শনিবার, ২৮ মার্চ, ২০২০

অবরুদ্ধ সময়ে যত্নবান হওয়াটা মহৎ কাজ


অবরুদ্ধ সময়ে পরিচিত একজন খোঁজখবর নিতে ফোনালাপ করেছে কর্মব্যস্ত জীবন ফেলে রেখে জোরপূর্বক ঘরবন্দী অবস্থা অভিজ্ঞতা সহভাগিতা হয়েছে সুনামসহ সন্তানদের মধ্যে দুইজন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অন্যজন মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা করছে একত্রে সময় ভালই কাটছে, মনে হচ্ছে অলস সময় অতিবাহিত করছে তাই অভিযোগ- অফিস খোলা থাকলে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার ছিল, অযথা সময় নষ্ট হচ্ছে ফিলিপাইনের কার্ডিনাল আন্তনী তাগলে গতবছর দুবার বাংলাদেশ সফর করেছেন কার্ডিনাল মহোদয় বর্তমানে ভটিকান শহরে পোপ মহোদয়ের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব পেয়েছেন কাজ সম্পর্কে তাঁর একটি অনুধ্যানে বলেছেন- নিজ পরিবারে সময় কাটানোও একটি অতি মহৎ কাজ পরিবারের আপনজনদের সাথে, সন্তানদের সাথে, স্বামী বা স্ত্রী সাথে চা-কফির কাপ হাতে নীরবে গরম বাষ্পের সুবাস নেয়াটাও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত নিজেদের যত্ন করা টবে ফুটন্ত ফুলের মনোরম আকষণীয় সৌন্দর্য উপভোগ করাটাও কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিজের পরিশ্রমে গড়া পরিবার, পবিবেশ, প্রকৃতি, বাড়ির আঙ্গিনা ঘুরে দেখা, রক্ষণাবেক্ষণ করাও কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ

মানবজীবন তিনটি মৌলিক পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত যথা সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে, প্রতিবেশীর সঙ্গে এবং পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ভিত্তির কারণে আমরা কাজে সম্পৃক্ত হই, নিজের যত্ন করি, আপনজনের যত্ন নিই এবং ধরিত্রির রক্ষণাবেক্ষণ করি তাই পেশাগত কাজপাগল (ওয়ার্কএহলিক) মানুষ কর্মফলের আনন্দময় মুহূর্তটুকু উপভোগ করতে ভুলে যায় কাজ হল কায়িক মানসিক শ্রমের ফসল অবরুদ্ধ সময়ে কাজের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিক অনুধাবন করতে পারি-

. মজুরি বা বেতনভুক্ত কর্মীরা শ্রমের বিনিময়ে আর্থিক প্রতিদান পায় যা দ্বারা তারা নৈতিক দায়িত্ববোধের কারণে প্রথমত: নিজের, দ্বিতীয়ত: আপনজন-পরিবার-আত্মীয়-স্বজনদের ভরণপোষণ করে এবং তৃতীয়ত: অসহায়-বিপদাপন্ন মানুষদের সহায়তা করে ( তিমথী :) কর্মীরা আর্থিক প্রয়োজনে নিয়োগকর্তার উপর নির্ভরশীল, আবার নিয়োগকর্তা কায়িক মানসিক শ্রমের জন্য কর্মীদের উপর নির্ভরশীল অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি অন্তর থেকে প্রকাশ করে থাকে- প্রতিষ্ঠানে কাজ করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সন্তানদের আজ ভাল পড়াশুনা করাতে পেরেছে আবার পরিসম্পদ যা প্রতিষ্ঠা করেছে সবই প্রতিষ্ঠানের বদৌলতে হয়েছে অর্থাৎ কর্মীর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রদান করেছে  আর্থিক সুবিধা পারিশ্রমিক যা সঠিক ব্যবহার করে কর্মী নিজে পরিতৃপ্ত

. কাজের মাধ্যমে একজন কর্মী সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত গুণ, ক্ষমতা দক্ষতা বিনিয়োজিত করে কাজের মাধ্যমে পিতা ঈশ্বরের সৃষ্টির  যত্নবান হতে আমরা আহুত পিতা ঈশ্বর যিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা তাঁকে আমরা সম্মান করি যখন সৃষ্টির যত্নবানকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করি  এটা আমাদের বিশ্বাসের অঙ্গিকারপূরণ আমরা মানুষকে সৃষ্টিকে সুরক্ষা করতে আহুত ঈশ্বরের সৃষ্টির সাথে সুসম্পর্কের মাধ্যমে বিশ্বাস চর্চা করি সৃষ্টিকর্তা আমাদের আদেশ দিয়েছেন পৃথিবী নামক বাগানটিচাষ করতে তার রক্ষণাবেক্ষণ করতে” (আদি -) সাধু দ্বিতীয় জন পল বলেছেন- সৃষ্ট পৃথিবীতে, প্রকৃতির প্রতি সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাসীদের দায়িত্ব তাদের বিশ্বাসের অপরিহার্য অংশ (লাউদাতো সি ৬৪) তাই আমরা পেশাগত বা ব্যক্তিগত যে কাজই করি, আমরা সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট আমাদের অভিন্ন বসতবাটির যত্ন নিয়ে থাকি

. একজন কর্মী শুধুমাত্র চূড়ান্ত কর্মফলে নয় বরং কাজ সম্পাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে নিজের অন্তরে আনন্দ অনুভব করে থাকে কারণ সৃষ্টিকর্তা তাকে দক্ষতা ক্ষমতা দিয়েছেন কাজ সম্পাদনে কর্মী পরিতৃপ্ত হয়, সমাজবদ্ধ মানুষের মঙ্গল বা কল্যাণ হয় এবং সৃষ্টিকর্তা মহানুভবতা প্রকাশিত হয়

. কাজের মাধ্যমে মঙ্গলবাণী প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি হয় খ্রিস্ট যিশু সমাজগৃহে, প্রকাশ্যে জনসমক্ষে বা জনসাধারণের ভিড়ে বাণী প্রচার করেছেন খ্রিস্ট যিশুর লক্ষ্য ছিল- হারানো মেষদের খোঁজ করা, নতুন জীবন দেয়া জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ শিক্ষা দান করা আবার খ্রিস্ট যিশু মার্থা মারীয়ার পরিবারে, শিষ্য পিতরের শাশুড়ির গৃহে, করগ্রাহকের বাড়িতে, কানা নগরে বিয়ে বাড়িতে বাণী প্রচার করেছে আমরা যখন নিজ পরিবার আপনজন নিয়ে থাকি আমরা কিন্তু খ্রিস্ট যিশুর নীরব উপস্থিতিতে আছি, তার অনুসারী শিষ্য হিসেবেই আছি

. আমাদের শ্রম কাজ সম্পর্কে স্বর্গীয় পিতার অন্তর অনুধাবন করতে বাইবেলের সহায়ক অংশ- আদি পুস্তক -, ইসাইয়া ৬৫, প্রত্যাদেশ ২১-২২, এফেসীয় : ১১-১৩, রোমীয় ;২১, কলসীয় :২৩-২৪ এবং গালাতীয়  :১৯-২৩ সুতরাং কাজের প্রতি কর্মীদের আগ্রহ-উৎসাহ, সততা নিয়ত পরিশ্রম  কর্মস্থান কর্মপরিবেশকে রূপান্তরিত করে পরম পিতার মহাকীর্তি প্রকাশ করতে পারে

. খ্রিস্টবিশ্বাসী হিসেবে খ্রিস্ট যিশু আমাদের প্রত্যেককে তাঁর ভালবাসা, ত্যাগস্বীকার সেবাকাজ অনুকরণ করে স্বর্গীয় পিতার মত দয়ালু হতে আহ্ববান করেন (লুক :৩৬) প্রতিদিনকার জীবনযাপনে বৈচিত্র্যময় কাজে আমরা খ্রিস্টের আহ্ববানে সাড়া দানের সুযোগ পাই, আমাদের কাজসমূহের ভিত্তি প্রকাশ তিনটি ঐশগুণের সমন্বয়, এগুলো হলো- বিশ্বাস, আশা ভালবাসা আমাদের কাজে বিশ্বাস, আশা ভালবাসা প্রকাশকে দয়া, দয়ার কাজ বা দয়াশীলতা বলে থাকি দয়ার কাজসমূহ দুই ভাগে চিন্তা করে থাকি- () দৈহিক দয়ার কাজ : যেসব দয়ার কাজ অন্যের বাহ্যিক প্রয়োজন পূরণে সহায়ক () আধ্যাত্মিক দয়ার কাজ : যেসব দয়ার কাজ অন্যের মন-হৃদয়-আত্মার প্রয়োজন পূরণ করে থাকে অসুস্থ, বৃদ্ধ বিপদাপন্নদের পাশে বসে থাকা, ফোন করে খোঁজ-খবর নেয়া, ভাল পরামর্শ দেয়া-নেয়া, কারো দুঃখ-কষ্টের কথা মনোযোগসহ শোনা সবই আধ্যাত্মিক দয়ার কাজ যা অবরুদ্ধ সময়ে আমরা চাইলেই করতে পারি

অবরুদ্ধ সময় আমাদের ভাবতে সুযোগ দেয়- শুধু পেশাগত কাজে ডুবে কাজপাগল (ওয়ার্কএহলিক) হয়ে থাকতে আমাদের সৃষ্টি করা হয়নি অথচ আমরা কেউ কেউ তা- করে থাকতে পছন্দ করি আমাদের অন্যতম কাজ নিজের প্রতি যত্নবান থাকা, পবিরারের আপনজনদের যত্ন করা, একে অপরকে দেখাশোনা করা, আমার চারিপাশের পরিবেশের রক্ষণাবেক্ষণ করা যত্নবান হওয়টা জীবনের একটি অংশ এটা সৃষ্টিকর্তার নিকট থেকে প্রাপ্ত দায়িত্ব

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন