তাটি হ'ল আমরা আপনাদের প্রতি দৃষ্টি রাখব। এই সবই ভুল। আমার এখানে থাকাটা উচিত হয়নি। সমুদ্রের অন্য প্রান্তে স্কুলে ফিরে যাওয়া আমার উচিত। তবুও বলছি, আপনারা সবাই আশার সংবাদ নিয়ে আমাদের তরুণদের কাছে আসুন। কত দুঃসাহস আপনাদের, আপনারা শুধু মিথ্যাভাষণ দিয়ে আমার স্বপ্ন এবং আমার শৈশব চুরি করছেন। তবুও আমি ভাগ্যবানদের একজন। মানুষ আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে এসব শিশুরা। এ ব্যাপারে বিশ্বনেতাসহ দেশনেতা-নেত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচ্ছে তারা। নিজে পরিচ্ছন্ন থেকে, নিজের বাড়ি পরিস্কার করে, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে, বাড়িতে শাক-সবজি ও ফুলের বাগান করে, গাছ লাগিয়ে, পরিবেশ নষ্ট থেকে বিরত থেকে, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস পরিমিত ব্যবহার করে ও পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতন হয়ে আমরাও জলবায়ু সুরক্ষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারি। স্নেহা ও ক্যাথির আঁকা ছবিগুলো এই লেখায় ব্যবহার করা হয়েছে, ছবি আঁকা ওদের সখ। ছবি আঁকা যাদের সখ তারা ছবির মাঝে সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তার মহিমা অন্তরে অনুভব ও প্রকাশ করতে পারে।  শিশু-কিশোরদের ছোট ছোট উদ্যোগ ও পদক্ষেপ প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় মহৎ কিছু অর্জন সত্যিই সম্ভব। 

(প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ সহভাগিতামূলক উদ্যোগ, জলবায়ু সুরক্ষা দপ্তর, ন্যায় ও শান্তি কমিশন, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন