মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

যিশু খ্রিস্টের মতোই পালাতে বাধ্য : কিছু উপলব্ধি ও কিছু সুপারিশ


ক. পোপ ফ্রান্সিস এর বাণী'র আলোকে কিছু উপলব্ধি

পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস গৃহহারা অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষদের যারা সুরক্ষা, উন্নয়ন ও সংগঠিত করছেন তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন এবং আগামী রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রিস্টাব্দে ‘১০৬তম বিশ্ব অভিবাসী ও শরণার্থী দিবস’ উদযাপনের জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান রেখেছেন। এ দিবসের মূল প্রতিবাদ্য বিষয় হিসেবে নিয়েছেন- অভিবাসী ভাইবোনেরা "যিশু খ্রিস্টের মতোই পালাতে বাধ্য" (“Like Jesus Christ, Forced to flee”)। শিশু যিশু পিতামাতার সাথে মিশরে যাওয়ার সময় শরণার্থী হিসেবে করুন পরিণতির অভিজ্ঞতা করেছেন। যা ভয়, অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় (মথি ২:১৩-২৩) । বর্তমান সময়ে লক্ষ লক্ষ অভিবাসী পরিবার একই দুঃখময় বাস্তবতা অতিক্রম করছে। যা আমরা অবিরত টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছি। তারা ক্ষুধা, যুদ্ধ ও ভয়াবহ বিপদ থেকে পালিয়ে পরিবারের সুরক্ষা এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনের সন্ধান করছে। রাজা হেরোদের নিকট থেকে যিশুই জীবন বাঁচাতে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। ক্ষুধার্ত, তৃর্ঞ্চাত, বস্ত্রহীন, অসুস্থ, অপরিচিত এবং বন্দীদের মধ্যে খ্রিস্টের প্রতিচ্ছবি রয়েছে এবং তারা আমাদের কাছে সাহায্য চায় (মথি ২৫:৩১-৪৬)। সেই মুখগুলিকে চিনতে পারলে তখনই মাত্র তাদের দেখতে, ভালবাসতে এবং সেবা করতে সক্ষম হতে পারি। পোপ মহোদয় বলেছেন- যদিও আমাদের দৃষ্টিতে তাদের চিনতে পারা খুব কঠিন হয়ে পড়ে- তাদের বস্ত্র ছিন্ন, পা নোংরা, চেহারা মলিন, দেহ অবসন্ন, জিহ্বা আমাদের ভাষায় কথা বলতে পারেনা। 

পোপ ফ্রান্সিস ২০১৮ সালের অভিবাসী এবং শরনার্থীদের পালকীয় সেবা কাজে চারটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন- তাদের  স্বাগত জানানো, সুরক্ষা দেয়া, সংবর্ধিত করা ও সংযুক্ত করা । ২০২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি আরও ছয়টি বিষয় যুক্ত করেছেন যা বাস্তব কাজের সাথে সমন্বিত এবং কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত- যেমন: (১) বুঝার জন্য তাদের জানতে  হবে; (২) সেবার জন্য তাদের কাছে যেতে হবে; (৩) পুনর্মিলনের জন্য তাদের কথা শোনতে হবে; (৪) বেড়ে ওঠার জন্য তাদের সাথে সহভাগিতা করতে হবে; (৫) সংবর্ধিত করার জন্য তাদের সংযুক্ত করতে হবে এবং (৬) গঠনদানে জন্য তাদের সহযোগিতা করতে হবে । এ বিষয়সমূহ অনুধ্যান করে আভিবাসী, উদ্বাস্তু, বাস্তুচ্যুত বা শরণার্থী ভাইবোনদের চিনতে, জানতে ও দয়ার কাজ করতে সক্ষম হতে পারি।

১.  বুঝার জন্য তাদের জানতে  হবে 

জ্ঞান হলো আগামী দিনে অন্যকে জানার প্রয়োজনীয় একটি ধাপ। এম্মাউস পথে যিশু নিজেই শিষ্যদের কাছে এসেছেন, একত্রে কথোপকথন করেছেন, তাদের সাথে সাথে পথ চলেছেন কিন্তু তাদের চোখ তাকে চিনতে পারেনি (লুক ২৪:১৫-১৬)। অভিবাসী এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সম্পর্কে কথা বলার সময় প্রায়ই তাদের সংখ্যা জেনে থেমে যাই কিন্তু এটা শুধু সংখ্যার বিষয় নয় বরং এটি প্রকৃতভাবেই মানুষের বিষয়। আমরা যদি বাস্তুচ্যুত গৃহহীন মানুষের মুখোমুখি হই তাহলে আমরা তাদের গল্পগুলি জানতে পারবো এবং তাদের আরোও বেশী বুঝতে সক্ষম হবো। 

২. সেবার জন্য তাদের কাছে যেতে হবে

পবিত্র বাইবেলে পাঠ করে থাকি- কিন্তু একজন সামারীয় পথিক যেতে যেতে একজন পথিককে দেখতে পেল, তাকে দেখে তার করুণা হলো এবং সে তার ক্ষতগুলি বেঁধে দিল ও ক্ষত স্থানে তেল ও দ্রাক্ষারস মাখিয়ে দিল। সে তাকে তার বাহনে চড়িয়ে একটি সেবাকেন্দ্রে নিয়ে গেল এবং তাকে সেবাযত্ন করতে লাগল (লুক ১০:২৫-৩৭)। ভয় ও কুসংস্কার অভিবাসীদের থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে রাখে এবং প্রায় সময়ই প্রতিবেশী হয়ে তাদের সেবা করতে ও ভালবাসতে বাঁধা প্রদান করে। অন্যের কাছাকাছি আসার অর্থ হলো অন্যের জন্য ঝুঁকি নেওয়া যা সম্প্রতি মাসগুলিতে ডাক্তার নার্সরা আমাদের শিখিয়েছেন। তাদের কাছে যাওয়া এবং সেবা করার প্রস্তুতি নিছক কর্তব্যবোধের বাইরে। যীশু আমাদের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ দিয়েছেন যখন তিনি তাঁর শিষ্যদের হাত ধুয়ে দিলেন- তিনি তার জামাটা খুলে ফেললেন, হাটু গেড়ে বসলেন এবং নিজ হাতে তাদের ময়লা পা পরিস্কার করলেন (যোহন ১৩:১-১৭)। 

৩. পুনর্মিলনের জন্য তাদের কথা শোনতে হবে

মানুষের কান দিয়ে যিশু খ্রিস্ট মানব আর্তনাদের কথা শুনেছেন- ঈশ্বর পৃথিবীকে এতই ভালবাসলেন যে তিনি তার একমাত্র পুত্রকে দান করলেন যেন এই পৃথিবী তার মধ্য দিয়ে রক্ষা পায় (যোহন ৩:১৬-১৭)। একটি ভালবাসা যা মিলন ও রক্ষা করে তা শোনা’র মধ্য দিয়েই শুরু হয়। বর্তমান পৃথিবীতে অভিবাসীদের সম্পর্কে বহুবিধ আলোচনা হচ্ছে কিন্তু তাদের কথা শোনার আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে। তবুও আমরা নম্রভাবে এবং মনোযোগ সহকারে তাদের গল্প শুনে সত্যিকার অর্থে মিলিত হতে পারি। পুনর্মিলনের জন্য পৃথিবীতে যারা দূর্বল, যারা বাস্তুচ্যুত এবং দুর্দশাগ্রস্থ সেই সকল মানুষের কথা আমাদের শুনতে হবে। গল্প-শোনা অভ্যাস আমাদেরকে প্রতিবেশীদের, বঞ্চিতদের এবং ঈশ্বরের সাথে মিলনের সুযোগ করে দেয়। 

 ৪. বেড়ে ওঠার জন্য তাদের সহভাগিতা করতে হবে

 আদি খ্রিস্টমণ্ডলীতে সহভাগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বা দৃষ্টান্ত। তখন বিশ্বাসী সমাজে সবাই ছিলেন একমন একপ্রান, তারা কেউই কোন জিনিসকে তাদের নিজেদের বলে দাবী করতেন না কিন্তু সবকিছুই তাদের নিজেদের সম্পত্তি ছিল (শিষ্যচরিত ৪:৩২)। ঈশ্বর এই পৃথিবীর সম্পদকে কখনই কিছু মানুষের সুবিধার জন্য দিয়ে দেননি। এই সবই হলো ঈশ্বরের সম্পদ। একে অপরের বেড়ে উঠার জন্য সহভাগিতা করা আমাদের শিখতে হবে এবং কেউই যেন পিছনে পড়ে না থাকে। মহামারী আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে আমরা সবাই একই নৌকার মধ্যে আছি। আমাদের অনুধাবন করতে হবে যে, আমরা সবাই একই উদ্বিগ্ন, একই ভয়ের মধ্যে আছি, আমরা কেউই এককভাবে বাঁচতে পারবো না। সত্যিকারভাবে বেড়ে ওঠার জন্য আমাদের একসঙ্গে বেড়ে উঠতে হবে, আমাদের যা আছে তা সহভাগিতা করতে হবে, সেই বালকের মত যে তার পাচঁটি রুটি দুটি মাছ যিশুকে দিয়েছিল এবং প্রমানিত হয়েছিল যে পাচঁ হাজার লোকের জন্য তা যথেষ্ট ছিল (যোহন ৬:১-১৫)। 

৫. সংবর্ধিত করার জন্য তাদের সংযুক্ত করতে হবে

অভিবাসীদের অগ্রগতির প্রক্রিয়ায় তাদের জড়িত করতে হবে। যিশু যেভাবে সামারীয় নারীর প্রতি করেছিলেন (যোহন ৪:১-৩০)- যিশু তার কছে গেলেন, তার কথা শুনলেন, তার হৃদয়ের কথা বললেন, সত্যের পথে পরিচালিত হতে এবং সুসংবাদ প্রচারের জন্য তাকে অগ্রদূত করলেন- "এসো তোমরা, দেখে যাও একজনকে : জীবনে আমি যা করেছি, তিনি তা সবই আমাকে ব’লে দিয়েছেন! তাহলে তিনি কি সেই খ্রিস্ট নন?" যদি আমরা তাদের সত্যিই সংবর্ধিত করতে চাই তাহলে তাদের সংযুক্ত করা উচিত, অবশ্যই তাদের সাথে আমাদের যুক্ত হতে হবে এবং তাদের মুক্তির জন্য তাদেরকেই অগ্রগামী করে তুলতে হবে। এই মহামারি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, একে অপরের পাশাপাশি থাকাটা কতটা প্রয়োজন এবং সেটিই হলো প্রত্যেকের অবদান। উৎসাহ প্রদান করতে হবে যেখানে প্রত্যেকেই স্বীকৃত হবে এবং তারা বুঝবে যে আতিথেয়তা, ভ্রাতৃত্ব এবং সৌহার্দ সম্প্রীতির নতুন আঙ্গিকে তাদের আহ্বান করা হয়েছে।

৬. গঠনদানে জন্য তাদের সহযোগিতা করতে হবে

প্রেরিতশিষ্য পৌল করিন্থীয়দের কাছে বলেছেন- আমি যিশু খ্রিস্টের নামে তোমাদের কাছে একান্ত  আবেদন জানাই, ভাইয়েরা তোমরা ঐক্যমত থাক, তোমাদের মধ্যে যেন কোন মতবিরোধ না থাকে বরং তোমরা একই মনোভাব পোষণ করো এবং একই বিচার বিবেচনার বন্ধনে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাক (১ করিন্থীয় ১:১০)। ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য খ্রিস্টভক্তদের একই দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে, এ কারণে আমাদের হিংসা-বিদ্বেষ, বিভাজন, প্রলোভন ভুলে অন্যকে সহযোগিতার শিক্ষা গ্রহন করা প্রয়োজন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি নবায়ন করার প্রয়োজন রয়েছে- "এটি আত্মকেন্দ্রিক হওয়ার সময় নয়, আমরা যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হচ্ছি তা ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে ওঠে একে অপরের সাথে সহভাগিতা করতে হবে" (Urbi et Orbi Message, 12 April 2020)। আমাদের একই আবাস ভূমির জন্য ঈশ্বরের প্রকৃত পরিকল্পনাকে আরও বেশী করে কার্যকর করতে হবে কাউকে বঞ্চিত করে নয় বরং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বিশ্ব সংহতি এবং স্থানীয় প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। 

খ. অভিবাসী ও শরণার্থীদের সেবাকাজের কিছু সুপারিশ

বর্তমানে অভিবাসন অবৈধ ও অপরিকল্পিত হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ সীমাহীন। মানুষের মৌলিক চাহিদা সেখানে বিপন্ন এবং শিশু ও নারীরা চরমভাবে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। মানবিকতার বিচারে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করে তাদের যত্ন নেয়া পৃথিবীর সকল মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কারণ এ অভিবাসীদের দুর্যোগ এবং দুর্ভোগের পিছনে রয়েছে মানুষের স্বার্থপরতা, বিবেকহীন আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ড। আমাদের প্রতিটি ধর্মপল্লীর অধীনে অনেক অভিবাসী ভাইবোন আছে যারা প্রতিদিন আমাদের জীবন বাঁচাতে ও জীবন সাজাতে নানাভাবে ভূমিকা রাখছে- যেমন: গৃহ পরিচারিকা, ড্রাইভার, দারোয়ান, দিন-মজুর, বাড়ি-ঘর ও কৃষিজমি রক্ষণাবেক্ষণকারী, সেলুন বা পার্লারে কর্মরত, রিকশাচালক আরও অনেকভাবে সহায়তা করছে। আমাদের জীবনে তাদের অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানাই ও তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে সাধ্যমতো চেষ্টা করি বিপদ-আপদে সাধ্যমতো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে অঙ্গীকার করি। আমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পালকীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাদের দুর্গতি কিছুটা হ্রাস করতে পারি- 

১. অন্তরে অনুভব করা জন্য বাণী ধ্যান করা

পোপ ফ্রান্সিস-এর বাণী নিজেরা পাঠ ও অনুধ্যান করে তাঁর মতো হৃদয় নিয়ে অভিবাসী ভাইবোনদের প্রতি আরও শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাপূর্ণ মানবীয় আচরণ এবং ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করতে পারি। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক অর্থাৎ আমাদের দেশ থেকে যারা অন্যদেশে কাজ, পড়াশুনা বা জীবনযাপনের জন্য অবস্থার করছে তাদের সাথে আধ্যাত্নিকভাবে একাত্ম হই।

২. দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য জ্ঞান অর্জন করা

পোপ মহোদয়ের বাণীর আলোকে শিক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ অভিবাসী ও বাস্তুচ্যুত জনগণের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজনে পরিবর্তনের চেষ্টা করতে পারি। অভিবাসী ভাই-বোনদের অবস্থা জানা, বোঝা ও অনুধাবনের জন্য আলোচনা, সংলাপ ও ছোটো বৈঠক আয়োজন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে সাপ্তাহিক প্রতিবেশি’র বিশেষ সংখ্যা : বিশ্ব অভিবাসী ও শরণার্থী দিবস (২০-২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ) সংখ্যাটি থেকে সাহায্য নিতে পারি। 

৩. সেবাযত্নের জন্য প্রার্থনা ও বাস্তব কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে  

বরিবারের খ্রিস্টযাগে (২৭ সেপ্টেম্বর) পুরোহিতগণ অনুধ্যান ও উপদেশে পোপ মহোদয়ের বাণী এবং মথি রচিত মঙ্গলসমাচারের (২:১৩-২৩) আলোকে সহভাগিতা করতে পারেন। খ্রিস্টযাগের সময়, কনভেন্টের প্রার্থনায়, প্রতিষ্ঠানে অফিসের কার্যক্রম শুরুর আগে অভিবাসী ভাইবোনদের জন্য বিশেষ প্রার্থনা করতে পারি এবং পোপ ফ্রান্সিস এর বাণী পাঠ ও ধ্যান করতে পারি। যারা অভিবাসী হয়ে অন্যত্র যাচ্ছে তাদের বিশ্বাস, সাক্রামেন্ত,  বিবাহিত, আর্থিক ও সামাজিক জীবনের কিছু মৌলিক দিক নির্দেশনা খ্রিস্টযাগের উপদেশ, সেমিনার ও বিভিন্ন সভাতে আলোকপাত করা যেতে পারে। অভিবাসী প্রেরিত ও আগত উভয় স্থানেই পালকীয় যত্ন দরকার। 

৪. সেবাকাজ বিস্তারের জন্য নতুন এলাকা যেতে হবে

আমাদের দেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট শহরের আশেপাশে এবং কোনাবাড়ী, ঘোড়াশাল, পলাশ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, পাবনা, হবিগঞ্জ এলাকায় খ্রিস্টভক্তগণ কাজের তাগিদে বসবাস শুরু করছে। সেবাকাজের জন্য তাদের কাছে যেতে হবে।ন্যায় ও শান্তি কমিশন ইতিমধ্যে এসব এলাকায় কিছু কিছু কার্যক্রম আরম্ভ করেছে।নিকটতম ধর্মপল্লীসমূহ এসব এলাকায় পালকীয় কাজের জন্য সৃজনশীল পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে।

৫. অগ্রগতির জন্য কর্মকাণ্ডে তাদের সংযুক্ত করতে হবে 

স্থানীয় ও অভিবাসী ছেলেমেয়েদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি না করে একত্রে পড়াশোনা, খেলাধুলা ও একত্রে বেড়ে উঠার পরিবেশ তৈরি করতে পারি। স্থানীয় সমাজের উন্নয়নে অভিবাসী ভাইবোনদের অবদান অনুধাবন করা ও স্বীকৃতি দেয়া দরকার। তাদেরকে স্থানীয় সমাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভিন্ন কাঠামোতে সাধ্যমতো অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে হবে যাতে তারা আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। ধর্মপল্লীর পালকীয় কাজে অভিবাসীদের সম্পৃক্ত করতে ও তাদের প্রয়োজনে সাড়াদান করতে পারি। ক্রেডিট ইউনিয়নে অভিবাসী ভাইবোনদের অংশগ্রহণ ও আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে পারি।

৬. তালিথা কুম নেটওয়ার্কিং (Talitha Kum Networking) 

মানবপাচারের বিরুদ্ধে ও অভিবাসীদের সেবা প্রদানের জন্য তালিথা কুম নেটওয়ার্কিং একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। পোপ ফ্রান্সিস সরাসরি তাদের সেবাকাজে অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকেন। কাথলিক মণ্ডলীর বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ মিলিতভাবে কাজ করে থাকে এবং বিভিন্ন সংগঠনসমূহকে সম্পৃক্ত করেন।যা ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বর্তমানে ৭০টি দেশে সেবা প্রদান করছে। সদস্যগণ মার্ক লিখিত মঙ্গলসমাচােরের (৫:৪১) অনুপ্রেরণা অন্তরে নিয়ে সেবাকাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশেও মানবপাচারের বিরুদ্ধে ও অভিবাসীদের মাঝে এ সংগঠনের সেবাকাজ বিস্তার করতে পারি। ইতিমধ্যে ন্যায় ও শান্তি কমিশনের সাথে তালিথা কুম নেটওয়ার্কিং এর যোগযোগ রয়েছে। পোপ ফ্রান্সিস এ বছর শুরুতে তাদের কাজের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে আর্থিক অনুদান সংগ্রহের ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেছেন।

 ৭. অভিবাসীদের করণীয় কিছু  দিকনির্দেশনা

অভিবাসী ভাইবোনদের পক্ষ থেকে কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দরকার- যেমন: (ক) নতুনভাবে যে সমাজে বসবাস করছে শুরুতেই স্থানীয় সমাজনেতা অথবা পাল-পুুরোহিতের সাথে যোগাযোগ করা, এতে করে সাক্রামেন্তিয় বিষয়সমূহ নিয়ে যেন সুন্দর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়; (খ) খ্রিস্টিয় জীবনযাপনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত হওয়া, সচেতনতামূলক সেমিনারে অংশগ্রহণ করা; (গ) বাড়িতে রেখে আসা আপনজনদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা;  (ঘ) কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয়ে সচেতন হওয়া, অর্থ অপচয় থেকে বিরত থাকা, আপৎকালীন তহবিল গঠন করা এবং প্রতারকদের নিকট থেকে দূরে থাকা; (ঙ) ক্রেডিট ইউনিয়নে হিসাব খোলা ও শুরু থেকে নিজে সঞ্চয় ও কিস্তি জমা দেওয়া, নিজের আপনজন ব্যতিত অর্থ লেনদেন থেকে বিরত থাকা; (চ) শ্রমিক বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ ব্যবসায়ে জড়িতরা সরকারি বিধি-নিষেধ ও প্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী একটি পছন্দসই পেশায় স্থায়ী হওয়া; এবং (ছ) ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসী ভাইবোনদের সাথে সুন্দর সংলাপ ও সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলতে পারে।স্থায়ী বা অস্থায়ী বসতির ক্ষেত্রে নিজের বিবেক-বিবেচনা ব্যবহার করে এমনসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ নিজের জীবনযাপন সুখময় করতে পারে। 

আমাদের বিশ্বাস, আশা  দয়ার কাজের মাধ্যমে একই পিতার সন্তান হিসেবে সকলে পরস্পর ভাই-বোন হিসেবে জীবনযাপন করতে পারব ও একত্রে মিলে সমাজে আরও সক্রিয় হতে উঠতে পারবো। এতে যিশু খ্রিস্টের মতোই যারা পালাতে বাধ্য হয়েছে তাদের দুর্গতি কিছুটা কমাতে পারবো।


তথ্যসুত্র: অর্পা কুজুর- বাংলা অনুবাদ (MESSAGE OF HIS HOLINESS POPE FRANCIS FOR THE 106TH WORLD DAY OF MIGRANTS AND REFUGEES 2020)|




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন