শুক্রবার, ১২ জুন, ২০২০

বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস- ১২ জুন ২০২০ খ্রিস্টাব্দ


১. করোনাভাইরাস মহামারী সংকটকালে আজ ১২ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস-২০২০ খ্রিস্টাব্দ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ২০০২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২ জুনকে বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এ বছর দিবসটির মূল বিষয়বস্তু গ্রহণ করা হয়েছে- ‘কোভিড-১৯: শ্রম থেকে শিশুদের রক্ষা করা এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি দরকার’। এই দিনে শিশুশ্রমের কারণে সৃষ্ট সংকটসমূহের প্রভাব সমন্ধে সচেতন হওয়া ও সমাধানের জন্য বিশ্বের সকল স্তরের মানুষকে আহ্বান করা হচ্ছে।

২. দৈনিক সংবাদ পত্রের তথ্য অনুযায়ী- দেশে গত এক মাসে মোট ১৬৩ জন শিশু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বা আক্রান্তের লক্ষণ পাওয়া গেছে। গত ৯ এপ্রিল থেকে ১০ জুন পর্যন্ত মোট ১২৭ জন শিশুর করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এ সময়ের মধ্যে আক্রান্ত ১২৭ শিশুর মধ্যে ৭ জন মারা গেছে। এ ছাড়া আরো ৩১ জন করোনার লক্ষণ নিয়ে মারা গেছে। বিভিন্ন সংবাদ পত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম এ তথ্য জানিয়েছে। শিশু অধিকার ফোরাম দেশের ২৭২টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক (দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ জুন ২০২০ খ্রিস্টাব্দ)।

৩. পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ শিশুশ্রম নির্মূলের পদক্ষেপ এখন হুমকির মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘের শিশু শ্রমিকদের জড়িপ অনুযায়ী- ইতিমধ্যে বিশ্বে ১৫২ মিলিয়ন শিশু শ্রমিক রয়েছে যার মধ্যে ৭২ মিলিয়ন শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। এই শিশুরা কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে যা আরও বেশি কঠিন এবং দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে।কভিড-১৯ স্বাস্থ্য মহামারী এবং ফলস্বরূপ অর্থনৈতিক ও শ্রমবাজারের সংকট মানুষের জীবন ও জীবিকাতে বিশাল প্রভাব ফেলছে। দুর্ভাগ্যক্রমে শিশুরাই এসবের প্রথম ভুক্তভোগী। এই সঙ্কট লক্ষ লক্ষ দুর্বল শিশুদের শিশুশ্রমের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

৪. এই মহামারী পরিস্থিতি দেশেও শ্রমজীব শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুস সহিদ মাহমুদ বলেছেন- অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যেখানে ৯৪ শতাংশ শিশু কাজ করে, কিছুনির্দিষ্ট কাজকে নিকৃষ্ট ধরনের কাজ ঘোষণা করে সেসব কাজে শিশুদের নিষিদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার করোনা মোকাবিলায় দেশের শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেও দেশে কর্মে নিয়োজিত শিশুদের আর্থিক সুরক্ষার জন্য কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেনি (দৈনিক ইত্তেফাক)। বর্তমান অবস্থায় দেশে স্বল্প মজুরি দিয়ে শিশুদের করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এ বিষয়ে সরকার ও সাধারণ জনগণের সচেতন হওয়া দরকার। সেই সঙ্গে স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুরা যেন শ্রমে নিয়োজিত না হয়, সেই ব্যাপারেও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থাসহ সাধারন মানুষের সৃজনশীল পদক্ষেপ অত্যন্ত প্রয়োজন।

৫. এ উপলক্ষে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন- শিশু শ্রম এমন একটি অভিশাপ যা অনেক অনেক ছেলে-মেয়েদের সমন্বিত বিকাশ বিপন্ন করছে। শিশু শ্রম হল দাসত্ব ও বন্দিজীবনের একটি অন্যরূপ যা তাদের শারীরিক এবং মানসিক যন্ত্রণার কারণ। শিশুশ্রমের এই অভিশাপের জন্য আমরা সবাই দায়ী। বিভিন্ন সংস্থাগুলিকে  তিনি শিশুদের সুরক্ষার জন্য সর্বাত্মক  প্রচেষ্টা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। শিশুরা দুর্ভাগ্যক্রমে যে বিকৃত জীবনাবস্থায় জড়িয়ে আছে সেখান থেকে মুক্তি দিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবধানগুলি পূরণ নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছেন।

৬. ইতোমধ্যে অনেক ব্যক্তি, সংগঠন, স্কুল, ধর্মীয় ও সামাজিক সেবাপ্রতিষ্ঠান সুবিধাবঞ্চিতশিশুদের জন্য নীরবে কাজ করছে। প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করছেন। যার যার অভিজ্ঞতাসমূহ সহভাগিতা করে অভিনব সৃজনশীল পদক্ষেপ নিতে পারলে শিশু বিষয়ক সেবাকাজ আরো গতি পাবে। আমাদের পরিবারে শিশুদের কাজের জন্য নিয়োগ না দিয়ে বরং একটি শিশুর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে পারি, প্রতিষ্ঠিত স্কুল কলেজে সুবিধাবঞ্চিতশিশুদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে পারি, যারা ছোট ছোট সংগঠনের মাধ্যমে শিশু সেবাকাজ করছে তাদের আর্থিক ও নৈতিক সহযোগিতা দিতে পারি। সত্যিকার অর্থেই ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক গন্ডি ত্যাগ করে সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত ভাবে শিশু অধিকার সুরক্ষার জন্য একসাথে কাজ করা অধিকতর কল্যাণকর হবে। অন্যথায় মাশুল দিতে হবে আগে না হোক অদূর ভবিষ্যতে। পথশিশু, সুবিধাবঞ্চিতশিশু, অরক্ষিতশিশু ও আমাদের শিশুর সুরক্ষায় আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ মহান কিছু অর্জন সম্ভব হবে। আসুন, ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিকভাবে ও সামাজিকভাবে শিশুশ্রম প্রতিরোধ করি। সুবিধাবঞ্চিতশিশু ও অরক্ষিতশিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সেবাকাজে এগিয়ে আসি।


বুধবার, ১০ জুন, ২০২০

আমাদের দয়াশীলতার কিছু বিবেচ্য বিষয়

১. কভিড-১৯ দুর্গতির সময়ে বিপদাপন্নদের অর্থ বা খাদ্য অনুদান প্রদান ছাড়াও কিছু সূক্ষ্ম সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যাসমূহ আমাদের গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াটা কিছু কিছু মানুষ বা সমাজ একটা কলঙ্ক বা লজ্জাজনক ব্যধি হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তি বা পরিবারকে সামাজিক অস্বস্তিদায়ক পরিস্থির স্বীকার হতে হয় অথবা তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। এটি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না, কিন্তু এটি উদ্বেগের বিষয়। অসুস্থ ব্যক্তিকে ঘরের বাইরে ফেলে রাখা, হাসপাতালে বারান্দায় রেখে চলে যাওয়া, পরিত্যক্ত বস্তু হিসেবে তাদের বিবেচনা কর, মৃতব্যক্তিকে সমাধিস্থ করা থেকে বিরত থাকা; এমনসব আচরণ করা হয়  কারণ তাদের মধ্যে কভিড -১৯ আছে অথবা থাকার সন্দেহ রয়েছে এবং তাদের দ্বারা অন্যরা সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন আচরণ করাটা অমানবিক বিষয়। 

২. আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারও সামাজিক বৈষম্যে স্বীকার হতে পারে, অসুস্থরা ঘৃণার পাত্র হতে পারে এবং তাদের প্রতি সামাজিক অস্বস্তিদায়ক আচরণ করা হতে পারে এমন বিবেচনা করে এসব ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের সঠিক তথ্য প্রচারে অভিনব উপায় সন্ধান করতে হবে।

৩. আজকের দিনগুলিতে সমাধিদান কাজটি আতঙ্কের পরিবেশে সমাধান করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পরে কবর দেওয়া হচ্ছে যেখানে  প্রিয়জনের নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ নেই। যারা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাদের সাথে সমবেদনা জানানো আমাদের খুবই দরকার।

৪. সম্মতি ছাড়াই কেউ কেউ করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের নাম সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করছি। এখানে তারা সমাজিক অস্বস্তিদায়ক পরিস্তির স্বীকার হতে পারে এ বিষয়টিও গুরুত্বসহ বিবেচনা করাতে হবে। কভিড-১৯ রোগীদের সাথে কাজ করা স্বাস্থ্য কর্মীরাও বৈষম্যের মুখোমুখি হচ্ছেন- ভাড়া বাড়িতে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা, ভাড়া বাড়ি ছেড়ে যেতে বলা ইত্যাদি।

৫. হতাশাগ্রস্থ সকলের প্রতি আমাদের হৃদয়ে ভালবাসা রয়েছে এবং সর্বদা তা জাগ্রত রাখা দরকার। মহামারী সময়ে আমাদের নিজেদের ভয় বুঝতে পারি। প্রত্যেক ব্যক্তিই অসীম মূল্যবান ও মর্যাদা রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা সর্বদা আমাদের সাথে আছেন তিনি নিবিড়ভাবে আমাদের জীবনে অন্তর্ভুক্ত কারণ তাকে লকআউট করা যায় না, সৃষ্টিকর্তা লকডাউন থাকতে পারেন না।





ছবি ইন্টানেট থেকে সংগৃহীত



মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০

প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষার্থে ৬টি করণীয় বিষয়


অভিন্ন বসতবাটির পরিবেশ বিপর্যয় প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পোপ মহোদয় ৬টি করণীয় উপায় উল্লেখ করেছেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হল-
১. সৃষ্টির মঙ্গলবার্তা সকলের অন্তরে লালন-পালন:  সুসংবাদ হল ঈশ্বর যিনি শূন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তিনি পৃথিবীতেও হস্তক্ষেপ করতে পারেন এবং সব ধরনের অমঙ্গলকে পরাজিত করে বিশ্বজগৎ নবায়ন করতে পারেন। ঈশ্বরের সৃষ্টির প্রথম বিবরণীতে (আদিপুস্তক ২য় অধ্যায়) ও মানব পরিত্রাণ পরিকল্পনায় তিনি মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করেছে; সুতরাং পরিবেশ ও প্রতিবেশীর  যত্ন নেওয়া, সুরক্ষা করা, তত্ত্বাবধান করা, ফলশালী (কর্ষণ) করা ও  রক্ষণাবেক্ষণ করাটা ঈশ্বর কর্তৃক আমাদের প্রাপ্ত দায়িত্ব; এই অসাধারণ দায়বদ্ধতা অন্তরে লালন করতে বলা হয়েছে;

২. সমন্বিত পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্ব প্রদান: এখন জীবজগৎ ও মানবসমাজের টিকে থাকা নিয়ে অনুধ্যন ও পর্যালোচনা অপরিহার্য; এখানে নতুন ধারার ন্যায্যতা বলতে পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে মানুষ, পরিবার, কাজ ও নগরায়ন বিষয়সমূহ আলাদা নয় বরং সবকিছুই পরস্পরের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্রে আবদ্ধ সুতরাং পবিবেশগত বিপর্যয় সমাধানকল্পে গৃহীত সমন্বিত কৌশলের মধ্যে থাকতে হবে দারিদ্র্য মোকাবিলায় মানবিক ও সামাজিক দিকসমূহ;

৩. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষার্থে সংলাপ: পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করতে হলে স্বচ্ছ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ প্রয়োজন যেখানে অবাধে মতামত বিনিময় করা যায়; মণ্ডলী কখনও বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের সমাধান দিতে বা রাজনীতির বিকল্প হিসেবে কোন প্রস্তাব দিতে পারে না তবে একটি সত্যনিষ্ঠ ও উম্মুক্ত মতামতের আশ্রয় নেওয়াকে উৎসাহিত করে যাতে বিশেষ কোন স্বার্থবাদী মহল বা মতবাদ সর্বসাধারণের মঙ্গল বিষয়ক পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে না পারে;

৪. পরিবেশ সংরক্ষণ সম্বদ্ধে শিক্ষা প্রদান: স্কুল, পরিবার, যোগাযোগ মাধ্যমে এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ মানুষের সহজ সরল অঙ্গভঙ্গি, ভদ্র আচরণ, সহভাগিতামূলক জীবন ও শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সহায়ক হতে পারে; অন্যদিকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য মনোভাব কাটিয়ে উঠতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষমতা যাদের আছে তাদেরও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে;

৫. পরিবেশ সংরক্ষণে আন্তরিক মনপরিবর্তনের প্রয়োজন: আবর্জনা এখানে-সেখানে ছুড়ে ফেলে অপরিচ্ছন্ন-অস্বাস্থ্যকর নর্দমা তৈরি করেছি; গাছ রোপনে অবহেলা করে পরিবেশে ভারসাম্য নষ্ট করেছি; বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ করে ফেলেছি; প্রতিনিয়ত প্রচুর পানি অপচয় করছি, এভাবে প্রকৃতি ও প্রতিবেশীদের প্রতি অনেক ক্ষতি  ইতোমধ্যে করেছি; এসব স্মরণ করে অনুতপ্ত ও মন-পরিবর্তন করে প্রকৃতি ও  প্রতিবেশীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে; আসিসির সাধু ফ্রান্সিসকে পরিবেশ সুরক্ষার একজন উৎসাহী ও উদ্বেগী আদর্শ হিসেবে গ্রহন করে তাঁর মত কৃতজ্ঞতা, উদারতা, সৃজনশীলতা, উদ্যোগ ও উৎসাহ আমাদের অন্তরে লালন করতে পরামর্শ দিয়েছেন; এবং

৬. বিশ্বজনীন আধ্যাত্মিক একাত্মতা প্রকাশ ও সাড়াদান: পত্রটির শেষে দুটি প্রার্থনা আমাদের উদ্বুদ্ধ করে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস কীভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে আমাদের অনুপ্রাণিত করে। পরিশেষে তিনি বলেছেন- সবকিছুই (ঈশ্বরের সাথে, প্রতিবেশী মানুষের সাথে ও সকল সৃষ্টজীবের সাথে) পারস্পরিক বন্ধনসূত্রে আবদ্ধ;  সৃষ্টিকর্তা আমাদের শেখাতে পারেন- কিভাবে সেবাযত্ন নিতে হয়, কিভাবে পরিশ্রম করতে হয় এবং এগিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন নতুন পন্থা খুঁজে পেতে তিনি প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা দান করেন। আসুন, আমরা পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে দায়বদ্ধতা স্বীকার করি; দায়বদ্ধতার ভিত্তি হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার ওপর সৃদৃঢ় বিশ্বাস ও কৃতজ্ঞতা।



সোমবার, ৮ জুন, ২০২০

প্রকৃতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ৬টি প্রধান কারণ


পোপ মহোদয় অভিন্ন বসতবাটির ক্রমবর্ধমান পরিবেশ বিপর্যয়ের মূল ৬টি কারণ উল্লেখ করেছেন। নিম্নে সংক্ষেপে তুলে ধরা হল-
১. নীতিবোধহীন প্রযুক্তি:  প্রযুক্তির বিস্ময়কর কলাকৌশল আমাদের যদিও টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে তবে সুগভীর নীতেবোধ, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক শক্তি ছাড়া এসব জ্ঞান ও অর্থনৈতিক সম্পদসমূহ মানুষ ও মানবতার উপর আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছে;

২. সর্বাধিক মুনাফা অর্জনে প্রযুক্তিবিদ্যাকেন্দ্রিক মানসিকতা:  শুধু সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের প্রত্যাশায় সব ধরনের প্রযুক্তির অগ্রগতির মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে; শুধু জন্মহার হ্রাস করার চিন্তায় ব্যস্ত কিন্তু অতি উৎপাদন ও অতি ভোগ মানসিকতা কিন্তু সমন্বিত মানব উন্নয়ন ও সামাজিক অন্তর্ভূক্তিকরণে নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে পারছে না;

৩. আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ অনুশীলন: শুধুই নিজের ভোগবাসনা চরিতার্থ করার আত্মকেন্দ্রিক সংস্কৃতি চর্চা করছি; একজন গরীব মানুষ, একটি মানব-ভ্রুন, একজন প্রতিবন্ধী মানুষকে বাস্তবতার অংশ হিসেবে স্বীকার করতে কষ্ট হয়, প্রকৃতির আর্তনাদ শুনতে আমরা অপারগ; পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব ছেড়ে নিজেকে ঈশ্বরের স্থানে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে;

৪. বেসামাল ভোগবাসনা ও অতি ব্যবহারিক মনোভাব: প্রকৃতি ও সমাজকে এমনটি দুর্বল মানুষকে নিজের স্বার্থে কেবল বস্তু সমাগ্রীর হিসেবে ব্যবহার করা, বলপূর্বক শ্রমের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া, ঋণ পরিশোধ না-কার পর্যন্ত ক্রীতদাস হিসেবে খাটানো, শিশুদের যৌন-সম্ভোগে ব্যবহার, বিপদাপন্ন প্রবীনদের পরিত্যাগ করা এবং সুবিধার জন্য ‘ব্যবহার-কর এবং ছঁড়ে-ফেলে-দাও’ মানসিকতা লালন করা হচ্ছে;

৫. প্রযুক্তি ক্রমান্বয়ে মানবিক কর্মের স্থান দখল: সকল বেকার মানুষ কাজের সুযোগ পাবে এমন মনোভাব হ্রাস পাচ্ছে বরং মানুষকে বাদ দিয়ে শুধু প্রযুক্তি ব্যবহার করার মানসিকতা বৃদ্ধি, তা মানবতার জন্য ক্ষতিকর; এবং

৬. নতুন জৈব প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব: 'বংশগতি পরিবর্তন ও সংকর প্রজনন' কিছু অথনৈতিক উন্নয়র হলেও এর ব্যবহারে উর্বর জমি সীমিত সংখ্যক মালিকের হাতে চলে গেছে ফলে স্বল্পপরিমাণ উৎপাদকদের সংখ্যা অতিমাত্রায় কমে গেছে, অনেকে জমি হারিয়েছে ফলে খন্ডকালীন মজুরে পরিণত হয়েছে, গ্রামীণ মজুর দারিদ্র্যপীড়িত শহরে বস্তিবাসী হয়েছে, পরিবেশ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে, উৎপাদন বৈচিত্র্যের বিলুপ্তি হয়েছে যা জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।



রবিবার, ৭ জুন, ২০২০

প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক ৬টি চ্যালেঞ্জ



পোপ ফ্রান্সিস 'লাউদাতো সি' পত্রে আমাদের অভিন্ন বসতবাটির ৬টি সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ বা ঝুঁকি তুলে ধরেছেন । এখানে অতি সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হল-
১. দূষণ, বর্জ্য ও ছুঁড়ে-ফেলা সংস্কৃতি প্রতিপালন- বাড়িতে রান্না-বান্নার অবশিষ্টাংশ, প্লাস্টিক-পলিথিন, অব্যবহৃত জিনিসপত্র, অফিসে অব্যবহৃত ডিজিটাল যন্ত্রাংশ, হোটেল ও দোকানের পঁচা খাবার, প্যাকিং এ ব্যবহৃত উপাদানসমূহ, নিত্যদিনের অব্যবহৃত জিনিস, ব্যক্তিগভাবে চলার পথে মুখের থুতু ও নাকের ময়লা,  বোতল, প্লাস্টিক, পলিথিন,  ছুঁড়ে ফেলার মানসিকতার ফলে আমাদের আবাসস্থল এই জগৎটি দিনদিনই বিশাল এক নোংরা নর্দমা, ময়লা-আবর্জনা ও সর্বনাশা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হচ্ছে; যা অতিমাত্রায় বিষাক্ত ও তেজস্ক্রিয়ায় রূপ নিচ্ছে, যা মাবনদেহের জন্য হুমকিস্বরূপ;  

২. জলবায়ু পরিবর্তন- এটি একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ, জলবায়ু অস্বাভাবিক ও ভয়ঙ্কর উষ্ণতাবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করছি, এ বিষয়ে যদিও বেশিরভাগ মানুষের ঔদাসীনতা রয়েছে; 

৩. অনিরাপদ ও দুষ্প্রাপ্য পানি- বিশ্বের অনেক স্থানে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির অভাবে দূষিতপানি পান করে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে অমানবিক কষ্ট পাচ্ছে এমনকি মারা যাচ্ছে; 

৪. জীব বৈচিত্র্যের বিলুপ্তি- প্রতিবছর হাজার হাজার উদ্ভিদ ও প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, একে অপরের উপরে নির্ভরশীলতার ধারণাটি আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি; 

৫. মানবজীবনের মানপতন এবং সমাজের ভাঙ্গন- অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানব-পরিবারকে একত্রিত করার চিন্তাভাবনা; বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলে সমাজ থেকে কিছু মানুষ বহিষ্কার হচ্ছে, সেবার অসম বন্টন ও ব্যবহার, সহিংসতা, মাদক ব্যবসা, যুবাদের মধ্যে মাদকাসক্তি, পরিচয় বিভ্রাট, সামাজিক বন্ধনের বিচ্ছেদ, আন্তর্ব্যক্তিক সম্পর্কে অসন্তোষ, বিবাহ বিচ্ছেদ, অভিবাসী সমস্যা, মানবপাচার এবং ক্ষতিকর একাকিত্ববোধ এসব মানবিক বিষয়সমূহ সকলকে ভাবিয়ে তুলছে; এবং 

৬. বিশ্বব্যাপী অসমতা- আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু কিছু ভারসাম্যহীনতার প্রভাব বিপদাপন্ন জনগষ্ঠেীর ওপর সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে- খনি-খননে পারদ দূষণ, সালফার ডাই-অক্সাইড দূষণ, গ্যাসের বর্জ্যে তৈরি আবর্জনার, বাণিজ্যে ন্যায়ভ্রষ্টতা, রাজনৈতিক দুর্বল সাড়াদান, রাজনীতি প্রযুক্তি ও অর্থে  উপর জিম্মি, ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু অস্ত্র গবেষণার ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট, কিছু কিছু ধনী দেশ কর্তৃক অনেক দরিদ্র দেশের দুর্গতি- বেকাত্ব, পরি‌ত্যক্ত শহর, বিধ্বস্থ প্রাকৃতিক সম্পদ, বিলুপ্ত বন ও ধূসর বনানী, কৃষির দৈন্যদশা, ক্ষতবিক্ষত পাহাড়-পর্বত, দূষিত নদনদী যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে; এসব পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে।



শনিবার, ৬ জুন, ২০২০

অভিন্ন বসতবাটি রক্ষার একটি আবেদন


১. পোপ মহোদয় 'লাউডাটো সি' (মে ২৪, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ) সর্বজনীন পত্রটি প্রকাশের পঞ্চম বার্ষিকীতে চলতি বছরে পরিবেশ সুরক্ষার  আহ্বান জানিয়েছেন। পোপ ফ্রান্সিস তাঁর দ্বিতীয় প্রেরিতিক পত্রে সমন্বিত পবিবেশ অনুধ্যানে অতি দরিদ্র ও বিপদাপন্ন মানুষের ন্যায়বিচারের অধিকারের সাথে আমাদের অভিন্ন বসতবাটি রক্ষা করার আবেদন করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন- বিজ্ঞান হল সর্বোত্তম মাধ্যম; এটি ব্যবহার করে আমরা জগতের আর্তনাদ শুনতে পারি; অন্যদিকে সংলাপ ও শিক্ষা -এ দু’টি হল মৌলিক চালিকা শক্তি যার মাধ্যমে বর্তমানে আমাদের জড়িয়ে থাকা আত্নঘাতী পরিবেশগত ধ্বংসস্তূপ থেকে সুরক্ষা পেতে পারি। পোপ মহোদয় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রেখেছেন- আমাদের পরে যারা আসছে অথাৎ আমাদের সামনে বড় হওয়া শিশুদের জন্য আমরা কী ধরণের বিশ্বজগত রেখে যেতে চাই? উত্তরে তিনি বলেছেন- বাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনধারায় অমূল পরিবর্তন আনতে হবে। 

২. পোপ ফ্রান্সিস এর মতে- প্রথমতঃ আসিসির সাধু ফ্রান্সিস এর মতো অন্তরে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকর্ম এবং দরিদ্র ও সমাজচ্যুত জনগণের প্রতি বিশেষ দরদবোধ উপলব্ধি করতে হবে (১১); দ্বিতীয়তঃ পরিবেশের প্রতি যত্নবান ও রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্বটি একটি আহ্বান হিসেবে গ্রহণ করতে হবে- "যারা আনন্দ করে তাদের সঙ্গে আনন্দ কর; যারা কাঁদে, তাদের সাথে কাঁদ" (রোমীয় ১২:১৫)। পোপ মহোদয় জগতের আর্তনাদের দুটি পরস্পরসংযুক্ত বিষয় প্রকাশ করেছেন। একটি সৃষ্টির আর্তনাদ এবং অপরটি দরিদ্রদের আর্তনাদ। 

৩. সৃষ্টির আর্তনাদ: অকপট দৃষ্টিতে বাস্তবতার দিকে তাকালেই বুঝা যায়- রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের অভাবে আমাদের সকলের এ অভিন্ন বাসগৃহটি কতটা দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। পরিবর্তনের দ্রুতগতির দরুণ পরিস্থিতি যে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে তার লক্ষণ অত্যন্ত সুস্পষ্ট (৬১)। কেননা আমাদের আচরণ মাঝে মাঝে আত্নঘাতী বলেই মনে হয় (৫৫)। প্রলয়কাল সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণীকে এখন আর ব্যঙ্গবিদ্রূপ বা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমরা হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে কেবল ধ্বংসস্তূপ, সর্বনাশ ও ময়লা আবর্জনাই রেখে যাচ্ছি (১৬১)। প্রতি বছরই কত হাজার হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী  যে চিরদিনের জন্য বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তার হিসাব আমরা জানতেও পারবো না, কারণ তাদের অস্তিত্ব ভবিষ্যৎ প্রজন্ম  সেগুলো কখনো দেখতেও পাবে না, কেননা তাদের  অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের তো এমনটি করার কোন অধিকার নেই (৩৩)।সৃষ্টি অবিরত কাঁদছে, আমরাও প্রতিনিয়ত কষ্টভোগ করছি।

৪. দরিদ্রদের আর্তনাদ: মানবিক পরিবেশ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ- এই দু'য়ের অবনতি একইসাথেই হয়; সুতরাং মানবিক ও সমাজিক অবনতির কারণ বিবেচনা না ক'রে আমরা যথাযথভাবে পরিবেশ অবনতির মোকাবিলা করতে পারি না (৪৮)। কিছু কিছু ধনী দেশগুলোর বিপুল পরিমাণ ভোগের কারণে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলো দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে (৫১)। আমাদের বেলাও তা সত্যি, আমাদের অতিভোগের কারণে অন্য কেউ-না-কেউ বঞ্চিত হচ্ছে। সন্তানদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আর্তনাদ আমরা হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে কেবল ধ্বংসস্তূপ, সর্বনাশ ও ময়লা আবর্জনাই রেখে যাচ্ছি (১৬১)।আমার প্রতিবেশী অবিরত কাঁদছে, আমার পাশেই কাঁদছে।

৫. আমরা একটু চিন্তা করি ও অন্তরে উপলব্ধি করি- ক. সৃষ্টি ও দরিদ্রদের আর্তনাদ আমাকে কি বলছে? খ. এই মুর্হূতে পরিবেশ বিপর্যয়ের মাঝে আমার বর্তমান অবস্থান কোথায়? আমি কি পরিবেশ ধ্বংস করছি অথবা রক্ষণাবেক্ষণ করছি? গ. পরবর্তী প্রজন্মের নিকট অর্থাৎ আমাদের যেসব সন্তান এখন বেড়ে উঠছে তাদের জন্য আমি কেমন বিশ্ব রেখে যেতে চাই? (১৬০)

৬. কিন্তু একান্তভাবে হতাশাগ্রস্ত না হয়ে আামাদেরকে বরং বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এরূপ শোচনীয় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণেরও উপায় আছে। আামাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমরা যে কোন সময় কিছু-না-কিছু করতে পারি।আমাদের আশা হল ঈশ্বর যিনি শূণ্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তিনি পৃথিবীতেও হস্তক্ষেপ করতে পারেন এবং সব ধরনের অমঙ্গলকে পরাস্ত করতে পারেন। অন্যায্যতা অজেয় নয় (৭৪)। তিনি আমার, আপনার সহযোগিতায় তা করতে চান। আজ থেকেই আমার ও আপনার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদক্ষেপ মহৎ কিছু অর্জন সম্ভব।




শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০

বিশ্ব প‌রি‌বেশ দিবস: প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষা


১. অবরুদ্ধ সময়ে পরিবারে সদস্যরা একত্রে অথবা কর্মস্থলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মিটিং বা আলোচনার পূর্বে কিছু সময় সৃষ্টিকর্তার নিকট সৃষ্টির অসংখ্য দানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ও যত্নবান হওয়ার জন্য প্রার্থনা করি। অন্তরে গভীরভাবে উপলব্ধি করি- আবর্জনা এখানে-সেখানে ছুড়ে ফেলে অপরিচ্ছন্ন-অস্বাস্থ্যকর নর্দমা তৈরি করেছি; গাছ কেটেছি কিন্তু রোপনে অবহেলা করে পরিবেশে ভারসাম্য নষ্ট করেছি; স্বার্থপর ও অতিভোগের কারণে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ করে ফেলেছি; প্রতিনিয়ত প্রচুর পানি অপচয় করছি, খাল-নদীর জল বিষাক্ত করে ফেলেছি; এভাবে প্রকৃতি ও প্রতিবেশীদের প্রতি অনেক ক্ষতি  ইতোমধ্যে করেছি। এসব স্মরণ করে অনুতপ্ত হই ও মন-পরিবর্তন করে প্রকৃতি ও প্রতিবেশীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলি।

২. আমাদের পরিবার হল সৃষ্টি ও প্রকৃতির একটি অংশ । পরিবার যত্ন নিয়ে থাকে সৃষ্টি ও প্রকৃতির এবং পরিবার বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপকরণসমূহ প্রকৃতি সরবরাহ করে থাকে। তাই দায়িত্বশীল পরিবার গঠন, সুন্দর জীবনযাপন, স্বামী-স্ত্রীর অঙ্গিকার রক্ষা, বিপদাপন্ন আপনজনদের সেবাযত্ন করে পারিবারিক পরিবেশ সুন্দর করে তুলতে পারি। পরিবারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদক্ষেপ- প্রয়োজন মাফিক কেনাকাটা, পরিমিত রান্না ও অপচয়রোধ, পরিমিত ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস, জিনিসপত্র পুনঃব্যবহার করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহযোগিতা করতে পারি।বাড়িতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিভিশন, এসি, পানির কল, বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহারের পর বন্ধ রাখাতে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। রান্নাঘরের অবশিষ্টাংশ, পাতা-লতা ও আবর্জনাগুলি মিশ্রিত করে উত্তম সার তৈরি করা যায় এবং এসব গাছের  বৃদ্ধিতে আরও ভাল সার হিসেবে সহায়তা করে।

৩. শুধু পরিবারের মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করলে স্বার্থপর হয়ে উঠব; বরং বনের জীব-জন্তু, আকাশের পাখি, বাতাসে উড়ে বেড়ানো মশা-মাছি, ভূমির পোকা-মাকড় ও সরিসৃপ, নদী ও জলাভূমির মাছ, সমুদ্রের সকল জীবের কল্যাণের বিষয়ও ভাবি। সৃষ্টিকর্তা এদেরও সৃষ্টি করেছেন, প্রকৃতিতে এদের একটি করে ভূমিকা দেওয়া আছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য এদেরও দরকার আছে। এদের একটি যদি আমরা নিঃশেষ করে ফেলি তবে প্রকৃতি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে ফলে মানুষের কষ্ট বাড়বে।বাড়িতে তাই খালি জায়গায় গাছ রোপণ ও নির্ধারিত গাছ  রক্ষণাবেক্ষণ জন্য ছেলেমেয়েদের  দায়িত্ব বন্টন করে দিতে পারি। শিশুদের চিত্রাঙ্কণ, সঙ্গীত ও নৃত্য চর্চায় প্রকৃতি ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়সমূহে উৎসাহিত করা যায়। গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা শহরে বাসাবাড়িতে টবে বারান্দায় বা ছাদে অথবা জানালার পাশে শাক-সবজি-ফুল বাগান তৈরি করি ও রক্ষণাবেক্ষণ করি। এতে মনে প্রশান্তি আসবে, স্বাস্থ্যকর খাবারের যোগান হবে এবং বাজার খরচ সঞ্চয় করতে পারব।

৪. কর্মস্থলে প্রয়োজন ছাড়া কাগজে প্রিন্ট না করা, প্রয়োজনে  কাগজের উভয় পৃষ্ঠায় প্রিন্ট করা এবং সুযোগ থাকলে কাগজ পুনঃব্যবহার করতে পারি; কম্পিউটার, প্রিন্টার ও অন্যান্য অফিস সরঞ্জামসমূহ ব্যবহারের পরে বন্ধ রাখব; শারীরিক সমস্যা ব্যতিত দ্বিতীয়, তৃতীয় তলায় এবং সকালে লিপ্ট ব্যবহারে বিরত থাকা; এবং দলীয়ভাবে গাড়ী ব্যবহার করার মাধ্যমে কার্বন ব্যবহার হ্রাস করতে পারি। একটি মানবিক পরিবেশ রক্ষার জন্য কর্মস্থলে নারীদের প্রতি আচার-আচরণে শিষ্টাচার অনুসরণ,  সহকর্মীদের প্রতি পারস্পরিক যত্নশীল থাকা, সৌজন্যসূচক শব্দ ব্যবহার, দলীয়করণ মনোভাব ও অযাচিত তোষামোদপ্রিয়  স্বভাব সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। কর্মস্থলের খালি জায়গায় অথবা টবে বারান্দা বা ছাদে অথবা জানালার পাশে শাক-সবজি-ফুল বাগান তৈরি করি ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি।

৫. আফ্রিকার শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানুষ পানীয় জলে চরম সংকটে আছে, ভারতের কোন কোন প্রদেশে অনেক দামে পানি কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে, পাহাড়ী অঞ্চল রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের বিশুদ্ধ পানির অভাবে ঝর্ণার পানি পান করে ছোট ছোট শিশুরা এখনও মারাত্নক রোগব্যধিতে অসুস্থ হয়ে কষ্ট করছে এবং অনেকে মৃত্যুবরণও করছে। তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা  স্নানে কম পানি ব্যবহার করতে পারি, হাতমুখ ধোয়ার সময় কলের পানি নষ্ট না করি, যতটুকু পান করতে চাই ততটুকু পানি গ্লাসে ঢেলে পান করতে পারি। আমাদের এমন ক্ষুদ্র ক্ষ্রদ্র অভ্যাস পানি অপচয় অনেক হ্রাস করবে।

৬. মাটি একটি জীবন্ত উপাদান। এটি পাউডারযুক্ত এবং মারা উচিত নয়। জীবন মাটি থেকে আসে এবং তাই মাটি বাঁচিয়ে রাখা উচিত। স্বতন্ত্রভাবে মোড়ানো ক্যান্ডি প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকে এবং প্রচুর আবর্জনা তৈরি করে যা মাটিকে নষ্ট করে ফেলে। আমরা এমুহূর্তে প্লাস্টিক ব্যবহার বাদ দিতে পারছি না তাই সঠিকভাবে ব্যবহার করার দিকে গুরুত্ব দিতে পারি। আবর্জনা হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পলিথিন ব্যাগ একেবারেই বাদ দিতে হবে কারণ এর ক্ষতির ধরন বহুমাত্রিক এবং বাড়ছে- মাটি নষ্ট করে জমিতে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট করছে, শহরে নর্দমা বের হওয়ার পথ বন্ধ করে ব্যাপক ক্ষতি করছে এবং আগুনে দিলে গ্যাস হয়ে বায়ুদূষণ করে মানবদেহের সংঘাতিক ক্ষতি করছে। তাই পাটের তৈরি চটের ব্যাগ অথবা ভারী ও শক্ত কাপড় পুনঃব্যহার করে ব্যাগ তৈরি করে ব্যবহার  করতে হবে।

৭. করোনাভাইরাস মহামারী শিখিয়েছে আমাদের আরও বেশি যত্নবান ও রক্ষণাবেক্ষণ মনোভাব প্রয়োজন। নিজের কল্যাণের কথা ভেবেই প্রকৃতি, পরিবেশ এবং প্রতিবেশী সুরক্ষা সুসংবাদটি আপনজন, ও বন্ধুবান্ধবদের  জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র একটি আহ্বান। ইতোমধ্যে অনেকে নীরবে কাজ করে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছি। পোপ মহোদয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষার্থে ‘লাউদাতো সি বা তোমার প্রশংসা হোক সপ্তাহে' ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিকভাবে এবং কর্মস্থলভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ মহান কিছু অর্জন সম্ভব হবে।