মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০

প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষার্থে ৬টি করণীয় বিষয়


অভিন্ন বসতবাটির পরিবেশ বিপর্যয় প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পোপ মহোদয় ৬টি করণীয় উপায় উল্লেখ করেছেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হল-
১. সৃষ্টির মঙ্গলবার্তা সকলের অন্তরে লালন-পালন:  সুসংবাদ হল ঈশ্বর যিনি শূন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তিনি পৃথিবীতেও হস্তক্ষেপ করতে পারেন এবং সব ধরনের অমঙ্গলকে পরাজিত করে বিশ্বজগৎ নবায়ন করতে পারেন। ঈশ্বরের সৃষ্টির প্রথম বিবরণীতে (আদিপুস্তক ২য় অধ্যায়) ও মানব পরিত্রাণ পরিকল্পনায় তিনি মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করেছে; সুতরাং পরিবেশ ও প্রতিবেশীর  যত্ন নেওয়া, সুরক্ষা করা, তত্ত্বাবধান করা, ফলশালী (কর্ষণ) করা ও  রক্ষণাবেক্ষণ করাটা ঈশ্বর কর্তৃক আমাদের প্রাপ্ত দায়িত্ব; এই অসাধারণ দায়বদ্ধতা অন্তরে লালন করতে বলা হয়েছে;

২. সমন্বিত পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্ব প্রদান: এখন জীবজগৎ ও মানবসমাজের টিকে থাকা নিয়ে অনুধ্যন ও পর্যালোচনা অপরিহার্য; এখানে নতুন ধারার ন্যায্যতা বলতে পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে মানুষ, পরিবার, কাজ ও নগরায়ন বিষয়সমূহ আলাদা নয় বরং সবকিছুই পরস্পরের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্রে আবদ্ধ সুতরাং পবিবেশগত বিপর্যয় সমাধানকল্পে গৃহীত সমন্বিত কৌশলের মধ্যে থাকতে হবে দারিদ্র্য মোকাবিলায় মানবিক ও সামাজিক দিকসমূহ;

৩. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষার্থে সংলাপ: পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করতে হলে স্বচ্ছ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ প্রয়োজন যেখানে অবাধে মতামত বিনিময় করা যায়; মণ্ডলী কখনও বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের সমাধান দিতে বা রাজনীতির বিকল্প হিসেবে কোন প্রস্তাব দিতে পারে না তবে একটি সত্যনিষ্ঠ ও উম্মুক্ত মতামতের আশ্রয় নেওয়াকে উৎসাহিত করে যাতে বিশেষ কোন স্বার্থবাদী মহল বা মতবাদ সর্বসাধারণের মঙ্গল বিষয়ক পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে না পারে;

৪. পরিবেশ সংরক্ষণ সম্বদ্ধে শিক্ষা প্রদান: স্কুল, পরিবার, যোগাযোগ মাধ্যমে এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ মানুষের সহজ সরল অঙ্গভঙ্গি, ভদ্র আচরণ, সহভাগিতামূলক জীবন ও শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সহায়ক হতে পারে; অন্যদিকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য মনোভাব কাটিয়ে উঠতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষমতা যাদের আছে তাদেরও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে;

৫. পরিবেশ সংরক্ষণে আন্তরিক মনপরিবর্তনের প্রয়োজন: আবর্জনা এখানে-সেখানে ছুড়ে ফেলে অপরিচ্ছন্ন-অস্বাস্থ্যকর নর্দমা তৈরি করেছি; গাছ রোপনে অবহেলা করে পরিবেশে ভারসাম্য নষ্ট করেছি; বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ করে ফেলেছি; প্রতিনিয়ত প্রচুর পানি অপচয় করছি, এভাবে প্রকৃতি ও প্রতিবেশীদের প্রতি অনেক ক্ষতি  ইতোমধ্যে করেছি; এসব স্মরণ করে অনুতপ্ত ও মন-পরিবর্তন করে প্রকৃতি ও  প্রতিবেশীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে; আসিসির সাধু ফ্রান্সিসকে পরিবেশ সুরক্ষার একজন উৎসাহী ও উদ্বেগী আদর্শ হিসেবে গ্রহন করে তাঁর মত কৃতজ্ঞতা, উদারতা, সৃজনশীলতা, উদ্যোগ ও উৎসাহ আমাদের অন্তরে লালন করতে পরামর্শ দিয়েছেন; এবং

৬. বিশ্বজনীন আধ্যাত্মিক একাত্মতা প্রকাশ ও সাড়াদান: পত্রটির শেষে দুটি প্রার্থনা আমাদের উদ্বুদ্ধ করে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস কীভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে আমাদের অনুপ্রাণিত করে। পরিশেষে তিনি বলেছেন- সবকিছুই (ঈশ্বরের সাথে, প্রতিবেশী মানুষের সাথে ও সকল সৃষ্টজীবের সাথে) পারস্পরিক বন্ধনসূত্রে আবদ্ধ;  সৃষ্টিকর্তা আমাদের শেখাতে পারেন- কিভাবে সেবাযত্ন নিতে হয়, কিভাবে পরিশ্রম করতে হয় এবং এগিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন নতুন পন্থা খুঁজে পেতে তিনি প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা দান করেন। আসুন, আমরা পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে দায়বদ্ধতা স্বীকার করি; দায়বদ্ধতার ভিত্তি হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার ওপর সৃদৃঢ় বিশ্বাস ও কৃতজ্ঞতা।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন