মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০

পরিবেশ বিপর্যয়ে জগতের আর্তনাদ এবং করণীয়


১. পরিবেশ বিপর্যয় গভীরভাবে বিশ্লেষণে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন- ভয়ভীতি ও সম্মানবোধ ছাড়াই আমরা যদি  প্রকৃতি এবং পরিবেশকে দেখতে চেষ্টা করি তবে আমাদের মনোভাব প্রভুত্বকারী, ভোগবাদী এবং নির্মম শোষণকারীদের মতো হয়ে উঠবে, যারা  ভোগ কমাতে জানে না (লাউদাতো সি ১১)।তিনি আরও বলেছেন- আমি সংক্ষেপে বর্তমান পরিবেশ বিপর্যয়ের কয়েকটি দিক পর্যালোচনা করতে চাই (১৫)। আমাদের উদ্দেশ্য তো ভুঁড়ি ভুঁড়ি তথ্য সংগ্রহ করা বা কৌতুহল নিবৃত্ত করা নয়; পক্ষান্তরে, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বেদনাদায়ক হলেও এ বিষয়ে সচেতন হওয়া, পৃথিবী নামক গ্রহটির যে-অবনতি ঘটছে তা ব্যক্তিগতভাবে নিজের জন্য বেদনাদায়ক কষ্ট বলে অনুভব করা এবং আমরা  প্রত্যেকে এ বিষয়ে কী করতে পারি তা আবিষ্কার করা (১৯)। 

২.পোপ ফ্রান্সিস এর মতে- প্রথমতঃ আসিসির সাধু ফ্রান্সিস এর মতো অন্তরে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকর্ম এবং দরিদ্র ও সমাজচ্যুত জনগণের প্রতি বিশেষ দরদবোধ উপলব্ধি করতে হবে (১১); দ্বিতীয়তঃ পরিবেশের প্রতি যত্নবান ও রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্বটি একটি আহ্বান হিসেবে গ্রহণ করতে হবে- "যারা আনন্দ করে তাদের সঙ্গে আনন্দ কর; যারা কাঁদে, তাদের সাথে কাঁদ" (রোমীয় ১২:১৫)। পোপ মহোদয় জগতের আর্তনাদের দুটি পরস্পরসংযুক্ত বিষয় প্রকাশ করেছেন। একটি সৃষ্টির আর্তনাদ এবং অপরটি দরিদ্রদের আর্তনাদ। 

৩. সৃষ্টির আর্তনাদ: অকপট দৃষ্টিতে বাস্তবতার দিকে তাকালেই বুঝা যায়- রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের অভাবে আমাদের সকলের এ অভিন্ন বাসগৃহটি কতটা দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। পরিবর্তনের দ্রুতগতির দরুণ পরিস্থিতি যে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে তার লক্ষণ অত্যন্ত সুস্পষ্ট (৬১)। কেননা আমাদের আচরণ মাঝে মাঝে আত্নঘাতী বলেই মনে হয় (৫৫)। প্রলয়কাল সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণীকে এখন আর ব্যঙ্গবিদ্রূপ বা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমরা হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে কেবল ধ্বংসস্তূপ, সর্বনাশ ও ময়লা আবর্জনাই রেখে যাচ্ছি (১৬১)। প্রতি বছরই কত হাজার হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী  যে চিরদিনের জন্য বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তার হিসাব আমরা জানতেও পারবো না, কারণ তাদের অস্তিত্ব ভবিষ্যৎ প্রজন্ম  সেগুলো কখনো দেখতেও পাবে না, কেননা তাদের  অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের তো এমনটি করার কোন অধিকার নেই (৩৩)।সৃষ্টি অবিরত কাঁদছে, আমরাও প্রতিনিয়ত কষ্টভোগ করছি।

৪. দরিদ্রদের আর্তনাদ: মানবিক পরিবেশ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ- এই দু'য়ের অবনতি একইসাথেই হয়; সুতরাং মানবিক ও সমাজিক অবনতির কারণ বিবেচনা না ক'রে আমরা যথাযথভাবে পরিবেশ অবনতির মোকাবিলা করতে পারি না (৪৮)। কিছু কিছু ধনী দেশগুলোর বিপুল পরিমাণ ভোগের কারণে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলো দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে (৫১)। আমাদের বেলাও তা সত্যি, আমাদের অতিভোগের কারণে অন্য কেউ-না-কেউ বঞ্চিত হচ্ছে। সন্তানদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আর্তনাদ আমরা হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে কেবল ধ্বংসস্তূপ, সর্বনাশ ও ময়লা আবর্জনাই রেখে যাচ্ছি (১৬১)।আমার প্রতিবেশী অবিরত কাঁদছে, আমার পাশেই কাঁদছে।

৫. আমরা একটু চিন্তা করি ও অন্তরে উপলব্ধি করি- ক. সৃষ্টি ও দরিদ্রদের আর্তনাদ আমাকে কি বলছে? খ. এই মুর্হূতে পরিবেশ বিপর্যয়ের মাঝে আমার বর্তমান অবস্থান কোথায়? আমি কি পরিবেশ ধ্বংস করছি অথবা রক্ষণাবেক্ষণ করছি? গ. পরবর্তী প্রজন্মের নিকট অর্থাৎ আমাদের যেসব সন্তান এখন বেড়ে উঠছে তাদের জন্য আমি কেমন বিশ্ব রেখে যেতে চাই? (১৬০)

৬. কিন্তু একান্তভাবে হতাশাগ্রস্ত না হয়ে আামাদেরকে বরং বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এরূপ শোচনীয় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণেরও উপায় আছে। আামাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমরা যে কোন সময় কিছু-না-কিছু করতে পারি।আমাদের আশা হল ঈশ্বর যিনি শূণ্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তিনি পৃথিবীতেও হস্তক্ষেপ করতে পারেন এবং সব ধরনের অমঙ্গলকে পরাস্ত করতে পারেন। অন্যায্যতা অজেয় নয় (৭৪)। তিনি আমার, আপনার সহযোগিতায় তা করতে চান। আজ থেকেই আমার ও আপনার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদক্ষেপ মহৎ কিছু অর্জন সম্ভব।



সূত্র : সৃষ্টির সঙ্গীত : অধ্যায় ২:৭৬-৯২ এবং জগতের আর্তনাদ : অধ্যায় ১ সম্পূর্ণ ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন