বুধবার, ৬ মে, ২০২০

আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর - WE ARE GREEN, WE ARE CLEAN : এলিসন সুং


১. আমি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার একটি খাসিয়া পুঞ্জিতে বসবাস করি। জন্ম থেকেই প্রকৃতি ও পরিবেশ আমাদের কাছে মায়ের মতই আপন। আমাদের জীবন-জীবিকা প্রকৃতির উপর নির্ভর, আমার বেঁচে থাকার তাগিদে আমি প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকি। পান, চা-পাতা, লেবু, আনারসসহ হরেক রকম ফলফলাদি গাছ যেমন রোপন করি তেমনি বনজ ও ঔষদি গাছসহ নানা জাতের গাছ আমাদের রোপন করতে হয়।এই করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার জন্য দেশে লেবুর চাহিদা প্রচুর, আমরা লেবুসহ ভিটামিন সি’র উৎস অনেক ফল  উৎপাদন করে থাকি। এখানে কিছু বিষয় সহভাগিতা করতে চাই। 
খাসিয় পানপুঞ্জি, পানজুমে পান সংগ্রহে ব্যস্ত লেখক, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার
২. বাংলাদেশ সবুজ দেশ হিসাবে পরিচিত। সারা দেশ জুড়ে আছে বিভিন্ন রকমের গাছপালা। আছে নানাজাত আকৃতির গাছ।ফুলের গাছ, ফলের গাছ,নাম না জানা, আরও কত কি গাছ। ফলের গাছ পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ও মানুষের খাদ্য জোগায়। ইতিহাস কথা বলে, প্রাচীন কালে আদিম মানুষেরা জীবন ধারনের জন্য বিভিন্ন ফলই ছিল তাদের প্রধান খাদ্য।বাংলাদেশে বর্তমানে নানাজাত রকমের ফল পাওয়া যায়। মিঠা ফল, টক ফল প্রভৃতি। লেবু টক জাতীয় রসাল ফল। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন "সি" রয়েছে। লেবু ক্ষুধা বাড়ায়, শরীরের চর্বি কমায় ও কফ দুর হয়।টক লেবুর শরবত খুবই সুস্বাদ ও উপকারী।শরীর-মনকে করে, সতেজ ও প্রশান্তি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মতে,বর্তমানে এই করোনাভাইরাসের জন্য টক লেবু ঔষধি হিসাবে কাজ করে থাকে। লেবু দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানিরা পানীয় ও সাবান, ওয়াসিং পাউডার তৈরী করে থাকে। বাংলদেশে টক লেবু হিসাবে কাগজি, বাতাবি, জারা, চায়না লেবু প্রভৃতি চাষ হয়। কাগজি লেবু ফলন অধিক হয় ও দেশের সর্বত্র এলাকায় কম-বেশী পাওয়া যায়।লেবু দেশের কম-বেশী সকল এলাকায় চাষ হয়। তবে চাপাই-নবাবগঞ্জ, রংপুর, পার্বত্য চট্রগ্রাম, হবিগঞ্জ, সিলেট এবং মৌলভীবাজারে অধিক লেবু উৎপন্ন হয়। করোনাভাইরাস সময়ে লেবু খুবই উপকারি,  সুতরাং সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।।

৩. আমাদের দেশের জাতীয় ফল হল কাঁঠাল। কাঁঠাল কম-বেশী সকল লোকেই খেতে পছন্দ করে। কাঠালে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন, শর্করা, আমিষ ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ রয়েছে। কাঁঠাল কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতে খাওয়া যায়।কাঁচা কাঁঠাল সবজি হিসাবে রান্না করে থাকে। পরিপক্ব পাকা কাঁঠাল খাওয়ার পরে তার বীচ তরকারি হিসাবে রান্না করা হয় আবার চামড়া ও ভিতরের অংশ গৃহপালিত পশু গরু,ছাগলের প্রিয় খাদ্য।আমাদের দেশে লোককথায় কাঁঠালের অনেক উল্লেখ রয়েছে। যেমন -"গাছে কাঁঠাল গোঁফে তৈল" কবি সাহিত্যদের কথা লেখায় কাঁঠালের গুণাগুণ, কবিতা ছন্দময় প্রভৃতি দেখা যায়।সর্বোপরি গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে দেশীয় জাতীয় ফল আখ্যায়িত করা হয়।ইদানীং কালে বাজার-হাটে ভালমানের কাঁঠাল পাওয়াটা অনেক কষ্টের ব্যাপার। কারণ কিছুসংখ্যক কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা কাঁঠাল চাষী কৃষকের কাছ থেকে বাৎসরিক বাগান চুক্তি ফসল কিনে নেয়। আবার কিছু ব্যবসায়ী আগাম অর্থ দিয়ে তাদের লক্ষ্য বেড়াজালে চাষীকে আটকিয়ে নেয়।গাছে ফল আসার সাথে-সাথে অধিক মুনফা লাভের জন্যে ব্যবসায়ীরা পরিপক্ব- অপরিপক্ব কাঁঠাল কাটা ও সংগ্রহ করে থাকেন। কিছু অসৎ কারবারী আধুনিক কলাকুশলে কৃত্রিম ঔষধ প্রয়োগ করে কাঁঠালগুলো বাজারজাত করে থাকেন। ফলে অপরিপক্ব কাঁঠালগুলো পেকে যায়। সাধারণ মানুষ অধিক আগ্রহে বাজার থেকে কাঁঠাল কিনে প্রতিনিয়ত হয় ভোগান্তি।তাই ব্যবসায়ীরা একটু সচেতন হলে আমরা ফিরিয়ে পাবো, আমাদের জাতীয় ফলকে।ফিরে পাবো ঐতিহ্যগত মজাদার ফলকে,যার প্রশংসা গ্রাম বাংলার মুখেমুখে প্রচারিত। আসুন, আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশকে নিজের মত ভালবাসি, ধ্বংস না করি।


(প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ সহভাগিতামূলক উদ্যোগ, জলবায়ু সুরক্ষা দপ্তর, ন্যায় ও শান্তি কমিশন, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন