১. করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে অনেকে স্বেচ্ছায় নিজের এলাকা ‘লকডাউন’ করেছে। যা সামাজিক মাধ্যম দ্বারা সহজেই প্রকাশিত হচ্ছে। গ্রামের একটি এলাকার দুইদিকে প্রবেশ পথ প্রচলিত প্রথায় বাঁশ বা গাছের ডালা দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। এলাকার সকলের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে ‘লকডাউন’ করে ‘সামাজিক সুরক্ষা’ নিশ্চিত করা হয়েছে। এটা স্বাস্থ্য সুরক্ষার সাথে সাথে সমন্বিত পরিবেশ- মানবিক, প্রাত্যহিক জীবনের পরিবেশ, প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়। কারণ সবকিছুই যেহেতু পরস্পরের সাথে গভীর যোগসূত্র রয়েছে।
২. লকডাউন আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া নয় বরং এটাই সংক্রমণ কমানোর বৈজ্ঞানিক লড়াই। এতে আগত এবং নিজের লোকদের সমন্বিত স্বাস্থ্য সচেতনার পরিবেশ নিশ্চিত হয়। আগতরা সাবান, পানি ও জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে সমাজে বসবাসরত সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। বাজারে যাওয়ার মুহূর্তে একই নিয়ম অনুসরণ করবে। যারা ভিতরে আছে তারাও একই ভাবে সুরক্ষিত থাকবে।
৩. এ দুর্যোগ মুহূর্তে অসুস্থদের দ্রুত ডাক্তারের নিকট নিতে হতে পারে এবং খাদ্য, জল ও ঔষধের জন্য বাইরে যেতে হবে। এছাড়া সরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের যখন তখন সামাজিক সুরক্ষা দায়িত্ব পালনের জন্য যাতায়াত করতে হয়। এই বিষয়সহ অন্যান্য প্রাত্যহিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ ভাবতে হবে। এটা স্থায়ী পদ্ধতি নয় বরং জরুরী অবস্থা বা আপদকালীন ঝুঁকি মোকাবেলা করার বিষয় অগ্রিম ভাবতে হবে। এটি সাধারণত জনসচেতনতামূলক একটি উদ্যোগ।
৪. নিজের এলাকার জনগণ চলমান বিষয় নিয়ে আলাপ করে মিথ্যা গুজব বা আতঙ্ক ছড়ানো থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। প্রয়োজনে এলাকার নেতা-নেত্রীবৃন্দ সরকারি নির্দেশনামূলক তথ্য ঘরে ঘরে পৌচ্ছে দেয়া নিশ্চিত করতে পারে।
৫. এলাকায় সকলকে মাস্ক পড়ে থাকার জন্য সচেতন করা দরকার। প্রতিদিন স্নান করার আগে নিজের ঘরবাড়ি ও চারিপাশের পরিবেশ ব্লিচিং স্প্রে করে পরিষ্কার রাখার অভ্যাস সৃষ্টি করা যায়। নিজের বাড়ির পাশের চলাচলের পথটি সকলের সুরক্ষা চিন্তা করে একইভাবে পরিষ্কার নিশ্চিত করতে পারলে অনেকে উপকৃত হবে। নিজ এলাকার গৃহিনী বা সেলাই মেশিন ব্যবহারে দক্ষ ব্যক্তিরা নিজের উদ্যোগে গরীবদের জন্য মাস্ক বানিয়ে বিতরণ করতে পারে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় এটা একটা বিশেষ দয়ার কাজ হতে পারে।
৬. নিজের এলাকায় হয়তো অনেক লুক্কায়িত গরীব মানুষ আছে। সৃষ্টিকর্তা যাদের যথেষ্ট দিয়েছে তারা অভাবী পরিবারের সাথে সহভাগিতা করতে পারে। অনেকে পরিস্থিতির কারণে অভাবী, তারা প্রকাশ করতে লজ্জা পায় তাদের খুঁজে বের করা একটা দয়ায় কাজ হতে পারে। এসময়ে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং সকলের জন্য ভাবতে পারলেই সমাজিক সুরক্ষা পুরোপুরি হবে।
৭. যারা এখনও সচেতন না তাদের নিরন্তর সচেতনতা দান করা দরকার। সাধু পল বলেছেন- ভাল কাজে ক্লান্তি নেই। যারা সুরক্ষা সামগ্রী কিনতে পারে না তাদের জন্য সরবরাহ করা যেতে পারে। নিজ এলাকায় বৃদ্ধ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, সুবিধাবঞ্চিত ও বিপদাপন্নদের পাশে থাকা ও নিয়মিত খোঁজখবর রাখাও দয়ার কাজ। এটা নিজের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা ভেবেই করতে হবে।
৮. সকলে যেন ঘরে বসে প্রার্থনা করতে পারে সে বিষয়ে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। ইন্টারনেট ব্যবহারে অক্ষম বা ব্যবস্থায় অপারগ এমন পরিবারকে সহযোগিতা করা যায়। তারাও যেন আধ্যাত্মিক একাত্মতায় থাকতে পারে। যাদের ধর্মীয় বই যথেষ্ট নাই বা দৈনিক বাইবেল পাঠ খোঁজতে অপারগ তাদের জন্য ফেইসবুক মেসেঞ্জারে সহভাগিতা করা যেতে পারে।
৯. পোপ ফান্সিস এর সর্বজনীন প্রেরণ পত্র “লাউদাতো সি” প্রকাশের পাঁচ বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। পোপ মহোদয় মে মাসের ১৬ তারিখ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত ‘লাউদাতো সি সপ্তাহ’ ঘোষণা দিয়েছেন । পরিবেশের অনেক ক্ষতি আমরা করে ফেলেছি, এখনও করে যাচ্ছি। আমরা যদি ঘরে থেকেই নিজের ঘর ও প্রাত্যহিক জীবনের পরিবেশ সুরক্ষা করি তবে আমাদের অভিন্ন বসতবাটি এ ধরিত্রির যত্মই করছি।
১০. খাবার সময় অথবা অবসর সময়ে পরিবারে একসাথে পবিবেশ সুরক্ষা বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে পারি। আমরা অবাক হয়ে যাব ছোটরা কত সুন্দর সুন্দর নতুন নতুন প্রস্তাব দিয়ে ফেলছে। শুধু মাত্র বিষয়টি তাদের মননে প্রবেশ করার দায়িত্ব বড়দের। আমরা ঘরে থেকেই পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়সমূহ চিহ্নিত করে নিজেদের প্রতি আরো যত্নবান হয়ে উঠতে পারি। আমাদের পানি অপচয় রোধ, প্লাস্টিক ব্যবহার হ্রাস ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় ফেলা, পরিত্যাক্ত স্থান পরিচ্ছন্ন রাখা, নিজের খাবার তালিকা স্বাস্থ্যসম্মত বিষয় গুরুত্ব প্রদান, শাক-সবজ্জি উৎপাদন, গাছ রোপন, মুরগী, কবুতর, গরু-ছাগল প্রতিপালন, খাল ও ডোবার যত্ন করা, পুরাতন কাপড় দিয়ে বাজার ব্যাগ তৈরি করার মাধ্যমে আমরা পরিবেশের যত্ন নিতে পারি। এসব বিষয়ে আমরা চাইলেই করতে পারি, আমাদের শুধু মন থেকে চাইতে হবে। এভাবেই আমরা পোপ মহোদয়ের সাথে পরিবেশ সুরক্ষা ও আমাদের বসতবাটির যত্নের আহ্বানে সাড়া প্রদান করতে থাকব।
১১. তবুও আমরা যেন বাইরে না যাই, ঘরেই থাকি। লকডাউন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার নির্দেশনা মেনেই যেন সব উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও মহা ব্যস্ততা থেকে বাধ্য হয়ে ‘লকডাউন’ আছি যেখানে আমরা ‘বিশ্বটা অবরুদ্ধ’ বা ‘পৃথিবীটা মনেস্টারি’ ভাবছি। এমনও হতে পারে অবশেষে সৃষ্টিকর্তা বিশ্বের এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে হুমকি স্বরূপ ঘাতক ভাইরাসটি দুনিয়া থেকে নির্মুল করবেন। আমাদের বিশ্ব, আমাদের সমাজ, আমাদের এলাকা হয়ে উঠবে পুনর্নবীকরণ, ব্যাপক রূপান্তরিত যা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না।
(ছবি: ইন্টারনেট সংগৃহীত)
(ছবি: ইন্টারনেট সংগৃহীত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন