মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০২০

অবরুদ্ধ সময়ে সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ যাচনা



১. বিচ্ছিন্নতা, অবরুদ্ধ থাকা বা  অন্তরীণ সময় খুব সহজেই আমাদের ভিতরে ভয়, ক্রোধ, তিক্ততা, অভিযোগ এবং হতাশার মনোভাব প্রবলভাবে প্রতিপালন করতে পারে। শিষ্যদের অন্তরীণ থাকার কী বিশেষত্ব ছিল যা তাদের অভিজ্ঞতাকে পুরোপুরি রূপান্তরিত করেছিল। পবিত্র বাইবেলে আমরা পড়েছি কয়েকজন স্ত্রীলোক এবং যিশুর মা মারীয়ার সাথে শিষ্যরা একত্রে প্রার্থনারত ছিল’ (শিষ্যচরিত ১:১২-১৪)। ঘরবন্দি অবস্থায় আমরাও প্রেরিতশিষ্যদের ও মা মারীয়ার মত প্রার্থনারত থাকতে পারি। এমন আধ্যাত্মিক একাত্মতা অনুশীলন করে নিজে রূপান্তরিত হতে পারি ও  অন্যকে রূপান্তরিত হতে অনুপ্রাণিত করতে পারি। প্রার্থনা আমাদের জন্য একটি অন্যতম আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য যা বিভিন্ন সময় দেখি ও অভিজ্ঞতা করছি। একটি অন্ধকার ও বিরক্তকর অভিজ্ঞতা যা আমাদের কাছে অভিশাপের মত হতে পার। ঐ মুহূর্তে প্রার্থনা আমাদের জীবনে গভীর অভ্যন্তরীণ রূপান্তর আনে, শান্তির সূচনা করে। এমন কী কিছু সময় পরে অপ্রত্যাশিত আনন্দ ও আর্শীবাদের অভিজ্ঞতা করতে পারি। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও মহা ব্যস্ততা থেকে বাধ্য হয়ে দূরে আছি যেখানে আমরা ‘বিশ্বটা অবরুদ্ধ’ বা ‘পৃথিবীটা মনেস্টারি’ ভাবছি। এমনও হতে পারে অবশেষে সৃষ্টিকর্তা বিশ্বের এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে হুমকি স্বরূপ ঘাতক ভাইরাসটি দুনিয়া থেকে নির্মুল করবেন। আমাদের বিশ্ব, আমাদের সমাজ, আমাদের মণ্ডলী হয়ে উঠবে পুনর্নবীকরণ, ব্যাপক রূপান্তরিত যা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না।  

২. বিশ্বব্যাপক করোনাভাইরাস সংক্রমনের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন গীর্জায় খ্রিস্টভক্তদের আগমন দেশের প্রশাসন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও নির্দেশিত এবং অনলাইনে ইউটিউব ও ফেসবুক লাইভ স্ট্রিমিংয়ে উপাসনায় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে এ সময় আমরা সাধু-সাধ্বীর নিকট আধ্যাত্মিক সহয়োগিতা চাইতে পারি। আমাদের প্রত্যেকের নামেই একজন সাধু বা সাধ্বীর নাম সংযুক্ত আছে তাদের নিকট আমরা প্রার্থনা করতে পারি। আমরা ঈশ্বরের সেবক আর্চবিশপ থিওটনিয়াস অমল গাঙ্গুলী, সাধ্বী মাদার তেরেজা এবং সাধু জন পল এর সহযোগিতা যাচনা করতে পারি। এখানে চারজন সাধু-সাধ্বীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের নিকট অসুস্থ ও মহামারী সময়ে খ্রিস্টভক্তগণ নিরাপদ থাকা জন্য সর্বদা প্রার্থনা করে থাকেন। 

৩. সাধু আলোইসিয়াস গনজাগা। তিনি যিশু সংঘের যাজক ছিলেন এবং রোম নগরে স্বেচ্ছায় প্লেগ সংক্রমক রোগীদের সেবাযত্নের কাজ করেছেন। পরে নিজেও প্লেগ সংক্রমণে মৃত্যুবরণ করেন।


৪. ক্ষুদ্রপুষ্প সাধ্বী তেরেজা। তিনি যুবতী বয়সে অসুস্থতা নিয়ে কষ্ট করেছেন। তিনিও আমাদের খুব পরিচিত এবং সহজেই তাঁর সাহায্য চাইতে পারি।

৫. সাধ্বী বার্ণাডেট সৌবিরস। ফ্রান্সের লুর্দ শহরের মা মারীয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা সাধ্বী বার্ণাডেট সৌবিরস। যিনি ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে মহামারী কলেরায় আক্রান্ত ছিলেন এবং সারা জীবন হাঁপানিসহ অন্যান্য রোগে কষ্ট পেয়েছেন। তাঁর নিকট লক্ষ লক্ষ মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য প্রার্থনা করেন এবং লুর্দে তীর্থ করতে যান। 

৬. সাধ্বী করোনা। করোনাভাইরাসের মহামারী সময়ে কেউ কেউ সাধ্বী করোনা’র সাহায্য কামনা করে প্রার্থনা করছেন। তবে ভাইরাস নামের মিলের কারণেই তাঁর কাছে প্রার্থনা করছেন। 

ইতিহাস থেকে জানা যায়- সাধ্বী করোনা দ্বিতীয় শতাব্দীর একজন খ্রিস্টবিশ্বাসী যুবতী ১৬ বছর বয়সে বিশ্বাসের জন্য সিরিয়ায় ধর্মশহীদ হয়েছেন। তাঁর সম্পর্কে মানুষ খুব কম জানে। ১৬৫ খ্রিস্টাব্দ রোমান সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াসের অত্যাচার চলাকালীন তিনি র্ধমশহীদ হন। বিশ্বাসের জন্য তিনি নির্যাতনের শিকার হন এবং ভয়াবহ মৃত্যুবরণ করেন। সাধ্বী করোনাকে গ্রেপ্তার করে মাটিতে বাঁকানো দু’টি তাল গাছের চূড়ায় পা বেঁধে রাখা হয়েছিল। তারপর এ অবস্থায় তাঁকে ছিঁড়ে ফেলা হয়। তাঁর ধর্মশহীদ মৃত্যুবরণের দিন ১৪ মে। তাঁর সাথে সাধু ভিক্টরকেও হত্যা করা হয়। সাধ্বী করোনা নামটি ল্যাটিন শব্দ ‘করোনা’ এর অর্থ ‘মুকুট’। অর্থাৎ যুবতী সাধ্বী করোনা বিশ্বাসে অবিচলতার কারণে ‘অনন্ত জীবনের মুকুট’ অর্জন করেছেন। বিশেষভাবে ভারী ঝড় ও প্রাণি থেকে সংক্রমিত রোগ হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। করোনাভাইরাস মহামারীটি সাধ্বী করোনার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষভাবে উত্তর ইতালি, অস্ট্রিয়া, বাভারিয়া এবং দক্ষিণ জার্মানিতে মহামারী ও ঝড়ের সময়ে ঘুরে দাড়ানোর জন্য সাধ্বী করোনা’র নিকট বিশেষ প্রার্থনা করছে। সেখানে সাধ্বী করোনা’র নামে গীর্জা, চ্যাপেল ও বেশ কয়েকটি তীর্থস্থান রয়েছে।


(ছবিসমূহ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন