--এক---
১. কাকলি রোজারিও, বনপাড়া, নাটোর: আজ বৈশাখের ঠিক মাঝামঝি সময়। মনের মেঘের সাথে প্রকৃতির মেঘ গভীর মিতালী গড়ে তুলেছে, কখনও মেঘ আবার কখনও টুপটাপ ব়ৃষ্টি। কখনও আবার অদ্ভুত ভাবে ডাকাডাকির ধুম, সাথে নরম বাতাস। মনের প্রতিটি অনুভূতিতে যেন মিশে গেছে প্রকৃতির এই বৈচিত্র্যময়তার রূপ। বিকেলে কাজ শেষ করে ঘরে জানালার ধারে বসে এই দৃশ্য উপভোগ করছিলাম। ভাবছিলাম বছরের শুরুতে যদি জানতাম এই মহামারী করোনার কথা, তাহলে হয়তো প্রস্তুতি অন্যরকম হতো। কিন্তু প্রকৃতি কি বলে কয়ে রূপ পরিবর্তন করে, সেতো স্বাধীন তাই হয়তো এত ভয়ংকর আর এতো সুন্দর।
২. প্রকৃতি নাকি আগামী একশত বছরের জন্য নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নিচ্ছে। সত্যি কি তাই? হয়তো সত্যি, পৃথিবী রূপ এই সময়ে কেমন জানিনা কিন্তু নিজের চারপাশ আজ বেশিরভাগই ভিন্ন রূপে রূপসী হয়ে উঠেছে। অপরিচিত ফুল-ফলের মেলা , পাখির গুঞ্জন আর আকাশে মেঘের দুষ্টুমি সবমিলিয়ে নতুনভাবে নিজেকে আবিষ্কার করা। ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন রকম শাকসবজি, ফুলের চাড়া লাগানোর কাজে মহাব্যস্ত হয়ে উঠেছে। ঘরে বসে নতুন নতুন জিনিস তৈরি করে ঘর সাজিয়ে, প্রকৃতির আবেশে নতুন রূপ দিচ্ছে।
বনপাড়া, নাটোর |
৩. আমরা কি এমনই পরিবেশ পরিবারে ও প্রকৃতিতে সর্বদা খুজেঁ ফিরিনি, নতুনত্বের এই স্পর্শ পাবার জন্য আমরা সর্বদাই কি তৃষিত ছিলাম না। হয়তো যে বলবে-অগোচরে- "আমরা এমন পৃথিবীই চেয়েছিলাম " আমরা তাকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাড় করাবো। কিন্তু এই মহামারির শত তিক্ততা আর যন্ত্রনার মাঝেও প্রকৃতির এই রূপ আমরা চাইলেই অস্বীকার করতে পারবো না কিন্তু চাইলেই এই মুহূর্তে স্নাত হতে পারবো। সেটা হতে পারে ফুলের রেণুকায়, হতে পারে বৃষ্টিতে আবার হতে পারে তীব্র বেদনায়। পছন্দ যার যার .....
--দুই--
১. আজ ৬ মে মঙ্গলবার, গত রাতেই স্থির করলাম খুব ভোরে জমি দেখতে যাবো। বেশ কিছুদিন ধরে বৈরী আবহাওয়ার কারনণ ইচ্ছা থাকলেও যাওয়া হয়ে উঠেনি। বেশ দূর, হেটে গেলে প্রায় পৌনে একঘন্টা সময় লাগে তাই পরিকল্পনা হলো সকালে যাবার। যেমন কথা তেমন কাজ, খুব ভোরেই রওনা হলাম আমি আর আমার দুই মেয়ে আজ আবহাওয়াও খুব অনুকূলে। ভোরের বাতাস, পাখির ডাক, শিশির ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে হেটে চলা, উপরে আকাশ, চারিদিকে সবুজের হাতছানি তে কখন যে চলে এলাম বুঝতেই পারিনি সময়ের ব্যবধান।ছাইতানগাছা, বড়াইগ্রাম, বনপাড়া
২. আমাদের জমির কাছে আসতেই মনটা ভরে উঠলো মুগের ছোট ছোট চারাগাছের মিষ্টি চাহনিতে, পাশেই তিলের চারা সবেমাত্র দুটো পাতা নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টায় সফল হয়েছে। কাছে গিয়ে বসলাম গোপনে সকলের অগোচরে অনেক কথা হলো, বিদায় নিলাম, তাদের প্রয়োজনীয়তার কথা শুনলাম। যে কারনে বিশেষ করে আসা। একটু দুরেই নীচু জমি বেশ পানি জমেছে, পানির উপরে দুটি কচি পাতার আর্বিভাব মনটা খুশিতে ভরে উঠলো, ভয় হচ্ছিল যদি পানিতে বীজ নষ্ট হয়। ভয় কেটে গেলো, কিন্তু ক্লান্ত লাগছিলো এতক্ষণের হাঁটাহাঁটিতে, বিলের মাঝে আমাদের জমির পাশেই একটা মেহগুনী বাগান। বিশ্রামের জন্য আমি আর আমার মেয়েরা ওখানে বসলাম।
৩. হঠাৎ খেয়াল করলাম দুরে একটা জমি সাদা হয়ে আছে, অনেক চেষ্টার পর বুঝলাম এই গুলো সাদা বক কিছু খাচ্ছে। মেয়েরা বললো চলো যাই, কাছ হতে দেখে আসি, কখনও এত বক পাখি একসাথে দেখিনি। আমার মনেও এই ইচ্ছাই উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলো তাই জমির আঁকাবাঁকা আইল ধরে বাতাসের সাথে উড়ে চললাম। কিন্তু একটু কাছে এসে পরতেই পাখিগুলো উড়ে যাচ্ছিল, তাই মন চাইলেো না তাদের বিরক্ত করতে। তাই ওখানেই বসে অনেকক্ষণ তাদের বিভিন্ন বিষয় উপভোগ করতে লাগলাম হঠাৎ মেয়ের কথায় বুঝলাম অনেক সময় হয়েছে কারণ রোদের বেশ তাপ লাগছে আর পেটেও জোড়ে সোরে প্রতিবাদ চলছে উপোসের বিরুদ্ধে।
৪. তাই মন না চাইলেও রওনা হলাম বাড়ির উদ্যেশ্যে, এক বিল পেরিয়ে আরেক বিলে ধানের জমিতে বাতাসের খেলা, ভুট্টার জমিগুলোর একসমান মাথা তুলে দাড়িয়ে থাকা, মুগ, পাট, তিলের এই পৃথিবীর বুকে মাত্র বেরিয়ে আসার দৃশ্য, আকাশে বিভিন্ন রংয়ের ঘুড়ির স্বাধীন হওয়ার উচ্ছাসে মনটাও উড়ে চললো কল্পবিলাসি হয়ে। হঠাৎ দেখলাম দুটো বক পাখির দল নানা কসরতের সঙ্গে মাথার উপর উড়ে বেড়াচ্ছে, ইস্ কি যে চমৎকার বুঝাতে পারবোনা। কেন জানি মনে হলো আমাদের জন্যই এই রঙিন আয়োজন। সবই সৃষ্টিকর্তার অসীম অনুগ্রহ। সব দেখতে দেখতে মন গেয়ে উঠলো,
(প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ সহভাগিতামূলক উদ্যোগ, জলবায়ু সুরক্ষা দপ্তর, ন্যায় ও শান্তি কমিশন, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী)
--দুই--
১. আজ ৬ মে মঙ্গলবার, গত রাতেই স্থির করলাম খুব ভোরে জমি দেখতে যাবো। বেশ কিছুদিন ধরে বৈরী আবহাওয়ার কারনণ ইচ্ছা থাকলেও যাওয়া হয়ে উঠেনি। বেশ দূর, হেটে গেলে প্রায় পৌনে একঘন্টা সময় লাগে তাই পরিকল্পনা হলো সকালে যাবার। যেমন কথা তেমন কাজ, খুব ভোরেই রওনা হলাম আমি আর আমার দুই মেয়ে আজ আবহাওয়াও খুব অনুকূলে। ভোরের বাতাস, পাখির ডাক, শিশির ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে হেটে চলা, উপরে আকাশ, চারিদিকে সবুজের হাতছানি তে কখন যে চলে এলাম বুঝতেই পারিনি সময়ের ব্যবধান।ছাইতানগাছা, বড়াইগ্রাম, বনপাড়া
২. আমাদের জমির কাছে আসতেই মনটা ভরে উঠলো মুগের ছোট ছোট চারাগাছের মিষ্টি চাহনিতে, পাশেই তিলের চারা সবেমাত্র দুটো পাতা নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টায় সফল হয়েছে। কাছে গিয়ে বসলাম গোপনে সকলের অগোচরে অনেক কথা হলো, বিদায় নিলাম, তাদের প্রয়োজনীয়তার কথা শুনলাম। যে কারনে বিশেষ করে আসা। একটু দুরেই নীচু জমি বেশ পানি জমেছে, পানির উপরে দুটি কচি পাতার আর্বিভাব মনটা খুশিতে ভরে উঠলো, ভয় হচ্ছিল যদি পানিতে বীজ নষ্ট হয়। ভয় কেটে গেলো, কিন্তু ক্লান্ত লাগছিলো এতক্ষণের হাঁটাহাঁটিতে, বিলের মাঝে আমাদের জমির পাশেই একটা মেহগুনী বাগান। বিশ্রামের জন্য আমি আর আমার মেয়েরা ওখানে বসলাম।
ছাইতানগাছা, বড়াইগ্রাম, বনপাড়া |
৪. তাই মন না চাইলেও রওনা হলাম বাড়ির উদ্যেশ্যে, এক বিল পেরিয়ে আরেক বিলে ধানের জমিতে বাতাসের খেলা, ভুট্টার জমিগুলোর একসমান মাথা তুলে দাড়িয়ে থাকা, মুগ, পাট, তিলের এই পৃথিবীর বুকে মাত্র বেরিয়ে আসার দৃশ্য, আকাশে বিভিন্ন রংয়ের ঘুড়ির স্বাধীন হওয়ার উচ্ছাসে মনটাও উড়ে চললো কল্পবিলাসি হয়ে। হঠাৎ দেখলাম দুটো বক পাখির দল নানা কসরতের সঙ্গে মাথার উপর উড়ে বেড়াচ্ছে, ইস্ কি যে চমৎকার বুঝাতে পারবোনা। কেন জানি মনে হলো আমাদের জন্যই এই রঙিন আয়োজন। সবই সৃষ্টিকর্তার অসীম অনুগ্রহ। সব দেখতে দেখতে মন গেয়ে উঠলো,
"স্বার্থক জনম মাগো জন্মেছি এই দেশে
স্বার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেসে "
(প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ সহভাগিতামূলক উদ্যোগ, জলবায়ু সুরক্ষা দপ্তর, ন্যায় ও শান্তি কমিশন, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন