রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২০

অবরুদ্ধ সময়ে তিনি জীবন্ত- এটাই আমার আশা ও মনোবল

১. এ বছরের পুনরুত্থান পর্বটি শিষ্যদের অভিজ্ঞতার মতই। করোনাভাইরাসের ‘ধ্বংস ও মৃত্যুর আক্রমণ’ এবং আমাদের মনে অনিশ্চয়তা ও সংশয় বিদ্যমান। যিশুর মৃতদেহ সমাধি স্থানে রেখে কয়েকজন শিষ্য একই অভিজ্ঞতা করেছে। তবে কয়েকজন নারীদলটি  সক্রিয় ছিল,  যিশুর মৃত্যু তাদের হতাশায় পঙ্গু করে ফেলেনি। বরং তারা একটি সাধারণ কাজ অসাধারণভাবে করেছে। তারা যিশুর দেহ লেপনের জন্য সুগন্ধি-মশলা প্রস্তুত করেছে। নিস্তার জাগরণীর ধর্মোপদেশে পোপ ফান্সিস বলেছেন- “তারা তাদের ভালবাসার দুয়ার বন্ধ করেনি; তাদের অন্তরের অন্ধকারে দয়ার শিখা প্রজ্জলিত রেখেছে।” আমাদের ভাবতে হবে, আমরা কি ভয়ে ভালবাসার দূয়ার বন্ধ রেখেছি? 

২. মা প্রার্থনারত সময় কাটিয়েছেন। তিনি আজ আমাদের সকলে ‍‌‍'মা' । পোপ মহোদয় বলেছেন- “যিশু মাটিতে শোয়ানো বীজ যিনি পৃথিবীকে নতুন জীবন দান করবেন এবং মা মারীয়া প্রার্থনা ও ভালবাসা দ্বারা এই আশাটি প্রস্ফুটিত হতে সহায়তা করেছেন।” প্রার্থনা আমাদের জন্য একটি অন্যতম আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য যা বিভিন্ন সময় দেখি ও অভিজ্ঞতা করছি। একটি অন্ধকার ও বিরক্তকর অভিজ্ঞতা যা আমাদের কাছে অভিশাপের মত হতে পার। ঐ মুহূর্তে প্রার্থনা আমাদের জীবনে গভীর অভ্যন্তরীণ রূপান্তর আনে, শান্তির সূচনা করে। এমন কী কিছু সময় পরে অপ্রত্যাশিত আনন্দ ও আর্শীবাদের অভিজ্ঞতা করতে পারি।  

৩. এই দিনেই ‘আশা’ পৃথিবীতে প্রবেশ করে। ব্যক্তি যিশুর সাথে নারীদলটির সাক্ষাৎ ঘটে। পোপ ফান্সিস বলেছেন- ‘ভয় করো না, ভয় পেও না’ -এই আশার বার্তাটি আজ আমাদের কাছেও এসেছে। একই বাক্য ঈশ্বর আমাদের জন্য দিয়েছেন। পোপ মহোদয় আরো বলেছেন- আশা করাটা আমাদের অধিকার। ভোরের আলোর সাথে সাথেই ‘আশা’ পৃথিবীতে প্রবেশ করেছে।

৪. পুনরুত্থানেরই একটি ঐশদান- 'আশা'। সবকিছুর শেষে অশুভকে পরাজিত করে শুভ জয়ী হবে এমন আশাবাদ এটি নয়। বরং এটি ঈশ্বরের কাছ থেকে আগত অনুগ্রহদান ‘আশা’। এটি একটি ঐশদান যা আমরা নিজেরা অর্জন করিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা বলে থাকি আগামী সপ্তাহ বা কয়েকদিনের মধ্যে করোনাভাইরাস তাণ্ডবলীলা সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বিগত সপ্তাহগুলোতে আমরা অভিজ্ঞতা করেছি, সময় অতিবাহিত হয়েছে তথাপি আমাদের এমন আশাবাদ অর্থহীন প্রমাণিত। যিশুর প্রদত্ত আশা ভিন্ন সংবাদ দেয়। তিনি আমাদের অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস দিয়েছেন, ঈশ্বর সমস্ত কাজের সমাপ্তিতে ভালো কিছু সমাধান দিবেন। কারণ ‘কবর’ থেকেও তিনি ‘জীবন’ ফিরিয়ে এনেছেন। এই দুর্যোগের পরে পরিবেশ আরো ভাল হবে, তিনি আমাদের পরিচালনা করবেন।

৫. তিনি হৃদয়ের পাথরও সরিয়ে দিতে পারেন। একটি কবর থেকেই জীবন আবির্ভূত এটাই আমাদের আশা। যিনি এমন এক স্থান থেকে আবির্ভূত হয়েছেন, সেখান থেকে কেউ কখনও আবির্ভূত হয়নি- এটি কবর। যিনি সমাধির প্রবেশদ্বার বন্ধ করার পাথরটি সরিয়ে দিয়েছেন, এই দুর্যোগ সময়ে তিনি আমাদের ভারাক্লান্ত হৃদয়ের পাথরও সরিয়ে দিতে পারেন। তিনি আমাদের ত্যাগ করেননি, তিনি আমাদের সাথে আবার সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি আমাদের বেদনা, যন্ত্রণা এবং মৃত্যুর মধ্যে প্রবেশ করেছেন। তাঁর আলো সমাধির অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, আজ তিনি চান সেই আলো আামদের জীবনের অন্ধকারময় স্থানেও প্রবেশ করুক। 

৬. দুর্গতিতে ‘মনোবল’ পুনরুত্থানের একটি অনুগ্রহদান। আমাদের হৃদয়ে রাখা পাথরটি সরিয়ে দিয়েই আমরা যিশুর মনোবল গ্রহণ করতে পারি। পুনরুত্থিত খ্রিস্ট আমাদের মনের গভীরের ভয়টি অনুভব করতে পারেন। পোপ মহোদয় বলেছেন- খ্রিস্ট আমাদের সাহস দিচ্ছেন, তিনি আমাদের জীবন এবং আমাদের মৃত্যুতেও আমাদের সামনেই চলছেন। তিনি আমাদের আগে গালিলেয়া যাচ্ছেন, সেখানে তাঁর ও শিষ্যদের প্রতিদিনের জীবন, পরিবার ও কাজের স্মৃতি স্মরণ করে দেন। তিনি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কাজ-কর্মে আশা নিয়ে আসতে চান। শিষ্যদের জন্য গালিলেয়া স্মৃতিময় স্থান কারণ এখানেই তাদের প্রথম আহ্বান করেছেন। গালিলেয়া ফিরে আসার অর্থ তিনি আমাদের প্রথম ভালবেসেছেন ও আহ্বান করেছেন। 

৭.  তিনি আমাদের আজ প্রেরণ করছেন। পোপ মহোদয় বলেছেন- তিনি আমাদের শুধু পবিত্র স্থান গালিলেয়া নয় বরং পৃথিবীর সর্বত্র প্রেরণ করছেন ।  আমরা যেখানে বসবাস করি সেখানেই তিনি আমাদের প্রেরণ করছেন। তিনি চান তাঁর প্রতি বিশ্বাসী যারা সকলের নিকট আমরা ‘জীবনের গান’  পৌঁছে দেই। আমরা যারা জীবন বাণী অভিজ্ঞাতা করেছি তারা যদি জীবনের কথা না বলি তবে কে বলবে? খ্রিস্ট জীবন্ত। জয় মৃত্যুঞ্জয়, জয় তোমারই জয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন