শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০

Twenty six Bangladeshi migrants killed in revenge attack in Libya

Migrants resting on the floor of a detention centre, amidst concerns over the spread of the coronavirus disease (COVID-19), in the city of Zawiya, Libya May 5, 2020. REUTERS/Stringer

Libya's Tripoli government says 26 Bangladeshi migrants killed in revenge attack.
Bangladesh has demanded that the Libyan authorities quickly investigate the killings of 26 Bangladeshis, alongside four Africans, and punish those involved in the brutal incident which took place on Thursday.

Bangladesh also demanded compensation for the families of those were killed and injured, said Foreign Minister AK Abdul Momen in a statement today.
The Bangladeshi migrants killed in the incident were mostly from Madaripur, Bhairab of Kishoreganj, Gopalganj and Magura districts.

They went to Libya recently amid the global Covid-19 pandemic hoping to change their fortunes by crossing the Mediterranean Sea to reach Europe, ASM Ashraful Islam, labour counsellor at Bangladesh Mission in Tripoli, told The Daily Star this evening.
The official said they learnt the identities of the dead after talking to the injured Bangladeshis.
Meanwhile, Momen said the Libyan interior ministry has already ordered investigation into the matter and arrest of the killers.

Bangladesh's foreign ministry said the Bangladesh Mission in Tripoli confirmed that there were 38 Bangladeshis and some Africans held hostage by the Libyan militias, who could be human traffickers, at a town called Mizda, about 180 kilometres south of the capital Tripoli.
On Thursday, they were being brought to the capital. On the way, the traffickers demanded large amounts of money from the victims who had earlier paid up to $10,000 each.
A heated negotiation then followed.

At one stage, an altercation broke out and the gang leader of the traffickers died. In retaliation, the other gang members opened fire on the Bangladeshis and Africans, killing the 30. Also, 11 Bangladeshis were injured in the attack.

One Bangladeshi, however, fled and took shelter at a residence of a Libyan national. He later contacted the Bangladesh mission and informed in details about the incident.
The Bangladesh embassy there then contacted hospital authorities in Mizda and arranged primary treatment of the 11 survivors. Later, they were transferred to a hospital in Tripoli.
Of the 11, six are now doing well, three have undergone surgery and the two others will also have to do so, the foreign ministry said in a statement.

The dead bodies have been kept at a hospital in Mizda town. Bangladesh Embassy in Tripoli is working to get the identities of the Bangladeshis. Foreign Minister Momen said it is suspected that the Bangladeshis and Africans were taken to Tripoli for trafficking to Italy through the Mediterranean Sea. He said there were a number of incidents earlier too when Bangladeshis, among other nationals, drowned in the Mediterranean.
"We had collected names of traffickers and police also arrested some then. We would again get the names of these traffickers [involved in the shooting] and bring them to book," the minister said. The Bangladesh government also contacted the International Organization for Migration (IOM) for providing assistance in whatever way it can in this regard, he added.

"We have just learned of this tragedy and are following up to get more details and provide assistance to survivors," said Safa Msehli, Libya spokeswoman for the International Organisation for Migration. Libya has long been a destination for migrants because of its oil-funded economy, but is also an important way-station for people attempting to reach Europe across the Mediterranean. (Internet collection The Daily Star May 29, 2020)


আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত লিবিয়ার সরকার (জিএনএ) বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিজদা শহরে ২৬ বাংলাদেশি ও চার আফ্রিকান অভিবাসী নিহত হয়েছেন এবং আহত ১১ জনকে জিনতানের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। মানবপাচারকারী খুন হওয়ার বদলায় তার পরিবারের সদস্যরা হতাহতের এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে মানবপাচারের অন্যতম রুট হয়ে উঠেছে ইতালি। এই ঘটনা নিয়ে লিবিয়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মুখপাত্র সাফা মেসহলি বলেন, “আমরা মাত্রই এই মর্মান্তিক ঘটনা সম্পর্কে জেনেছি। ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার এবং আহতদের সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি ।” (নিউজ ডেস্ক,  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম )

শনিবার, ২৩ মে, ২০২০

“প্রকৃতি ও পরিবেশ দিবস” উপলক্ষে প্রার্থনা


“প্রকৃতি ও পরিবেশ দিবস” উপলক্ষে প্রার্থনা
(লাউদাতো সিসপ্তাহ১৬২৪২০২০)

হে প্রেমময় সর্বশক্তিমান প্রভু,
তুমিই স্বর্গ ও মর্ত্য এবং তার যাবতীয় সৃষ্টির একমাত্র স্রষ্টা।
তোমার প্রতিমূর্তিতে তুমি আমাদের সৃষ্টি করেছো
তোমার সকল সৃষ্টি এবং সর্বজনের বসতবাড়ি আমাদের এই ধরিত্রীকে
তত্ত্বাবধান করার দায়িত্ব তুমি আমাদের  ওপর ন্যস্ত করেছো।
সূর্যালো, জলরাশি ও ফলশালী ভূসম্পদ দান করে,
তুমি আমাদের ধন্য করেছো,
যেন এর দ্বারা সকল মানুষের খাদ্যপুষ্টি  সাধিত হয়।

আমাদের হৃদয়-মন উম্মুক্ত করো এবং আমাদের অন্তর স্পর্শ করো,
যেন আমরা তোমার দান এই সৃষ্টির যত্ন নিতে পারি।
তুমি আমাদের সচেতন হতে সাহায্য করো, যাতে আমরা বুঝতে পারি যে,
সর্বজনের বসতবাড়ি এই পৃথিবী শুধু আমাদের জন্য নয়,
 বরং ভবিষ্যতের সকল প্রজন্মের জন্য তুমি সৃষ্টি করেছো,
আর সেই উদ্দেশ্যে তা সুরক্ষা করার দায়িত্ব তুমি আমাদের হাতে অর্পণ করেছো।

মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও সম্পদের নিরাপত্তা দান করতে,
আমরা যেন প্রত্যেককে সাহায্য করতে পারি। 
বর্তমান কঠিন দুর্যোগে, যারা অভাবী,
বিশেষভাবে যারা হতদরিদ্র ও পিছে-ফেলে-রাখার ঝুঁকি মধ্যে যারা আছে,
তাদের পাশে যেন আমরা দাঁড়াতে পারি। 

আমাদের ভয়-ভীতি, উদ্বেগ ও একাকীত্বের মধ্যে তুমি আশা সঞ্চার করো,
যেন আমরা অন্তরে সত্যিকার পরিবর্তন উপলব্ধি করতে পারি।
বর্তমানকালের বৈশ্বিক মহামারিজনিত অশুভ সকল প্রভাব মোকাবেলা করতে,
মানব-সংহতির প্রতিষ্ঠার জন্য, তুমি নব-পথ প্রদর্শন করতে আমাদের সাহায্য করো।

সর্বজনের মঙ্গল সাধন করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পরিবর্তন গ্রহণ করতে
তুমি আমাদের সৎসাহস দান করো।
পৃথিবীর আর্তনাদ ও দরিদ্রদের আকুল কান্না থেকে
তাদেরকে উদ্ধার করার সকল প্রচেষ্টায়,
অতীতের তুলনায় সম্প্রতিকালে, আমরা যে পরস্পরের সঙ্গে আরও সংযুক্ত,
এই সত্য আমরা যেন উপলব্ধি করতে পারি।  আমেন ॥
সৌজন্যে:  এফএবিস-ওএইচডি
অনুবাদে: কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি



শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০

কার্বন ব্যবহার মাত্রা পর্যবেক্ষণের একটি অনুশীলন


লাউদাতো সি বা তোমার প্রশংসা হোক সপ্তাহ (৬ষ্ঠ দিন)
কার্বন ব্যবহারের একটি সরল পর্যবেক্ষণ
কার্বন পদচিহ্ন
কার্বন পদচিহ্ন হল গ্রীহাউজ গ্যাসের পরিমাণ অর্থাৎ সাধারণত কার্বন ডাই অক্সাইড যা পণ্য উৎপদন, সেবা গ্রহণ ও মানুষের নিত্যদিনের ক্রিয়াকলাপ দ্বারা বায়ু্মণ্ডলে নির্গত হয়। মানুষের ব্যাপক কার্যকলাপ, ব্যক্তিগত, পারিবারিক,  সামাজিক উৎসব, সংস্থা ও সংগঠন এবং সমগ্র জাতির ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে কার্বন নির্গত হতে পারে। উদাহরণ- মিল কারখানা, যানবাহন, বিদেশী টিনজাত খাবার, গাড়ি, এি/সি, রিফ্রিজারেটর, বেশি মাংস খাওয়া, সাজ-সজ্জা, জেনারেটর, বিদ্যুৎ, টেলিভিশন, পানি, বিদেশী পণ্য ইত্যাদি অতি ব্যবহারে বেশি মাত্রায় এবং কম ব্যবহারে কম গ্যাস নির্গত হবে। জলবায়ু উষ্ণতাবৃদ্ধির কারণ মানুষের কর্মকাণ্ড থেকে নির্গত এই গ্রিণহাউজ গ্যাস। যা আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাছে ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে ফলে মানুষের অনেক কষ্টের কারণ হয়ে উঠছে। আমাদের জীবনযাত্রা পরিবর্তন করে, অতি উৎপাদন ব্যবস্থা ও ভোগবাদী অভ্যাস ও আচরণ নিয়ন্ত্রন করে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে গ্যাসের দূষণ কমিয়ে আনা যায়। লাউডাতো সি সপ্তাহে আজ ৬ষ্ঠ দিনে আমরা এ বিষয়ে পাঠ করি, চিন্তা-অনুধ্যান করি ও কাজ করি বা কিছুু ব্যক্তিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করি।  

একটি সরল পর্যবেক্ষণ
আপনার ব্যক্তিগত কার্বন ব্যবহার অবস্থান জানার জন্য এই সরল পর্যবেক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পারেন। ১ থেকে ৫ নাম্বার পর্যন্ত প্রতিটি কার্যক্রমের জন্য একটি বর্ণ অর্থাৎ (ক) অথবা (খ) চিহ্নিত করুন। যা আপনার জীবনযাত্রার সর্বোত্তম নির্দেশনা প্রকাশ করে থাকে।

প্রথম ধাপ
১. আমার প্রতিদিনকার খাবার তালিকায় বেশিরভাগ থাকে-
     (ক) নিরামিষাশী খাদ্য অর্থাৎ আমি নিরামিষভোজী
     (খ) অ-নিরামিষাশী খাদ্য অর্থাৎ আমার খাদ্য মাংস ও মাছ প্রধান

২. আমি টেলিভিশন দেখি বা কম্পিউটার বা স্মার্টফোন ব্যবহার করি-
    (ক) দিনে মোট  ৪ ঘন্টার চেয়ে কম সময় ধরে
    (খ) দিনে মোট ৪ ঘন্টা বা এর চেয়ে আরো বেশী সময় ধরে

৩. এক মাসে আমি কেনাকাটা করে থাকি-
    (ক) মোট ৫টির কম কাপড় বা বই বা ব্যক্তিগত প্রসাধন/যত্নের জিনিসপত্র
    (খ)  মোট ৫টি বা এর চেয়ে বেশি কাপড় বা বই বা ব্যক্তিগত প্রসাধন/যত্নের জিনিসপত্র

৪. আমার প্রতিদিনের যাতায়াত ব্যবস্থা সাধারণত মাধ্যম থাকে-
    (ক) পায়ে হেঁটে বা বাই-সাইকেল ব্যবহার করে বা গণপরিবহন ব্যবহার করি
    (খ) ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার করে থাকি

৫. গরম আবহাওয়ার সময় আমি ব্যবহার করে থাকি-
    (ক) বৈদ্যুতিক পাখা
    (খ) শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এ/সি)

দ্বিতীয় ধাপ
বর্ণ (ক) এর জন্য ১ পয়েন্ট। বর্ণ (খ) এর জন্য ৩ পয়েন্ট দিন। এখন পাঁচটির পয়েন্ট একসাথে যোগ করুন ও যোগফল মনে রাখুন।

তৃতীয় ধাপ
এখন আপনার কার্বন ব্যবহারের অবস্থান জেনে নিন।
নিম্নতম: মোট যোগফল ৫ থেকে ১০ পয়েন্টের নিচে- সুস্বাগতম! আপনার কার্বন ব্যবহার মাত্রা খুবই কম। এমন মানসিক মনোবল ধরে রাখুন যা জলবায়ু-বান্ধব জীবনযাত্রা।

মাঝারি: মোট যোগফল ১০ থেকে ১৫ পয়েন্টের নিচে- আপনার কার্বন ব্যবহার মাত্রা মধ্যম বা মাঝারি পর্যায়। মনের জোর থাকলে ও ইচ্ছা করলেই কার্বন ব্যবহার  হ্রাস করে জলবায়ু বান্ধব জীবনযাত্রা শুরু করতে পারেন।

উচ্চ: মোট যোগফল ১৫ পয়েন্ট: আপনার কার্বন ব্যবহার মাত্রা উচ্চ পর্যায়। যদিও আপরার কার্বন ব্যবহার উচ্চ পর্যায় তবুও আপনি সচেতন হয়ে লাউদাতো সি সপ্তাহের অনুপ্রেরণা ও প্রার্থনায় ছোট ছোট পদক্ষেপ গ্রহণ করে কার্বন ব্যবহার কমাতে পারেন। আপনারও জলবায়ু-বান্ধব জীবনযাত্রায় অংশগ্রহণ করা অধিকার আছে। আপনার মহৎ পদক্ষেপের জন্য অগ্রিম শুভকামনা।


সূত্র: লাউদাতো সি সপ্তাহে এফ এ বি সি কর্তৃক প্রকাশিত।



বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০

আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর: আসুন, ফল ভালবাসি, গাছ রোপন করি- এলিসন সুঙ::


১. পৃথিবীতে মানুষের সাথে গাছপালার সম্পর্ক আদিকাল থেকে। সাধারণত জানি গাছপালার নাম হচ্ছে  উদ্ভিদ। উদ্ভিদ প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জলবায়ুকে সুন্দর রাখে। গাছপালা পরিবেশের  সৌন্দর্য পাশাপাশি মানুষকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে থাকেন।বেঁচে থাকার জন্যে গাছপালা মাটি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। বাংলাদেশেরই সন্তান  বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু এই কথা বলেছেন "গাছের প্রাণ আছে"।তিনি ছিলেন একজন সুনামধন্য গবেষক ও তার গবেষণা ক্ষেত্র হল গাছপালা নিয়ে। গাছপালা গবেষক বা গাছপালা বিষয়ে যারা অধিক লেখাপড়া করেছে, তাদের মতে পৃথিবীতে  চার লক্ষাধিক  বিভিন্ন প্রজাতি গাছপালা রয়েছে। পৃথিবীতে সারি সারি প্রহরীন্যায় দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।ফলের গাছ ফুলের গাছ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীতে বৃদ্ধি করে, প্রসারিত করছে নিজরূপ।মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপন গাছপালা প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতি ফলের গাছ থেকে আমরা খাবার জন্য ফল সংগ্রহ করে থাকি। ফল আমাদের শরীরে আমিষ, শ্বেতসার, ভিটামিন,  লৌহ ও ক্যালসিয়াম যোগান দিয়ে থাকেন। স্বাভাবিক জীবন-ধারনের জন্য এগুলো অতিপ্রয়োজন।নিয়মিত ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

২. আজ পেয়ারা ফল সম্পর্কে উল্লেখ করব।ইদানীং বাংলদেশে গ্রাম-গঞ্জে প্রায় সব জায়গাতে পেয়ারা পাওয়া যায়।বসতবাড়ি আঙ্গীনায়, শহরে বাসাবড়ির ছাদে টবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে  চাষ করা হয়। দেশের মানুষের চাহিদা পূর্ণ করতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় পেয়ারা বাগান।সাধারণত পেয়ারাকে বাংলাদেশের আপেল বলা হয়।পেয়ারা অন্যান্য দেশীয় ফলের মধ্যে একটি স্থান দখল করেছে। দাম সীমিত থাকায়  দেশের সর্বসাধারণ মানুষ ক্রয় করে খেতে পারছে। পেয়ারা অন্যান্য সুনামধন্য ফলের তুলনায়  গুনগতমান কোনদিকে কমতি নেই। পেয়ারা, আপেলের চেয়ে প্রায় ৫০গুন বেশী ভিটামিন সি রয়েছে।  ভিটামিন সি ছাড়াও পেয়ারায় আছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ প্রভৃতি। পেয়ারা একটি উৎকৃষ্ট এবং পুষ্টিকর ফল হিসাবে সকলের পরিচিত। "পেকটিন" প্রচুর থাকায় পেয়ারা থেকে সহজে জেলী তৈরী করা যায়।আয়ুর্বেদী বিশেষজ্ঞদের মতে পেয়ারা অনেক গুণাবলী রয়েছে। যেমন-
         (ক) পেয়ারা তৃষ্ণা মেটায় এবং বলকারক।
         (খ) কচিপাতা সিদ্ধ করে কয়েক দিন কুলি করলে দাঁতের অসুখ ভাল হয়।
          (গ) পাতলা পায়খানা হলে, কচিপাতা চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

বাগান- এলিসন সুঙ পাত্রখোলা পুঞ্জি, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার
৩. বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের পেয়ারা জন্মে। পেয়ারা রূপ,আকৃতি, ওজন এলাকার নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়।বাংলাদেশে পেয়ারা জাতের মধ্য অন্যতম স্বরূপকাঠি, কাঞ্চননগর, মুকুন্দপুরী প্রভৃতি। বর্তমানে দেশে উন্নতমান জাতের কাজী পেয়ারা চাষ হচ্ছে। এটি অন্যান্য পেয়ারা তুলনায় আকার-আকৃতি বড় এবং ওজন বেশী।গুনগতমান ও কার্যকারীতা বিচার বিশ্লেষণ করলে, পেয়ারা ফল মানবদেহে সুস্থ সবল থাকার জন্য অধিক ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাই বাংলার প্রবাদ বচনে বলা হয় "বার মাসে বার ফল, না খেলে যায় রসাতল "। আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে পেয়ারা চাষ করতে হবে। সেই সাথে বিভিন্ন  ফল খাওয়া অভ্যাস করতে হবে।তাহলে ভিটামিন অভাবজনিত রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। সুতরাং লাউদাতো সি সপ্তাহে শুভ কামনা, সুস্থ থাকুন #সুস্থ থাকুন।



বুধবার, ২০ মে, ২০২০

আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর – ফিরে যাই সেই ছোট্ট বেলায় : এম্মা ডি’কস্তা


গ্রাম বাংলার এই প্রকৃতি আমায় খুব কাছে টানে। আমি যেন ফিরে যাই সেই ছোট্ট বেলায় । যখন স্কুলে ভর্তি হবার আগেই সাঁতার শিখেছিলাম আমার কাকাদের কাছে। কারণ বর্ষাকালে এই নৌকা ও কোন্দা ছিল স্কুলে যাবার পরিবহন।

অনেকটা পথ বাড়ি থেকে কেউ না কেউ পার করে দিয়ে আসতো। তারপর হাটতাম। পরে আবার কিছুটা পথ মাঝি পার করে দিত। আবার হাটতাম। যথেষ্ট সময় লাগতো। কিন্তু তেমন কোন কষ্ট মনে হতোনা। কারণ আমরা অনেকজন একসাথে দল বেঁধে মজা করতে করতে যেতাম। মাঝে মাঝে কোন্দা বা নৌকা ডুবে যেতো। তখন সাঁতরাইয়ে পারে আসতে হতো কিংবা বড়রা উদ্ধার করতো।নৌকা বা কোন্দায় বসে নানান রঙের শাপলা আর মামাকলা তুলতাম। সেকি মজা পেতাম।


স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে খেয়ে খেলার সাথিদের সাথে সারাক্ষণ খেলতাম। সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে প্রার্থনা করে পড়তে বসতাম। তারপর খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। তাতেই পরীক্ষায় পাশ। কোন কোচিং কিংবা প্রাইভেট পড়ার তো দরকারই ছিল না। ঐ বয়সটা আমার এতো ভাল লাগতো যে মনে মনে চাইতাম যেন সব সময় ঐরকমই থাকি। কত্ত রকম খেলা আমরা বানিয়ে বানিয়ে খেলতাম। তখন থেকেই আমার প্রকৃতির প্রতি বিশেষ এক আকর্ষণ জাগে। গাছপালা, খাল বিল, নদী নালা, ফুল ফল, পশুপাখি সবই আমার প্রিয় হয়ে উঠে। আর যতটা পারি এদের যত্ন নিতে চেষ্টা করি।

'Laudato Si বা তোমার প্রশংসা হোক সপ্তাহ' আমাকে সুজুগ করে দিয়েছে আবার আমার শৈশব থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ঈশ্বরের সৃষ্টি নিয়ে ধ্যান করতে এবং আরও সচেতনতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে। তাই ঈশ্বরকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর প্রশংসা করি।



(প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ সহভাগিতামূলক উদ্যোগ, জলবায়ু সুরক্ষা দপ্তর, ন্যায় ও শান্তি কমিশন, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী)



মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০

পরিবেশ বিপর্যয়ে জগতের আর্তনাদ এবং করণীয়


১. পরিবেশ বিপর্যয় গভীরভাবে বিশ্লেষণে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন- ভয়ভীতি ও সম্মানবোধ ছাড়াই আমরা যদি  প্রকৃতি এবং পরিবেশকে দেখতে চেষ্টা করি তবে আমাদের মনোভাব প্রভুত্বকারী, ভোগবাদী এবং নির্মম শোষণকারীদের মতো হয়ে উঠবে, যারা  ভোগ কমাতে জানে না (লাউদাতো সি ১১)।তিনি আরও বলেছেন- আমি সংক্ষেপে বর্তমান পরিবেশ বিপর্যয়ের কয়েকটি দিক পর্যালোচনা করতে চাই (১৫)। আমাদের উদ্দেশ্য তো ভুঁড়ি ভুঁড়ি তথ্য সংগ্রহ করা বা কৌতুহল নিবৃত্ত করা নয়; পক্ষান্তরে, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বেদনাদায়ক হলেও এ বিষয়ে সচেতন হওয়া, পৃথিবী নামক গ্রহটির যে-অবনতি ঘটছে তা ব্যক্তিগতভাবে নিজের জন্য বেদনাদায়ক কষ্ট বলে অনুভব করা এবং আমরা  প্রত্যেকে এ বিষয়ে কী করতে পারি তা আবিষ্কার করা (১৯)। 

২.পোপ ফ্রান্সিস এর মতে- প্রথমতঃ আসিসির সাধু ফ্রান্সিস এর মতো অন্তরে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকর্ম এবং দরিদ্র ও সমাজচ্যুত জনগণের প্রতি বিশেষ দরদবোধ উপলব্ধি করতে হবে (১১); দ্বিতীয়তঃ পরিবেশের প্রতি যত্নবান ও রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্বটি একটি আহ্বান হিসেবে গ্রহণ করতে হবে- "যারা আনন্দ করে তাদের সঙ্গে আনন্দ কর; যারা কাঁদে, তাদের সাথে কাঁদ" (রোমীয় ১২:১৫)। পোপ মহোদয় জগতের আর্তনাদের দুটি পরস্পরসংযুক্ত বিষয় প্রকাশ করেছেন। একটি সৃষ্টির আর্তনাদ এবং অপরটি দরিদ্রদের আর্তনাদ। 

৩. সৃষ্টির আর্তনাদ: অকপট দৃষ্টিতে বাস্তবতার দিকে তাকালেই বুঝা যায়- রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের অভাবে আমাদের সকলের এ অভিন্ন বাসগৃহটি কতটা দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। পরিবর্তনের দ্রুতগতির দরুণ পরিস্থিতি যে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে তার লক্ষণ অত্যন্ত সুস্পষ্ট (৬১)। কেননা আমাদের আচরণ মাঝে মাঝে আত্নঘাতী বলেই মনে হয় (৫৫)। প্রলয়কাল সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণীকে এখন আর ব্যঙ্গবিদ্রূপ বা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমরা হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে কেবল ধ্বংসস্তূপ, সর্বনাশ ও ময়লা আবর্জনাই রেখে যাচ্ছি (১৬১)। প্রতি বছরই কত হাজার হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী  যে চিরদিনের জন্য বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তার হিসাব আমরা জানতেও পারবো না, কারণ তাদের অস্তিত্ব ভবিষ্যৎ প্রজন্ম  সেগুলো কখনো দেখতেও পাবে না, কেননা তাদের  অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের তো এমনটি করার কোন অধিকার নেই (৩৩)।সৃষ্টি অবিরত কাঁদছে, আমরাও প্রতিনিয়ত কষ্টভোগ করছি।

৪. দরিদ্রদের আর্তনাদ: মানবিক পরিবেশ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ- এই দু'য়ের অবনতি একইসাথেই হয়; সুতরাং মানবিক ও সমাজিক অবনতির কারণ বিবেচনা না ক'রে আমরা যথাযথভাবে পরিবেশ অবনতির মোকাবিলা করতে পারি না (৪৮)। কিছু কিছু ধনী দেশগুলোর বিপুল পরিমাণ ভোগের কারণে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলো দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে (৫১)। আমাদের বেলাও তা সত্যি, আমাদের অতিভোগের কারণে অন্য কেউ-না-কেউ বঞ্চিত হচ্ছে। সন্তানদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আর্তনাদ আমরা হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে কেবল ধ্বংসস্তূপ, সর্বনাশ ও ময়লা আবর্জনাই রেখে যাচ্ছি (১৬১)।আমার প্রতিবেশী অবিরত কাঁদছে, আমার পাশেই কাঁদছে।

৫. আমরা একটু চিন্তা করি ও অন্তরে উপলব্ধি করি- ক. সৃষ্টি ও দরিদ্রদের আর্তনাদ আমাকে কি বলছে? খ. এই মুর্হূতে পরিবেশ বিপর্যয়ের মাঝে আমার বর্তমান অবস্থান কোথায়? আমি কি পরিবেশ ধ্বংস করছি অথবা রক্ষণাবেক্ষণ করছি? গ. পরবর্তী প্রজন্মের নিকট অর্থাৎ আমাদের যেসব সন্তান এখন বেড়ে উঠছে তাদের জন্য আমি কেমন বিশ্ব রেখে যেতে চাই? (১৬০)

৬. কিন্তু একান্তভাবে হতাশাগ্রস্ত না হয়ে আামাদেরকে বরং বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এরূপ শোচনীয় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণেরও উপায় আছে। আামাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমরা যে কোন সময় কিছু-না-কিছু করতে পারি।আমাদের আশা হল ঈশ্বর যিনি শূণ্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তিনি পৃথিবীতেও হস্তক্ষেপ করতে পারেন এবং সব ধরনের অমঙ্গলকে পরাস্ত করতে পারেন। অন্যায্যতা অজেয় নয় (৭৪)। তিনি আমার, আপনার সহযোগিতায় তা করতে চান। আজ থেকেই আমার ও আপনার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদক্ষেপ মহৎ কিছু অর্জন সম্ভব।



সূত্র : সৃষ্টির সঙ্গীত : অধ্যায় ২:৭৬-৯২ এবং জগতের আর্তনাদ : অধ্যায় ১ সম্পূর্ণ ।


সোমবার, ১৮ মে, ২০২০

সকল জীবের মাঝে তাঁর প্রতিচ্ছবি - তোমার প্রশংসা হোক

১. আমরা যখন সৃষ্টির সকল কিছুতেই ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই, তখন তাঁর সকল সৃষ্টজীবের জন্য আমাদের হৃদয়মন প্রভুর প্রশংসায় মেতে উঠে এবং তাদের সঙ্গে একাত্ন হয়ে তাঁর  আরাধনায় নিরত থাকে (লাউদাতো সি - ৮৭)। 


২. শুধু পরিবারের মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করলে স্বার্থপর হয়ে উঠব; বরং বনের জীব-জন্তু, আকাশের পাখি, বাতাসে উড়ে বেড়ানো মশা-মাছি, ভূমির পোকা-মাকড় ও সরিসৃপ, নদী ও জলাভূমির মাছ, সমুদ্রের সকল জীবের কল্যাণের বিষয়ও ভাবি। সৃষ্টিকর্তা এদেরও সৃষ্টি করেছেন, প্রকৃতিতে এদের একটি করে ভূমিকা দেওয়া আছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য এদেরও দরকার আছে। এদের একটি যদি আমরা নিঃশেষ করে ফেলি তবে প্রকৃতি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে ফলে মানুষের কষ্ট বাড়বে। 

৩. বাড়িতে তাই খালি জায়গায় গাছ রোপণ ও নির্ধারিত গাছ  রক্ষণাবেক্ষণ জন্য ছেলেমেয়েদের  দায়িত্ব বন্টন করে দিতে পারি। শিশুদের চিত্রাঙ্কণ, সঙ্গীত ও নৃত্য চর্চায় প্রকৃতি ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়সমূহে উৎসাহিত করা যায়। গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা শহরে বাসাবাড়িতে টবে বারান্দায় বা ছাদে অথবা জানালার পাশে শাক-সবজি-ফুল বাগান তৈরি করি ও রক্ষণাবেক্ষণ করি। এতে মনে প্রশান্তি আসবে, স্বাস্থ্যকর খাবারের যোগান হবে এবং বাজার খরচ সঞ্চয় করতে পারব।



 ছবি: এম্মা ডি'কস্তা ফেইসবুস পোস্ট



সৃষ্টি ও প্রকৃতির ফটোস্টোরি


মহামান্য পোপ ফ্রান্সিস এর আহ্বানে ‘লাউদাতো সি বা তোমার প্রশংসা হোক সপ্তাহ’ ১৬-২৪ মে ২০২০ খ্রিস্টাব্দ  উদযাপিত হয়েছে। আমাদের জীবনে নিরাময় আসুক, যাতে আমরা বিশ্বকে রক্ষা করতে পারি এবং শিকার না করি (লাউডাতো সি -২৪৬)। কিছু ছবি গল্প-

--১--

জীবন এবং বিশ্ব যেমন গতিশীল বাস্তবতা, সুতরাং বিশ্বের প্রতি আমাদের যত্নও নমনীয় এবং গতিশীল হতে হবে (লাউডাতো সি - ১৪৪)।
--২--

--৩--

--৪--

--৫--





ছবি: যুব কমিশন, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী'র ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত




পরিবার, প্রকৃতি ও পরিবশে


পোপ ফ্রান্সিস এর আহ্বানে ‘লাউদাতো সি বা তোমার প্রশংসা হোক সপ্তাহ' ১৬-২৪ মে ২০২০ খ্রিস্টাব্দ আমরা উদযাপন করছি।আমাদের পরিবার হল সৃষ্টি ও প্রকৃতির একটি অংশ । পরিবার যত্ন নিয়ে থাকে সৃষ্টি ও প্রকৃতির এবং পরিবার বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপকরণসমূহ প্রকৃতি সরবরাহ করে থাকে। তাই দায়িত্বশীল পরিবার গঠন, সুন্দর জীবনযাপন, স্বামী-স্ত্রীর অঙ্গিকার রক্ষা, বিপদাপন্ন আপনজনদের সেবাযত্ন করে পারিবারিক পরিবেশ সুন্দর করে তুলতে পারি। পরিবারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদক্ষেপ- প্রয়োজন মাফিক কেনাকাটা, পরিমিত রান্না ও অপচয়রোধ, পরিমিত ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস, জিনিসপত্র পুনঃব্যবহার করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহযোগিতা করতে পারি।বাড়িতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিভিশন, এসি, পানির কল, বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহারের পর বন্ধ রাখাতে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। রান্নাঘরের অবশিষ্টাংশ, পাতা-লতা ও আবর্জনাগুলি মিশ্রিত করে উত্তম সার তৈরি করা যায় এবং এসব গাছের  বৃদ্ধিতে আরও ভাল সার হিসেবে সহায়তা করে। আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর থাকি।





শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষার্থে মহামান্য পোপ ফ্রান্সিস এর সর্বজনীন পত্র 'লাউদাতো সি' বা 'তোমার প্রশংসা হোক' অনু্প্রেরণায় কিছু সুপারিশমালা


১. পোপ ফ্রান্সিস এর আহ্বানে ‘লাউদাতো সি বা তোমার প্রশংসা হোক সপ্তাহ' ১৬-২৪ মে ২০২০ খ্রিস্টাব্দ আরম্ভ করেছি। অবরুদ্ধ সময়ে পরিবারে সদস্যরা একত্রে অথবা কর্মস্থলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মিটিং বা আলোচনার পূর্বে কিছু সময় সৃষ্টিকর্তার নিকট সৃষ্টির অসংখ্য দানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ও যত্নবান হওয়ার জন্য প্রার্থনা করি। অন্তরে গভীরভাবে উপলব্ধি করি- আবর্জনা এখানে-সেখানে ছুড়ে ফেলে অপরিচ্ছন্ন-অস্বাস্থ্যকর নর্দমা তৈরি করেছি; গাছ কেটেছি কিন্তু রোপনে অবহেলা করে পরিবেশে ভারসাম্য নষ্ট করেছি; স্বার্থপর ও অতিভোগের কারণে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ করে ফেলেছি; প্রতিনিয়ত প্রচুর পানি অপচয় করছি, খাল-নদীর জল বিষাক্ত করে ফেলেছি; এভাবে প্রকৃতি ও প্রতিবেশীদের প্রতি অনেক ক্ষতি  ইতোমধ্যে করেছি। এসব স্মরণ করে অনুতপ্ত হই ও মন-পরিবর্তন করে প্রকৃতি ও প্রতিবেশীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলি।

২. আমাদের পরিবার হল সৃষ্টি ও প্রকৃতির একটি অংশ । পরিবার যত্ন নিয়ে থাকে সৃষ্টি ও প্রকৃতির এবং পরিবার বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপকরণসমূহ প্রকৃতি সরবরাহ করে থাকে। তাই দায়িত্বশীল পরিবার গঠন, সুন্দর জীবনযাপন, স্বামী-স্ত্রীর অঙ্গিকার রক্ষা, বিপদাপন্ন আপনজনদের সেবাযত্ন করে পারিবারিক পরিবেশ সুন্দর করে তুলতে পারি। পরিবারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদক্ষেপ- প্রয়োজন মাফিক কেনাকাটা, পরিমিত রান্না ও অপচয়রোধ, পরিমিত ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস, জিনিসপত্র পুনঃব্যবহার করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহযোগিতা করতে পারি।বাড়িতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিভিশন, এসি, পানির কল, বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহারের পর বন্ধ রাখাতে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। রান্নাঘরের অবশিষ্টাংশ, পাতা-লতা ও আবর্জনাগুলি মিশ্রিত করে উত্তম সার তৈরি করা যায় এবং এসব গাছের  বৃদ্ধিতে আরও ভাল সার হিসেবে সহায়তা করে।

৩. শুধু পরিবারের মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করলে স্বার্থপর হয়ে উঠব; বরং বনের জীব-জন্তু, আকাশের পাখি, বাতাসে উড়ে বেড়ানো মশা-মাছি, ভূমির পোকা-মাকড় ও সরিসৃপ, নদী ও জলাভূমির মাছ, সমুদ্রের সকল জীবের কল্যাণের বিষয়ও ভাবি। সৃষ্টিকর্তা এদেরও সৃষ্টি করেছেন, প্রকৃতিতে এদের একটি করে ভূমিকা দেওয়া আছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য এদেরও দরকার আছে। এদের একটি যদি আমরা নিঃশেষ করে ফেলি তবে প্রকৃতি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে ফলে মানুষের কষ্ট বাড়বে।বাড়িতে তাই খালি জায়গায় গাছ রোপণ ও নির্ধারিত গাছ  রক্ষণাবেক্ষণ জন্য ছেলেমেয়েদের  দায়িত্ব বন্টন করে দিতে পারি। শিশুদের চিত্রাঙ্কণ, সঙ্গীত ও নৃত্য চর্চায় প্রকৃতি ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়সমূহে উৎসাহিত করা যায়। গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা শহরে বাসাবাড়িতে টবে বারান্দায় বা ছাদে অথবা জানালার পাশে শাক-সবজি-ফুল বাগান তৈরি করি ও রক্ষণাবেক্ষণ করি। এতে মনে প্রশান্তি আসবে, স্বাস্থ্যকর খাবারের যোগান হবে এবং বাজার খরচ সঞ্চয় করতে পারব।

৪. কর্মস্থলে প্রয়োজন ছাড়া কাগজে প্রিন্ট না করা, প্রয়োজনে  কাগজের উভয় পৃষ্ঠায় প্রিন্ট করা এবং সুযোগ থাকলে কাগজ পুনঃব্যবহার করতে পারি; কম্পিউটার, প্রিন্টার ও অন্যান্য অফিস সরঞ্জামসমূহ ব্যবহারের পরে বন্ধ রাখব; শারীরিক সমস্যা ব্যতিত দ্বিতীয়, তৃতীয় তলায় এবং সকালে লিপ্ট ব্যবহারে বিরত থাকা; এবং দলীয়ভাবে গাড়ী ব্যবহার করার মাধ্যমে কার্বন ব্যবহার হ্রাস করতে পারি। একটি মানবিক পরিবেশ রক্ষার জন্য কর্মস্থলে নারীদের প্রতি আচার-আচরণে শিষ্টাচার অনুসরণ,  সহকর্মীদের প্রতি পারস্পরিক যত্নশীল থাকা, সৌজন্যসূচক শব্দ ব্যবহার, দলীয়করণ মনোভাব ও অযাচিত তোষামোদপ্রিয়  স্বভাব সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। কর্মস্থলের খালি জায়গায় অথবা টবে বারান্দা বা ছাদে অথবা জানালার পাশে শাক-সবজি-ফুল বাগান তৈরি করি ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি।

৫. আফ্রিকার শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানুষ পানীয় জলে চরম সংকটে আছে, ভারতের কোন কোন প্রদেশে অনেক দামে পানি কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে, পাহাড়ী অঞ্চল রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের বিশুদ্ধ পানির অভাবে ঝর্ণার পানি পান করে ছোট ছোট শিশুরা এখনও মারাত্নক রোগব্যধিতে অসুস্থ হয়ে কষ্ট করছে এবং অনেকে মৃত্যুবরণও করছে। তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা  স্নানে কম পানি ব্যবহার করতে পারি, হাতমুখ ধোয়ার সময় কলের পানি নষ্ট না করি, যতটুকু পান করতে চাই ততটুকু পানি গ্লাসে ঢেলে পান করতে পারি। আমাদের এমন ক্ষুদ্র ক্ষ্রদ্র অভ্যাস পানি অপচয় অনেক হ্রাস করবে।

৬. মাটি একটি জীবন্ত উপাদান। এটি পাউডারযুক্ত এবং মারা উচিত নয়। জীবন মাটি থেকে আসে এবং তাই মাটি বাঁচিয়ে রাখা উচিত। স্বতন্ত্রভাবে মোড়ানো ক্যান্ডি প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকে এবং প্রচুর আবর্জনা তৈরি করে যা মাটিকে নষ্ট করে ফেলে। আমরা এমুহূর্তে প্লাস্টিক ব্যবহার বাদ দিতে পারছি না তাই সঠিকভাবে ব্যবহার করার দিকে গুরুত্ব দিতে পারি। আবর্জনা হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পলিথিন ব্যাগ একেবারেই বাদ দিতে হবে কারণ এর ক্ষতির ধরন বহুমাত্রিক এবং বাড়ছে- মাটি নষ্ট করে জমিতে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট করছে, শহরে নর্দমা বের হওয়ার পথ বন্ধ করে ব্যাপক ক্ষতি করছে এবং আগুনে দিলে গ্যাস হয়ে বায়ুদূষণ করে মানবদেহের সংঘাতিক ক্ষতি করছে। তাই পাটের তৈরি চটের ব্যাগ অথবা ভারী ও শক্ত কাপড় পুনঃব্যহার করে ব্যাগ তৈরি করে ব্যবহার  করতে হবে।

৭. করোনাভাইরাস মহামারী শিখিয়েছে আমাদের আরও বেশি যত্নবান ও রক্ষণাবেক্ষণ মনোভাব প্রয়োজন। নিজের কল্যাণের কথা ভেবেই প্রকৃতি, পরিবেশ এবং প্রতিবেশী সুরক্ষা সুসংবাদটি আপনজন, ও বন্ধুবান্ধবদের  জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র একটি আহ্বান। ইতোমধ্যে অনেকে নীরবে কাজ করে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছি। পোপ মহোদয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষার্থে ‘লাউদাতো সি বা তোমার প্রশংসা হোক সপ্তাহে' ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিকভাবে এবং কর্মস্থলভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ মহান কিছু অর্জন সম্ভব হবে।

আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর - WE ARE GREEN, WE ARE CLEAN: এল এইচ লুসি ঝর্ণা

Image may contain: 1 person, standing and outdoor

--১-- 
সৃষ্টি ও প্রকৃতি

--২--
রাতের আঁধারে নিজের সৌন্দর্যকে
বাড়িয়ে তুলেছে এ ফুল

ফুলের সুবাস থাকুক আর না থাকুক

সৌন্দর্যই মনকে করে আকুল।




                                              --৩--








(প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ সহভাগিতামূলক উদ্যোগ, জলবায়ু সুরক্ষা দপ্তর, ন্যায় ও শান্তি কমিশন, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী)


বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০২০

অবরুদ্ধ সময়ে কয়েকজন বন্দি শিশুর মুক্তি


১. অবরুদ্ধ সময়ে ইউনিসেফের সহযোগিতায় ভার্চুয়াল শিশু আদালতের কার্যক্রম চালু হয়েছে। এতে বুধবার (১৩ মে, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ) সাত শিশুর জামিন মিলেছে।করোনাভাইরাসের লকডাউনের কারণে নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় শিশুদের বন্দি জীবন কাটাতে হয়েছে।করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে বিচারের অপেক্ষায় আটক থাকা শিশুদের প্রথম দলের মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুকল্যাণ সংস্থা ইউনিসেফ।

২. এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিসেফ বলছে-  প্রথম দফায় ওই সাত শিশুর মুক্তির পথ অনুসরণ করে আগামী দুই সপ্তাহে বেশ কয়েকশ শিশু মুক্তি পেতে পারে। ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি তোমো হোযুমিকে বলেছেন- “আমি সর্বান্তকরণে ভার্চুয়াল শিশু আদালত চালুর সিদ্ধান্তের প্রশংসা করছি এবং বন্দিজীবন থেকে শিশুদের মুক্তি পাওয়াকে স্বাগত জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেছেন- “শিশুদের কল্যাণ ও সুরক্ষা অবশ্যই কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আমাদের কার্যক্রমের কেন্দ্রে থাকবে। সব ক্ষেত্রেই জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা শিশুদের জন্য এই মহামারীকে একটি স্থায়ী সংকটে রূপ নেওয়া থেকে প্রতিরোধ করতে পারি।” 

৩. অবরুদ্ধ সময়ে গত মার্চে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আটক শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। এই সংখ্যা কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোর ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী- ছোটখাটো অপরাধের বিচার বা সাজার অপেক্ষায় থাকা এক হাজারের বেশি শিশু বর্তমানে তিনটি কেন্দ্রে আটক রয়েছে। 

৪. করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব কালে কেন্দ্রগুলোতে সীমিত সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও লজিসটিকস সহায়তা, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল পানি, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা  ও সীমিত হাইজিন সুবিধা থাকার ফলে সেখানকার শিশু ও কর্মীদের সংক্রমণ ঝুঁকি বেশি। অন্যদিকে  শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা বা সেলফ আইসোলেশনে রাখা খুবই কঠিন, এমন কী সীমিত জায়গার কারণে তা একেবারেই সম্ভব নয়। এসব কেন্দ্র সংক্রমণ বিস্তারের হটস্পট হয়ে উঠতে পারে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি গত ৯ মে ভার্চুয়াল আদালত কার্যক্রম সচল করার অধ্যাদেশ জারি করেছেন। বাংলাদেশে প্রথম ভার্চুয়াল আদালত কার্যক্রম শুরু হয় ১২ মে, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। আদালত কার্যক্রম পরিচালনা করে সমাজ সেবা অধিদপ্তর এবং ইউনিসেফ কেন্দ্রসমূহে সহযোগিতা দিচ্ছে (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ১৪ মে, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ) ।



বুধবার, ১৩ মে, ২০২০

অবরুদ্ধ সময়ে অনেকে গৃহসন্ত্রাসের শিকার


১. নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বাড়ির মালিক এক নারী চিকিৎসককে 'দুর্ব্যবহার' করে ভাড়াবাড়িতে ঢুকতে বারণ করেছে। তিনদিন উপজেলা সদরে একটি অসরকারি ক্লিনিকে অবস্থান করে পুলিশ সহায়তায় নারী চিকিৎসক বাড়িতে উঠেছে (১৭ এপ্রিল, বিডিনিউজ২৪.কম)। ঢাকায় সবুজবাগে এক বাড়ির মালিক এক চিকিৎসককে ভাড়াবাড়ি ছাড়তে নোটিশ দিয়েছে, চিকিৎসক টাঙ্গাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত। মালিক টেলিফোনে একজন কর্মরত নার্সকে রাত ১০টার পর ভাড়াবাড়িতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছে । কর্মস্থলের কর্তৃপক্ষ বাড়ির মালিকের সাথে যোগাযোগ করলে উল্টো নার্সের চরিত্র নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। অবশ্য দুদক ইতিমধ্যে বাড়ির মালিকদের এমন সব আচরণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব সময়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর বাড়ির মালিকরা দুর্ব্যবহার করছে, যখন তখন হেনস্থা করছে ।  যা আমরা ইন্টারনেট সংবাদ থেকে জানতে পারছি। 

২. পৃথিবীর অনেক দেশ ও রাষ্ট্রপ্রধানগণ ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের করোনাভাইরাস দুর্যোগ মুহূর্তের অবদান বিশেষ সম্মানের দৃষ্টিতে দেখছে, আমাদের মাননীয় প্রাধানমন্ত্রীও একই মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের সহযোগিতা পাচ্ছে, জাতির বীরসেনা সম্মানে খ্যাতি পাচ্ছে। পোপ মহোদয় তাদের সেবাকাজে অভিভূত হয়ে বলেছেন- ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মিশনারি ও পুলিশসহ সকল সেবাকর্মীরা দুর্যোগ সময়ের বীরসেনা ও সাধুসম সেবাকর্মীদল।

৩. বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম গত ৬ মে, ২০২০ খ্রিস্টাব্দে "ত্রাণ নিতে গিয়ে ধর্ষিত হচ্ছে শিশুরা" শিরোণামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিত্তিক একটি জরিপ প্রকাশ করেছে। জরিপের তথ্য পুরোপুরি এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। জরিপ প্রকাশে সঞ্চালনা করেন 'মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন' এর সিনিয়র মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর শাহানা হুদা। জরিপের তথ্য অনুযায়ী  এপ্রিল মাসে দেশের ২৭ জেলায় চার হাজার ২৪৯ জন নারী ও ৪৫৬ জন শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে, জরিপটি করেছে মোবাইল ফোনে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংস্থা । জরিপের তথ্য উপস্থাপন থেকে আরো জানা যাায়- এদের মধ্যে এক হাজার ৬৭২ জন নারী এবং ৪২৪ জন শিশু প্রথমবারের মতো নির্যাতনের শিকার হয়েছে। শিশুদের মধ্যে ৯২ ভাগই তাদের বাবা-মা ও আত্মীয়দের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে।

৪. জরিপ থেকে জানা যায়- সংস্থার দুইটি প্রকল্পের কর্মএলাকার ২৪টি সহযোগী সংগঠন ২৭টি জেলার ৫৮ উপজেলার ৬০২টি গ্রাম ও চারটি সিটি কর্পোরেশনের ১৭ হাজার ২০৩ জন নারী ও শিশুদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী “স্বামীর দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৪৮ জন নারী, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দুই হাজার আটজন, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৫ জন এবং অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৩০৮ জন নারী। এর বাইরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন চারজন নারী, হত্যা করা হয়েছে একজনকে এবং যৌন হয়রানি করা হয়েছে ২০ জন নারীকে।" জরিপে আরো জানানো হয়- "উত্তরদাতা চার হাজার ২৫৯ শিশুর মধ্যে ৪২৪ জন শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর বাইরে বাল্যবিয়ে হয়েছে ৩৩টি এবং অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪২টি। চারজন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ১৬ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়, অপহৃত  হয়েছে দুইজন, যৌন হয়রানির শিকার ১০ জন এবং রিলিফ নেয়ার সময় ১০ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।"

৫. করোনাভাইরাসের এই সঙ্কটের মধ্যে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে পারিবারিক এবং অন্যান্য সহিংসতা প্রতিরোধ, সহায়তা দিতেই জরিপটি চালানো হয় বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম আরও বলেছেন- "লকডাউনের কারণে ইনডেপথ জরিপ করা সম্ভব হয়নি, সেজন্য টেলিফোনে করেছি। লকডাউনে পারিবারিক নির্যাতনের অবস্থা ও কি ধরণের নির্যাতন হচ্ছে তা জানতে চেয়েছি। তাদের কি ধরণের সাপোর্ট দেওয়া যায় সেটিও জানতে চেয়েছি।" তারা আরও বলেছেন- ‍‍"সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুরা যেন ফোন করে দ্রুত সহযোগিতা পায় সেজন্য সরকারি হেল্প লাইনগুলো আরও কার্যকর রাখার সুপারিশ করা হয়। সহিংসতার কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া নারীদের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় পাওয়ার ব্যবস্থা করা ও অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি। এছাড়া মহামারী পরিস্থিতিতেও নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চালু রাখতে ‘ভার্চুয়াল কোর্ট অর্ডিন্যান্স’ দ্রুত রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়।"

৬. এসব গৃহসন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে, সেটা যত ছোট পরিসরেই থাকুক না কেন। অন্যথায় করোনাভাইরাস বিপর্যয় সামাজিক বিপর্যয়ে পরিণত হওয়া আশংকা থেকে যায়। তাতে বিপর্যয় আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ দুর্গতি সময়ে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, "আমি এই মুহুর্তে আপনাদের সাথে স্মরণ করতে চাই  সেইসব নারীদের, যারা এই স্বাস্থ্য সংকটকালে অন্যদের দেখাশোনা করছেন, নারী ডাক্তার, নার্স, প্রশাসনিক কর্মী,  জেলখানার প্রহরী, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানকর্মী এবং মা-বোনেরা যারা পরিবারে সন্তান, বয়স্ক ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধীদের সাথে নিজেরাও বন্দি হয়ে আছেন।" পোপ আশংকা  প্রকাশ করে আরো বলেছেন- এই গৃহবন্দি সময়ে নারীরা গৃহসন্ত্রাসের শিকার হতে পারে। পোপ ফ্রান্সিস আরো বলেছেন- "নারীরা যে সব সংকট মোকাবেলা ক’রে এমন অবস্থায় বসবাস করছেন, তা তাদের জন্য অত্যন্ত ভারী দায়িত্ব, ফলে তাদের উপর সন্ত্রাসের একটা ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।" আসুন, আমরা সচেতন হই, মানবিক সমাজ গড়ি।



ছবি: ইন্টানেট সংগৃহীত।

মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০

অবরুদ্ধ সময়ে প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষার কিছু উপলব্ধি ও কিছু সুপারিশ


১. পাঁচ বছর পূর্বে (মে ২৪, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ) পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস পৃথিবীর যত্ন ও পরিবেশের উপর একটি সর্বজনীন পত্র লিখেছেন। পত্রটির শিরোনাম 'লাউডাটো সি' (Laudato Si)  এবং বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে 'তোমার প্রশংসা হোক'; যা বিশ্বের সকল মানুষের প্রতি প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় জেগে ওঠার একটি আহ্বান। পোপ মহোদয়ের অনুপ্রেরণামূলক এবং চ্যালেঞ্জপূর্ণ লেখাটি বিশ্বের মানুষকে প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশীদের বিষয়ে ভাবতে প্রেরণা যুগিয়েছে। সর্বজনীন পত্রটি প্রকাশের পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে পোপ মহোদয় 'লাউডাটো সি সপ্তাহ' (মে ১৬-২৪, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ) পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। এই আহ্বানের আসল উদ্দেশ্য হলো এই অভিন্ন বসতবাটির যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করার  জন্য যেন নিজেরা কিছু কিছু উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করি। এ অবরুদ্ধ সময়ে নিজের অবস্থানে থেকে প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষার জন্য দায়িত্বশীল আচরণ করার মাধ্যমে অর্থপূর্ণভাবে সপ্তাহটি উদযাপন  করতে পারি।

২. এ বছরের শুরুতে ‘ন্যায় ও শান্তি কমিশন-বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী’র ‘জলবায়ু সুরক্ষা দপ্তর’ এর উদ্যোগে 'আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর : WE ARE GREEN, WE ARE CLEAN' মূলমন্ত্র নিয়ে বিভিন্ন ধর্মপল্লীর গ্রাম, পাড়া বা মহল্লায় প্রকৃতি ও পরিবেশের মাঝে প্রার্থনা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, বায়ু-জল-শব্দদূষণ নিরোধ, প্লাস্টিক ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শাক-সবজি বাগান, বৃক্ষরোপণ, বসতবাটি সংলগ্ন জলাশয় নর্দমামুক্তকরণ, স্বাস্থ্যসম্মত মলনিষ্কাশন ব্যবস্থা বিষয়ক জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক এলাকায় খ্রিস্টভক্তগণ গুরুত্বের সহিত কর্মসূচি গ্রহণ করতে শুরু করেছে কিন্তু করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব বিস্তাররোধে লকডাউনের কারণে সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। নিজেদের সুস্থ পরিবেশের কথা চিন্তা করে গ্রামভিত্তিক, স্কুলভিত্তিক, পাড়াভিত্তিক বা মহল্লাভিত্তিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ করতে পারি। এই অবরুদ্ধ সময়ে ব্যক্তিগতভাবে ও পারিবারিকভাবে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি।

৩. পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন- ঈশ্বরের সৃষ্টিকর্মের যত্ন নেওয়া ও তা লালন ক’রে সৎ ও ধার্মিক জীবন যাপন করাই হচ্ছে আমাদের আহ্বানের মূল বিষয়; এটি আমাদের খ্রিস্টীয় জীবনের কোন ঐচ্ছিক বা আনুষঙ্গিক বিষয় নয় (লাউডাটো সি - ২১৭)। সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য বিষয়ভিত্তিক পড়ার অভ্যাস প্রয়োজন, তাতে বিষয় সম্পর্কে গভীর মনোযোগ দেয়া যায়। পোপ মহোদয়ের সাথে লাউডাটো সি চেতনায় একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য নিজেদের উদ্যোগ অর্থপূর্ণ করার জন্য অনুপ্রেরণামূলক পত্রটি পাঠ করতে পারি। পোপ মহোদয় কর্তৃক রচিত বাংলা অনুবাদের ১১৬ পৃষ্টার ৬টি অধ্যায়ের ২৪৬ পদ বিশিষ্ট পত্রটি শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও খুব সংক্ষেপে ৪ পাতায় সারমর্ম তুলে ধরেছেন। বিশপ মহোদয়ের লেখাটি পড়তে পারি; যা অনলাইনে বরেন্দ্র দূত, বিডি খ্রিস্টান নিউজ (BDChristianNews) এবং প্রত্যাশা ব্লগে (litonhgomes.blogspot. com)  ন্যায় ও শান্তি কলামে পাওয়া যাবে। 

৪. পোপ ফ্রান্সিস স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন- মানুষ প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশীদের প্রতি অনেক ক্ষতি করে চলেছে। পোপ মহোদয় আরও বলেছেন- ‘পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে মনপরিবর্তন’ অপরিহার্য, যাতে চতুর্দিকের জগতের সাথে মানুষের সম্পর্ক সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সুতরাং মনপরিবর্তন প্রক্রিয়ায় ৬টি ধাপ অনুসরণ করতে পারি। যেমন- প্রথম ধাপ- ধীর স্থির অন্তরে সৃষ্টির মাঝে সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি উপলব্ধি করি; দ্বিতীয় ধাপ- অপরূপ প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করি; তৃতীয় ধাপ- ক্ষতবিক্ষত ধরিত্রীর ও বিপদাপন্ন দরিদ্র মানুষজন অবিরত কাঁদছে তা অন্তরে শুনি; চতুর্থ ধাপ- অনুতপ্ত হৃদয়ে আমরা স্বীকার করি- আমরা মানুষই প্রতিবেশ বা পরিবেশ বিপর্যয়ের মূল কারণ; পঞ্চম ধাপ- তাঁর আহ্বান অন্তরে শুনি এবং সুনির্দিষ্ট কিছু কিছু পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণ করি; ষষ্ঠ ধাপ- একটি সুন্দর মনে সৃষ্টিকর্তার নিকট নিরন্তর প্রার্থনা করি, পত্রটির সমাপ্তির অংশে অর্থপূর্ণ দুইটি প্রার্থনা প্রস্তুত করা আছে।

৫. আমাদের অভিন্ন বসতবাটির প্রতি যত্নবান ও রক্ষণাবেক্ষণ তাগিদ অনুভব করার জন্য মৌলিক কিছু উপাদান নিয়ে গভীর মনোযোগসহ অনুধ্যান করতে পারি। যেমন- (ক) ভূমি বা মাটি, (খ) বায়ু বা বাতাস, (গ) আগুন এবং (ঘ) জল ইত্যাদি। এসব আমাদের জীবনযাপনে অপরিহার্য উপাদান, এসব ছাড়া জীবন বাঁচতে পারে না। প্রকৃতি ও পরিবেশ শুধু একটি বিচ্ছিন্ন বিষয় নয় বরং একটি সমন্বিত পরিবেশ যেখানে আছে প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক বিষয়। এখানে শুধু মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করলে হবে না; বরং বনের জীব-জন্তু, আকাশের পাখি-পঙ্গপাল, বাতাসে উড়ে বেড়ানো মশা-মাছির মত প্রাণীকুল, ভূমির পোকা-মাকর ও সরিসৃপ, নদী ও জলাভূমির মাছ, সমুদ্রের সকল জীবের কল্যানের বিষয়ও ভাবতে হবে। ঈশ্বর তো এদেরও সৃষ্টি করেছেন, প্রকৃতিতে এদের একটি করে ভূমিকা দেওয়া আছে। 

৬. এই অবরুদ্ধ সময়ে প্রতিদিন পারিবারিক রোজারিমালা প্রার্থনার সময় প্রতিটি নিগূঢ়রহস্য ধ্যান করার পূর্বে একজন কিছু সময় পরিবেশ সুরক্ষায় করণীয় বিষয়সমূহ সহভাগিতা করতে পারি। যেমন- করোনভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের পদক্ষেপসমূহ। পুণ্যপিতা পোপ মহোদয়ের সাথে একাত্ম হয়ে মহামান্য কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি কয়েকটি কর্মকাণ্ড গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ সব বিষয় নিয়েও সহভাগিতা করা যায় যেমন:  (ক) পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা- নিজের দেহ থেকে শুরু করে পোশাক-আশাক, ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট, কর্মস্থল, সমাবেশস্থল, প্রভৃতির পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা; (খ) অপচয়রোধ- প্রয়োজন অতিরিক্ত খরচপাতি, জিনিসপত্র ও দ্রব্যসামগ্রীর অপব্যবহার, ভোজনবিলাস ও ভোগের মানসিকতা বর্জন; (গ) দূষণমুক্ত পরিবেশ- শব্দ, বায়ূ ও জল - সকল প্রকার দূষণমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা; (ঘ) স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ- প্রকৃতিজাত, বিশুদ্ধ ও সুষম খাদ্য আহার ও পানীয় পান করা। পবিত্র বাইবেলে স্বর্গদূতের মুখে সংবাদ শুনে  মারীয়া যেমন এলিজাবেথকে সেবাযত্ন করতে দ্রুত ছুটে গেলেন, পিতরের শাশুড়ি ও মার্থা-মারীয়া যেমন পরিবারে সেবারত ছিলেন এবং ক্ষুদ্র নারীদলটি যেমন সমাধিগুহায় যিশুর দেহে সুগন্ধি সামগ্রী লেপন দিয়ে নিজেদের যত্নবান ও রক্ষণাবেক্ষণের দিকটি প্রকাশ করেছেন; আমরাও তাদের মত অন্তর নিয়ে পরিবার ও পরিবেশের প্রতি আরও বেশি যত্নবান ও রক্ষাণাবেক্ষণ করতে পারি। প্রার্থনা সময় সহভাগিতার আলোকে খাবারের সময় আলোচনা করে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে পারি।

৭. যিশু প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকতেন বলেই আমাদেরও সৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আহ্বান করেছেন। পরিবেশ সুরক্ষায় শিশু-কিশোরদের অবদানও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ইতোমধ্যে সতের বছর বয়সী জলবায়ুকর্মী সুইডেনের গ্রেটা থানবার্গ এর নাম শুনেছি, সে পরিবেশ সুরক্ষায় বিশ্বজুড়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে । এই অবরুদ্ধ সময়ে শিশুরা প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশীদের বিভিন্ন বিষয়ে সুন্দর সুন্দর ছবি অংকণ করতে পারে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধু ও আত্মী-স্বজনের সাথে শেয়ার করতে পারে। বাছাইকৃত ছবিসমূহ অবরুদ্ধ সময় অতিক্রান্ত হলে বাঁধাই করে রাখা যায়। করোনাভাইরাস মহামারী সময়ে অনেক যুবসংগঠন মানবসেবায় অংশগ্রহণ করেছে, যুবকরা পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়েও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। পোপ মহোদয়ের সাথে একাত্ম হয়ে প্রত্যেক ডাইওসিসের বিশপ মহোদয় অবশ্যই ভক্তজনগণের উদ্দেশ্যে 'লাউডাটো সি সপ্তাহ' উদযাপন করার সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কর্মকাণ্ড গ্রহণের আহ্বান করেছেন। বিশপ মেহোদয়ের আহ্বানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা একটা গুরুত্বপূর্ণ মাণ্ডলিক দায়িত্ব।

৮. দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগাতে আগ্রহ বৃদ্ধি করা যায় কারণ গাছগুলি কার্বনডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং প্রচুর ছায়া দিয়ে থাকে। দেশীয় প্রজাতির গাছ বেড়ে উঠতে কম জল প্রয়োজন হয়, গাছগুলো আরও শক্ত হয় এবং এগুলো স্থানীয় বন্যজীবকে আকর্ষণ করে। এসব গাছ স্থানীয় আবহাওয়া পরিস্থিতিতে সহায়ক এবং এগুলো মাটির ক্ষয়রোধসহ বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাস করে। বাড়ির আশেপাশে খালি জায়গা সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। সুতরাং দেশীয় গাছ ও ঘাস লাগানো যত বেশি পরিমান বাড়ানো যায় ততই উপকার পাওয়া যাবে। বৃষ্টিপ্রধান অঞ্চলের বন-জঙ্গল বাঁচাতে বন্যজীবনের চামড়া থেকে তৈরি পণ্যগুলি বর্জন করা দরকার। বৃষ্টিপ্রধান অঞ্চলের বন-জঙ্গল সমৃদ্ধ দেশগুলি থেকে আমদানীকৃত কাঠের পণ্যগুলি কিনতে গিয়ে পণ্যসমূহ পরিবেশ-বান্ধব সরবরাহকারীদের মাধ্যমে এসেছে তা নিশ্চিত হওয়া দরকার ।

৯. নিজ বাড়িতেই সার তৈরি ও ব্যবহার করলে ফলাফল উত্তম হবে। রান্নাঘরের অবশিষ্টাংশ, পাতা-লতা ও আবর্জনাগুলি মিশ্রিত করে উত্তম সার তৈরি করা যায় এবং এসব গাছের বৃদ্ধি জন্য আরও ভাল সার হিসেবে সহায়তা করে। সার তৈরি সম্পর্কে  বই বা বিভিন্ন লেখা পড়া যেতে পারে। এ বিষয়ে নিজ এলাকায় অত্যন্ত দক্ষ কাউকে পাওয়া গেলে পরামর্শ নেয়া যায়। মনে রাখতে হবে- মাটি একটি জীবন্ত উপাদান, এটি পাউডারযুক্ত এবং মারা উচিত নয়। জীবন মাটি থেকে আসে এবং তাই মাটি বাঁচিয়ে রাখা উচিত। সুতরাং মাটি বায়ুযুক্ত রাখতে খুব আক্রমণাত্মক বিষয়সমূহ এড়িয়ে চলা দরকার। 

১০. সঠিক হতো যদি প্লাস্টিকের অস্তিত্ব না থাকত এবং আমাদের পুনর্ব্যবহার করার প্রয়োজন না হত। যেহেতু আমরা এমুহূর্তে তা বাদ দিতে পারছি না তাই সঠিকভাবে ব্যবহার করার দিকে গুরুত্ব দিতে পারি। যারা ইতোমধ্যে সঠিকভাবে পুনর্র্ব্যবহার করছে তাদের অভিজ্ঞতা শুনতে ও প্রয়োগ করতে পারি। আবর্জনা হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বতন্ত্রভাবে মোড়ানো ক্যান্ডি প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকে এবং প্রচুর আবর্জনা তৈরি করে যা মাটিকে নষ্ট করে ফেলে। তাই কোন পণ্য কেনার আগে প্লাস্টিক মোড়কের কথা ভাবা যেতে পারে, এসব পরিবেশকে বহুমাত্রিক এবং ক্রমবর্ধমানভাবে নষ্ট করছে।   

১১. পোষা প্রাণীটিকে যখন আর প্রতিপাল করতে ইচ্ছা হবে না তখন এদের উন্মুক্তভাবে ছেড়ে দেয়া দায়িত্বশীল আচরণ নয়। এতে প্রাণীটি স্থানীয় পরিবেশে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। বন থেকে সংগ্রহ করা বিদেশী পোষা প্রাণী কিনতে যাওয়ার আগে ভাবতে হবে। পোষা প্রাণীর দোকানে প্রাণীটি  'বন্য-সংরক্ষিত' বা 'গৃহ-প্রজনন' এবিষয়ে তথ্য নিশ্চিতকরণ দায়িত্বশীল আচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। 'গৃহ-প্রজনন'  প্রাণী পরিবেশের জন্য আরও বন্ধুত্বপূর্ণ। পোষা প্রাণী কেনার আগে নিজের আগ্রহ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে  যে এটির যত্ন নিতে আমি প্রস্তুত। পোষা প্রাণী প্রতিপালনে যত্নবান ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

১২. প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশীদের ক্ষতির ধরন ও বিভিন্নতা বহুমাত্রিক এবং ক্রমবর্ধমান। এখন সুনির্দিষ্টভাবে কাজ শুরু করার একটা সমন্বিত রূপরেখা দরকার। স্থানীয় পরিবেশ সুরক্ষা সংগঠনে যোগদান করে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা যায়। পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মীদের অর্থায়ন করাও একটি ভালকাজ। নিজের কল্যাণে কথা ভেবেই প্রকৃতি, পরিবেশ এবং প্রতিবেশী সুরক্ষা সুসংবাদটি আপন পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়দের জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র একটি আহ্বান। ইতোমধ্যে অনেকে নীরবে কাজ করে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছে। অর্জনসমূহ সমবেতভাবে সহভাগিতা করে এগিয়ে যাওয়াটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সত্যিকার অর্থেই ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক গণ্ডি ত্যাগ করে সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত ভাবে প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য একসাথে কাজ করা অধিকতর কল্যাণ হবে। অন্যথায় আরও মাশুল দিতে হবে আগে না হোক অদূর ভবিষ্যতে। পোপ মহোদয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশীদের সুরক্ষায় 'লাউডাটো সি সপ্তাহে' আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ মহান কিছু অর্জন সম্ভব হবে।



আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর - WE ARE GREEN, WE ARE CLEAN: অনিতা মার্গারেট রোজারিও


বান্দরবন এর রুমা উপজেলার একটি গ্রাম মুনলাই পাড়া। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিস্কার পাড়া হিসেবে পরিচিত, এই পাড়ায় বম সম্প্রদায় এর জনগোষ্ঠীর বসবাস, এই গ্রামের পাশে বয়ে গেছে সাঙ্গু নদী। বগা লেক আর ক্রেওক্রাডং যাওয়ার পথে এটি একটি বম পাড়া। বম সম্প্রদায়ের ৫৪টি পরিবারের বসবাস এখানে। বান্দরবনের পাহাড়ে পাহাড়ে  ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যে বসতি বা পাড়া চোখে পড়ে, মুনলাই পাড়া সেগুলো থেকে ব্যতিক্রম। পাহাড়ী রাস্তার দুই ধারে নানা রকম রঙিন ফুলের গাছ, ঝকঝকে ছোট ছোট বাড়ি, যেগুলো স্বাভাবিকভাবেই মাচার উপর। সভ্যতা থেকে এত দূরে এত বিচ্ছিন্ন থাকার পরেও বম সংস্কৃতির মানুষজন খুবই শৃংখল উপায়ে প্রকৃতির মায়া-মমতাকে আঁকড়ে ধরে সাজিয়ে তুলেছে তাদের নিজের জগৎ। সাঙ্গু নদীর তীরে বিস্তার লাভ করা এই আদি অকৃত্রিম পাড়াটা একটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন গ্রামের নিদর্শন। রাস্তার দুই পাশে সুন্দর করে ড্রেন করে দেয়া আছে যেন বৃষ্টির পানি খুব সহজে চলে যেতে পারে। রাস্তার দুই পাশে অনেক সুন্দর ফুলের গাছ লাগানো আছে। রাস্তার দু,পাশে বসতবাড়ি রাস্তা এবং বসতবাড়ি খুবই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়। কোন ময়লা কোন পথে চোখে পড়েনা। গ্রাম থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। শুধু একটু চেষ্টা করলেই শুধু এই গ্রামটা নয় আমাদের পুরো বাংলাদেশকে আমরা অনেক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সবুজ রাখতে পারি। আমরা যার যার জায়গায় যদি সচেতন হই, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলি তাহলে আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর হয়ে যাবে। আসুন না আমরা যার যার জায়গা থেকে বিধাতার সৃষ্টি এই ধরণীকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে একটু সচেতন হই।




(প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ সহভাগিতামূলক উদ্যোগ, জলবায়ু সুরক্ষা দপ্তর, ন্যায় ও শান্তি কমিশন, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী)


সোমবার, ১১ মে, ২০২০

আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর - WE ARE GREEN, WE ARE CLEAN: এলিসন সুং


১. প্রকৃতির ঘেরা সুন্দর-অরূপ এই পৃথিবী। আর এই পৃথিবীতে সৃষ্টি সেরা জীব হলো মানুষ।মানুষের আছে বিবেক -বিবেচনা, বিশ্লেষণ, ক্ষমা-ভালবাসার পরিপক্ব জ্ঞান। যা অন্য কোন প্রাণী কাছে বিন্দু টুকু এই জ্ঞান নেই।মহান সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর সৌন্দর্যময় বাড়ানো জন্য সৃষ্টি করেছে দুটি মাত্র জাত সেইটি হল নর-নারী।এই নর-নারী ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ একীভূত হয়ে,পরস্পর হয়ে যায় একপ্রাণ একমন একদেহ। তাদের ভালবাসার ফসল হিসাবে জন্ম নেই,নতুন একটি জীবন। নারী দশমাস, দশদিন অপেক্ষা ও বিভিন্ন ঘাতপ্রতিঘাত কষ্টের ফলে পৃথিবীতে আবির্ভাব হয়,মানবজাতে নবজাতক শিশু সন্তান। নারী পেয়ে যায় নতুন একটি পদবী সেইটি হল "মা"। অবুঝ সন্তানটি যাতে রোদে না পুড়ে, মশা-মাছি না কাটে স্বাস্থহানী না হয়,সেদিকে সর্বদা সচেতন ও সুরক্ষা দান করে থাকেন।মায়ের অফুরন্ত ভালবাসায় বেড়ে উঠতে থাকে সেই শিশু সন্তান। মা হয়ে যায় সন্তানের প্রথম আদর্শ শিক্ষক।প্রতিনিয়ত দিক-নির্দেশনা ও পথের পথিক হয়ে,আজীবন মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। মায়ের সাথে অধিকাংশ সন্তানরা বন্ধুসুলভ আচরণ করে থাকে।যা পরিবারের অন্য কোন সাথে তা অসম্ভব। কোনকিছু আবদার মায়ের কাছে চাইতে সহজবোধ্য হয়।মা সবসময় সন্তানের চাহিদা পূরণ করতে সচেষ্ট থাকেন।


২. ইদানীংকালে প্রায় সময় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখা যায়, সন্তানেরা সম্পত্তি জন্য মাকে মারধর করছে। সুন্দরী-অপরূপ বউয়ের কথায় মাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছে।এমন কি ভরণপোষণ করা থেকে বিরত থাকে। বয়সের কারণে চেহারার পরিবর্তন হওয়াতে বৃদ্ধা মাকে পরিচয় দিতে লজ্জা পাচ্ছে। বয়সের ভারে নিত্যদিনের কাজ কর্ম করতে না পারাই মাকে কথা শুনতে হচেছ। মাকে সহ্য করতে না পারাই ছোঁড়ে ফেলা হচেছ বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রম নামক স্থানে।একাকীত্ব জীবন-যাপন যা, একজন মা জীবনে কোনদিন এই প্রত্যাশা করেনি। আমরা সকলই নিজের মায়ের কথা চিন্তা, মায়ের কি প্রয়োজন, মা আমাকে কি বলতে চাই, বুঝতে একটু চেষ্টা করি।নিজের মায়ের প্রতি যত্নবান হয়ে উঠি।আজ ঘরের "বউ" আগামী দিনে হবে আদর্শ "মা"।এই উক্তি চিরন্তন সত্য। সুতরাং সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।।


(প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ সহভাগিতামূলক উদ্যোগ, জলবায়ু সুরক্ষা দপ্তর, ন্যায় ও শান্তি কমিশন, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী)

শনিবার, ৯ মে, ২০২০

আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর - WE ARE GREEN, WE ARE CLEAN: অতুল আই. গমেজ


--- ১ ---
বোশেখ আসে দ্বারে******
""""""""""""""""""""""

চৈত্রি শেষে বোশেখ মাস
আসে মোদের দেশে,
বাংলা জাগে সবুজ রঙ্গে
চির নতুন বেশে।

মাঠ ভরে যায় বাদমী রঙ্গে
সোনালী পাঁকা ধানে,
কৃষক ভাইয়ের হৃদয় জুড়ায়
চেয়ে মাঠের পানে।
দড়িপাড়া,গাজীপুর
হঠাৎ আলো হঠাৎ কালো
বোশেখ মাসের আকাশ,
সুর বাজিয়ে ঝরে বাদল
সাথে বেধূম বাতাস।

গাছের সাথে দোল খেয়ে যায়
আম্র পড়ে ঝরে,
মন টিকেনা আমের লোভে
বাদল ঝরা ঘরে।

বৃষ্টি শেষে মেঘের ফাঁকে
দুষ্টু সূরুজ হাসে,
পদ্ম পাতার ফাঁকে ফাঁকে
রাজ হংসী ভাসে।

এমনি করে বছর ঘুরে
বোশেখ আসে দ্বারে,
নব কল্লোল জেগে উঠে
সবার ঘরে ঘরে।।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
                                    ৮/৫/'২০,দড়িপাড়া,গাজীপুর।


(প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ সহভাগিতামূলক উদ্যোগ, জলবায়ু সুরক্ষা দপ্তর, ন্যায় ও শান্তি কমিশন, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী)