মঙ্গলবার, ২৫ মে, ২০২১

লাউদাতো সি অ্যাকশন প্লাটফর্ম


'লাউদাতো সি' সর্বজনীন পত্রটির ৭টি লক্ষ্য

১. 'লাউদাতো সি সপ্তাহ-২০২১' (মে ১৬-২৫, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ) এর সমাপ্তি দিবসে মে ২৫, ২০২১ খ্রিস্টাব্দে ভাটিকানের 'মানব উন্নয়ন’ নামক পুণ্য দপ্তরের প্রধান কার্ডিনাল পিটার টার্কসন সমন্বিত পরিবেশ সংরক্ষণে আগামী ৭ বছর সময়কে 'লাউদাতো সি অ্যাকশন প্লাটফর্ম' (Laudato Si Action Platform-LSAP) হিসেবে  ঘোষণা করেছেন। কার্ডিনাল মহোদয় বলেছেন- 'লাউদাতো সি' সর্বজনীন পত্রটি প্রকাশিত হওয়া থেকে আজ ছয় বছর অবধি জগতের ও দীনদরিদ্রদের আর্তনাদ দিন দিন আমাদের কাছে আরও হৃদয় বিদারক হয়ে উঠেছে। আমাদের বিজ্ঞানী এবং তরুনদের বার্তা ক্রমবর্ধমানভাবে উদ্বেগজনক- 'আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছি।'

২. 'লাউদাতো সি অ্যাকশন প্লাটফর্ম' বহুমাত্রিক সৃজনশীল উদ্যোগ নিয়ে সমন্বিত পরিবেশ সংরক্ষণের দিকে সাত বছরের যাত্রা। কার্ডিনাল বলেছেন- এই সাতটি বছর হবে সক্রিয় কর্মসূচিভিত্তিক একটি যাত্রা, তবে এখন আগের চেয়ে আরো বিস্তর কাজ করার সময়; সুনির্দিষ্ট বহুমাত্রিক সৃজনশীল কর্মসূচি গ্রহণের সময় এখনই। কার্ডিনাল মহোদয় 'লাউদাতো সি' সর্বজনীন পত্রটির সাতটি লক্ষ্য ব্যাখ্যা করেছেন-

(ক) জগতের আর্তনাদে আমাদের সাড়াদান অর্থাৎ পৃথিবী নামক বাগানটি চাষ করা, যত্ন নেওয়া, তত্ত্বাবধান করা, সুরক্ষা করা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা (আদি ২:১৫); 

(খ) দীনদরিদ্রদের কান্নায় আমাদের প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ আমরা সকলে মিলে একটি মাত্র মানবপরিবার, অভিন্ন বসতবাটিতে সকলের সমান অধিকার রয়েছে তা অনুধাবন করা;

(গ) পরিবেশগত অর্থনীতি অর্থাৎ আরও ন্যায়-সঙ্গত, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই অর্থনীতি হতে হবে যা কাউকে পিছনে ফেলে রাখে না; 

(ঘ) সরল জীবনযাত্রা গ্রহণ অর্থাৎ সহজ সরল জীবনযাপনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ জীবন গড়ার প্রত্যয় নিয়ে জগতের বেদনাদায়ক বিষয়সমূহে সচেতন হওয়া ও নিরাময়ের উদ্যোগ নেওয়া; 

(ঙ) পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা অর্থাৎ পরিবেশগত সচেতনতা এবং কর্মকাণ্ড তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে পরিবেশ সংরক্ষণ ও চেতনায়নমূলক শিক্ষা পাঠ্যক্রম প্রস্তুত করা;

(চ) পরিবেশগত আধ্যাত্মিকতা অনুশীলনে গভীরভাবে অনুধাবন করা যে মানবজীবন তিনটি সম্পর্কযুক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত যথা-  ঈশ্বরের সঙ্গে, আমাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে এবং পৃথিবীর সঙ্গে; সুতরাং সৃষ্টি-কেন্দ্রিক উপাসনা উদ্যাপনকে উৎসাহিত করা এবং পরিবেশগত ধর্মশিক্ষা, প্রার্থনা, নির্জনধ্যান ও মানব গঠন কার্যক্রম আয়োজন করা এবং 

(ছ) সমদায়িত্ববোধ প্রেরণায় অংশগ্রহণমূলক বহুমাত্রিক কর্মসূচি গ্রহণ করা। পত্রটির মৌলিক অনুপ্রেরণায় আমাদের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।  

৩. এ উপলক্ষে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস এক বার্তায় জোর দিয়ে বলেছেন- আসুন, একসাথে কাজ করি, কেবলমাত্র আমরা এইভাবেই আমাদের ভবিষ্যতে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ভ্রাতৃত্বপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ ও টেকসই ধরিত্রী গড়তে সক্ষম হবো, এটাই আমাদের আশা। পোপ মহোদয় বার্তায় অভিন্ন বসতবাটির যত্নে তাঁর আবেদনটি 'পুনর্নবীকরণ' করে বলেন- "আসুন আমরা আমাদের মাতৃভূমির যত্ন নিতে এগিয়ে আসি; আসুন, আমাদেরকে সম্পদের শিকারী করে তোলে এমন স্বার্থপর প্রলোভনকে কাটিয়ে উঠি; আসুন, পৃথিবী এবং সৃষ্টির উপহারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই; আসুন, আমরা এমন একটি জীবনযাত্রা এবং এমন একটি সমাজের উদ্বোধন করি যা শেষ পর্যন্ত পরিবেশ বান্ধব ও পরিবেশ-টেকসই হয়। সবার জন্য আরও একটি সুন্দর ভবিষ্যত উপহার দিতে আমাদের সুযোগ রয়েছে। পিতা ঈশ্বরের নিকট থেকে আমরা একটি সুন্দর বাগান পেয়েছি, আমাদের  সন্তানদের জন্য আমরা একটি মরুভূমি রেখে যেতে পারি না।" তিনি সকলকে এই যাত্রায় অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানান বিশেষত- পরিবার, ধর্মপল্লী, ডাইয়োসিস, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, খামার, সংগঠন, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে জড়িত সম্পৃক্ত হতে আহ্বান জানান। 

৪. বিশেষত বিগত 'লাউদাতো সি বছর' এ (মে, ২০২০ - মে, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ) ৭০০,০০০ গাছ লাগানোর উদ্যোগের জন্য কার্ডিনাল টার্কসন এ সময় বাংলাদেশের কাথলিক খ্রিস্টভক্তগণের প্রশংসা করেছেন। ভাটিকানের 'মানব উন্নয়ন' নামক পুণ্য দপ্তর আগামী ৪ অক্টোবর, ২০২১ খ্রিস্টাব্দে আসিসির সাধু ফ্রান্সিস এর পর্বদিবসে 'লাউদাতো সি অ্যাকশন প্লাটফর্ম' এর কর্মসূচি উদ্বোধন করবে এবং এ সময়ের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে, পরিবার, ধর্মপল্লী, পালকীয় সেবা কমিশনসমূহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোস্টেল, সেমিনারী, ব্রাদার হাউজ, সিস্টারদের কনভেন্ট, সংগঠন, ক্রেডিট ইউনিয়ন, সকল প্রকার প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং দলগতভাবে নিজেদের বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে আহ্বান করছে যেন একই দিনে আমরা একযুগে বহুমাত্রিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করতে পারি।

৫. ভাটিকানের 'পরিবেশ ও সৃষ্টি' নামক দপ্তরের সমন্বকারী ফা. যোসট্রম আইজাক কুরিথাডাম বলেছেন- আমাদের অভিন্ন বসতবাটির এবং সৃষ্টির সমস্ত সদস্যদের প্রতি যত্নবান হতে পবিত্র আত্মা কীভাবে বিশ্বব্যাপী মণ্ডলীকে উদ্বুদ্ধ করছে এটি দেখতে অনুপ্রেরণাদায়ক; 'লাউদাতো সি অ্যাকশন প্লাটফর্ম' হল সমন্বিত পরিবেশ বিষয়ক চেতনায় পুরোপুরি টেকসয়ের অভিমুখে যাত্রা। তিনি আরো বলেছেন- লাউডাতো সি বছর' সমাপ্ত হওয়ার পর থেকেই সকল খ্রিস্টভক্তগণ ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাৎসরিক বিশ্বব্যাপী প্রার্থনা এবং অভিন্ন বসতবাটির যত্ন উদযাপনের জন্য 'সৃষ্টি উদ্যাপন কাল' এর দিকে মনোনিবেশ করবেন। ভাটিকানের 'মানব উন্নয়ন’ নামক পুণ্য দপ্তরের সেক্রেটারি মন্সিনিয়র ব্রুনো মারি দোফে- সকল খ্রিস্টভক্তদের বিশ্বব্যাপী 'সৃষ্টি উদ্যাপন কাল' পালনে পুণ্যপিতা পোপ ফান্সিসের আহ্বানের কথা স্মরন করে দিয়ে বলেছেন- আমরা বিশপদের এবং মাণ্ডলিক সংস্থাসমূহকে 'সৃষ্টি উদযাপন কাল' সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে নিজস্ব বিবৃতি প্রকাশ করতে উৎসাহিত করছি।

৬. অন্যদিকে জাতিসংঘের সাধারণ পর্ষদও ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ৫ জুন এ দিনকে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। তবে  ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতিবছর দিনটি পালিত হয়ে আসছে। চলতি বছর দিবসটি উদযাপনের বিষয়বস্তু ছিল ধরিত্রীর বাস্তুতন্ত্র অর্থাৎ প্রকৃতি-পরিবেশ ‘পুুনর্মূল্যায়ন, পুনর্গঠন, পুনরুদ্ধার’ (Reimagine, Recreate, Restore) করা। তবে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের পরিবেশ দিবসটির আরেকটি গুরুত্ব আছে- আজ থেকে জাতিসংঘের ‘বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার দশক’ (২০২১-২০৩০ খ্রিস্টাব্দ) শুরু হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ, এত দিন ধরে আমরা উন্নয়ন কর্মকণ্ডসহ আমাদের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে সমন্বিত পরিবেশের যে ক্ষতি করেছি, তা পুনরুদ্ধারের জন্য বিশ্বের সব কটি রাষ্ট্র আগামী এক দশক অবিরত চেষ্টা করবে।

৭. করোনাভাইরাস মহামারির এ অবরুদ্ধ সময়ে নিজের অবস্থানে থেকে আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষার জন্য কিছু কিছু উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থপূর্ণভাবে ‘লাউদাতো সি অ্যাকশন প্লাটফর্ম’ কর্মপ্রক্রিয়ায় জড়িত হতে পরিকল্পনা করতে পারি। ধরিত্রীর যত্ন নেওয়া, তত্ত্বাবধান করা, সুরক্ষা করা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য আমরা সবাই যার যার নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি, অভিজ্ঞতা, আত্মনিয়োগ ও মেধা অনুসারে জড়িত হয়ে ঈশ্বরের হাতের যন্ত্র হিসেবে সহযোগিতা করতে পারি (লাউদাতো সি, অনুচ্ছেদ ১৪)। আসুন, ধরিত্রীর নিরাময়ে ভাটিকানের ‘মানব উন্নয়ন’ নামক পুণ্য দপ্তরের এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে আগামী ৭ বছর সময় সক্রিয়ভাবে সাথে থাকি। আসুন, একসাথে, একত্রে আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিজেদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাসমূহ অবিরত চালিয়ে যাই; ‘আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর’ থাকি।




রবিবার, ২৩ মে, ২০২১

অভিন্ন বসতবাটির সুরক্ষায় আমাদের আচরণবিধি

ভাটিকানের ‘মানব উন্নয়ন’ নামক পুণ্য দপ্তর পুুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস এর আহ্বানকে সফলতা দান করতে আগামী ৭ বছর সময়কে "লাউদাতো সি কর্মসূচি প্লাটফর্ম" ঘোষণা করেছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে, পরিবার, ধর্মপল্লী, পালকীয় সেবা কমিশনসমূহ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোস্টেল, সেমিনারী, ব্রাদার হাউজ, সিস্টারদের কনভেন্ট, সংগঠন, ক্রেডিট ইউনিয়ন, প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং দলগতভাবে নিজেদের কিছু সুনির্দিষ্ট ও লিখিত অঙ্গীকার ও কার্যক্রম গ্রহণ করতে আহ্বান করেছেন।আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষার্থে পোপ ফ্রান্সিস এর সর্বজনীন পত্র ‘লাউদাতো সি’ এর অনুপ্রেরণায় করণীয় কিছু উপলব্ধি ও কিছু সুপারিশ এখানে প্রদান করা হল যা নিজেদের জন্য একটি "অভিন্ন বসতবাটির সুরক্ষায় আমাদের আচরণবিধি" তৈরি করতে সহায়তা করবে।

১. নিজের বেদনাদায়ক কষ্ট অনুভব- অন্তরে গভীরভাবে উপলব্ধি করি আবর্জনা এখানে-সেখানে ছুড়ে ফেলে অপরিচ্ছন্ন-অস্বাস্থ্যকর নর্দমা তৈরি করেছি; গাছ কেটেছি কিন্তু রোপনে অবহেলা করে পরিবেশে ভারসাম্য নষ্ট করেছি; স্বার্থপরতা ও অতিভোগের কারণে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ করে ফেলেছি; প্রতিনিয়ত প্রচুর পানি অপচয় করছি, খাল ও নদীর জল বিষাক্ত করে ফেলেছি; এভাবে প্রকৃতি ও প্রতিবেশীদের প্রতি অনেক ক্ষতি  ইতোমধ্যে করেছি। এসব স্মরণ করে অনুতপ্ত হই ও মন-পরিবর্তন করি  এবং প্রকৃতি ও  প্রতিবেশীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে অঙ্গীকার করে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস এর সাথে আধ্যাত্মিকভাবে একাত্ম থাকি। 

২. সৃষ্টির মঙ্গলবার্তা বিশ্বাস- আমাদের আশা হল- ঈশ্বর, যিনি শূণ্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তিনি পৃথিবীতেও হস্তক্ষেপ করতে পারেন এবং সব ধরনের অমঙ্গলকে পরাস্ত করতে পারেন। তিনি আমার, আপনার সহযোগিতায় তা করতে চান। আজ থেকেই আমার ও আপনার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদক্ষেপে বড় কিছু অর্জন সম্ভব, কেননা আমরা জানি যে পরিবর্তন সম্ভব; এই বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করা;

৩. সৃষ্টি-কেন্দ্রিক উপাসনা প্রস্তুত- যারা পরিবেশ সংরক্ষণ ও বাস্তব্যবিদ্যা গবেষণা করেন তাদের প্রতিপালক আসিসির সাধু ফ্রান্সিস এর মধ্যস্থতায় প্রার্থনা করতে পারি; সৃষ্টি-কেন্দ্রিক বা লাউদাতো সি উপাসনা উদযাপনকে উৎসাহিত করা এবং পরিবেশগত ধর্মশিক্ষা, প্রার্থনা, নির্জনধ্যান ও মানব গঠন কার্যক্রম আয়োজন করা যায়;

৪. পরিবারের যত্ন- আমি যেখানে বসবাস করছি সেটা একটি পরিবার; আমাদের পরিবার হল সৃষ্টি ও প্রকৃতির একটি অংশ; পরিবারের আরো বেশী যত্ন নিব। খাবারের সময়, অবসর সময়ে অথবা বিনোদনের সময়ে প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং দীনদরিদ্রদের অবস্থা নিয়ে সহভাগিতা করা; প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং গরীবদের জন্য ভাল কিছু উদ্যোগ নিতে সন্তানদের উৎসাহিত করা যায়;

৫. তিনটি ‘পি’ (three P’s)- ‘লাউদাতো সি’ পত্রটির নিবিড় সমন্বয় ও কার্যকরী সাড়াদানের ক্ষেত্রে তিনটি ‘পি’ (three P’s) অনুধ্যানে করণীয়সমূহ স্মরণ করতে পারি- plant বা গাছ-গাছড়া লাগানো, protect বা রক্ষণাবেক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও promote বা সংবর্ধিত করা অর্থাৎ ‘লাউদাতো সি’র মাণ্ডলিক শিক্ষা সকলের নিকট প্রকাশ ও প্রচার করা;

. পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা- নিজের দেহ থেকে শুরু করে জামাকাপড়, ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট, কর্মস্থল, সমাবেশস্থল, প্রভৃতির পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা; সন্তানদেরও অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করবো। বাড়ির চারিপাশের প্লাস্টিক, নর্দমা ও আবর্জনা পরিস্কার করতে উদ্যোগ গ্রহণ ও নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করা বা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা যায়;

. অপচয়রোধ ও ঋণ পরিশোধ- প্রয়োজন মাফিক কেনাকাটা, পরিমিত রান্না করা; প্রয়োজন অতিরিক্ত খরচপাতি, জিনিসপত্র ও দ্রব্যসামগ্রীর অপব্যবহার, ভোজনবিলাস ও অতি ভোগের মানসিকতা বর্জন করা; বাড়িতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিভিশন, এসি, পানির কল, বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহারের পর বন্ধ রাখাতে সর্বদা সচেতন থাকব। ক্রেডিট ইউনিয়নসহ সকল প্রকার ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা; ঋণ গ্রহণ করে বিনোদন বা উৎসব আয়োজন থেকে বিরত থাকা;

. স্বাস্থ্যসম্মত খাবার- শাকসবজি, ফুল ও ফলের বাগান করা এবং খাবারের হিসেবে ব্যবহার করা। প্রকৃতিজাত, বিশুদ্ধ ও সুষম খাদ্য আহার ও পানীয় পান করা; মাংস গ্রহণ পরিমিত করা, পরিমিত পরিবেশন ও পরিমিত ভোগ, দেশীয় পণ্য ব্যবহার করার মনোভাব তৈরি করা; 

. বাগান ও জৈবসার- রান্নাঘরের অবশিষ্টাংশ, পাতা-লতা ও আবর্জনাগুলি মিশ্রিত করে উত্তম সার তৈরি করা যায় এবং এসব গাছের বৃদ্ধিতে আরও ভাল সার হিসেবে সহায়তা করে। কর্মস্থলে ও বাড়িতে খালি জায়গায়, টবে, বারান্দা, ছাদে অথবা জানালার পাশে গাছ রোপণ ও নির্ধারিত গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সন্তানদের দায়িত্ব বন্টন করে দিতে পারি। গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা শহরে বাসাবাড়িতে টবে বারান্দায় বা ছাদে অথবা জানালার পাশে শাক-সবজি-ফুল বাগান তৈরি করা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা; 

১০. দূষণমুক্ত পরিবেশ- শব্দ, বায়ূ, জল এবং সকল প্রকার দূষণমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা; গণপরিহন ব্যবহার করা এবং পরিবহণের দূষণকারী কর্মক্রিয়া পরিত্যাগ করতে হবে; 

১১. পানি অপচয়রোধ- যারা পানীয় জলের চরম সংকটে আছে তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা  স্নানে পরিমিত পানি ব্যবহার বা আগের চেয়ে একটু কম পারি ব্যবহার, হাতমুখ ধোয়ার সময় কলের পানি নষ্ট না করি, যতটুকু পান করতে চাই ততটুকু পানি গøাসে ঢেলে পান করতে পারি। আমাদের এমন ক্ষুদ্র ক্ষ্রদ্র অভ্যাস পানি অপচয় অনেক হ্রাস করবে; 

১২. প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতনতা- আমরা এমুহূর্তে প্লাস্টিক ব্যবহার সম্পূর্ণ বাদ দিতে পারছি না তাই সঠিকভাবে ব্যবহার ও প্লাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পলিথিন ব্যাগ একেবারেই বাদ দিতে হবে কারণ এর ক্ষতির ধরন বহুমাত্রিক এবং বাড়ছে- মাটি নষ্ট করে জমিতে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট করছে, শহরে নর্দমা বের হওয়ার পথ বন্ধ করে ব্যাপক ক্ষতি করছে এবং আগুনে দিলে গ্যাস হয়ে বায়ুদূষণ করে মানবদেহের সংঘাতিক ক্ষতি করবে; 

১৩. কাপড় ও পাটের ব্যাগ ব্যবহার- পাটের তৈরি চটের ব্যাগ অথবা ভারী ও শক্ত কাপড় পুনঃব্যহার করে ব্যাগ তৈরি করে বাজারে বা বাড়ির নিত্য প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়;

১৪. পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা- লাউদাতো সি পত্রটির অনুপ্রেরণায় সমন্বিত পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক শিক্ষা বিস্তার করা সম্ভব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ডাইয়োসিস, ধর্মপল্লী, ক্লাব, সংগঠন, ক্রেডিট ইউনিয়ন, পরিবারে, যোগাযোগ মাধ্যমে, ধর্মশিক্ষাদানে ও অন্যত্র। পরিবেশগত সচেতনতা এবং কর্মকাণ্ড তৈরি লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে পরিবেশগত চেতনায়নমূলক শিক্ষা পাঠ্যক্রম প্রস্তুত করােত পারে; 

১৫. পরিবেশ বিষয়ক বই ও পত্রিকা পড়া- ব্যক্তিগতভাবে এবছর পরিবেশ বিষয়ক একটি বই পড়ার অঙ্গীকার করা; প্রকৃতি ও পরিবেশ সংক্রান্ত পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের গ্রাহক হয়ে পাঠ করা; লাউদাতো সি বিষয়ক একটি শিক্ষা সেমিনারে অংশগ্রহণ করা; যা যা নতুন শুনছি তার কিছু অংশ মনে রাখুন। আমরা যা শুনি তার মাত্র ১০ শতকরা এক বছর পর মনে রাখতে পারি। আগ্রহ অটুট থাকলে মনে রাখার শতকরা হারও বাড়বে;

১৬. অভিজ্ঞ সহায়ক নিমন্ত্রণ- আপনার সংঘের, বা প্রতিষ্ঠানের সেবাগ্রহণকারী অংশীজনের সাথে আপনার শিক্ষণ সহভাগিতার ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজনে আপনাকে সহায়তা করতে বাইরে থেকে অভিজ্ঞ সহায়ক বা বক্তা ডেকে আনুন;

১৭. নিজে জানুন ও অন্যকে জানান- আমাদের দেশে পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে সরকার কাজ করছে, দেশী সংস্থা কাজ করছে, বিদেশী সংস্থা কাজ করছে। তাদের কাজ সম্পর্কে জানা ও অপরকে জানানো, তাদের কাজে সহযোগিতা করা। প্রকৃতি ও পরিবেশ বা লাউদাতো সি বিষয়ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জোটে (হবঃড়িৎশরহম) যোগ দিন; নিজের চেষ্টায় পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ, ফলাফল ও প্রতিরোধ সম্পর্কে আরো বেশী করে জানুন। পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে মণ্ডলীর শিক্ষা কী, মহামান্য পোপ মহোদয় বার বার কী আহবান রাখছেন- তা জানুন;

১৮. একজনকে দায়িত্ব প্রদান- আপনার সংঘে বা প্রতিষ্ঠানে এমন একজনকে বাছাই করুন যে কী না আপনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আগামী বছর এই বিষয়ে নিজে আরো জানবেন, সংঘের বা প্রতিষ্ঠানের সকলকে জানাবেন ও বাইরে অন্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবেন; 

 ১৯. সহভাগিতা ও আলোচনা- আপনার যা যা নতুন শিক্ষণ (learning) তা তা আপনার সংঘের বা প্রতিষ্ঠানের ভেতরকার অংশীজনদের (stakeholders) জানান। যেসমস্ত চিঠি, দলিল, লেখা পাচ্ছেন তা সহভাগিতা করা, তাদের কেন জানাচ্ছেন তা-ও ব্যাখ্যা করুন। আপনার প্রত্যাশা খুলে বলুন। কোনো নিয়মিত সভায় সকলের সাথে এই বিষয় আলাপ করতে ঘন্টাখানেক সময় বরাদ্দ রাখা যেতে পারে;

২০. কর্মস্থলে সচেতনতা- কর্মস্থলে প্রয়োজন ছাড়া কাগজে প্রিন্ট না করা, প্রয়োজনে কাগজের উভয় পৃষ্ঠায় প্রিন্ট করা এবং সুযোগ থাকলে কাগজ পুনঃব্যবহার করতে পারি; কম্পিউটার, প্রিন্টার ও অন্যান্য অফিস সরঞ্জামসমূহ ব্যবহারের পরে বন্ধ রাখব; দলীয়ভাবে গাড়ী ব্যবহার করার মাধ্যমে কার্বন ব্যবহার হ্রাস করতে পারি; 

২১. সৌহার্দ্যপূর্ণ কর্মপরিবেশ- কর্মস্থলে ‘ধন্যবাদ’ ও ‘স্বাগত’ এমন সৌজন্যসূচক শব্দ ব্যবহার, ইতিবাচক কথা বলা, ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার, নোংরা শব্দ পরিহার, সমালোচনামূলক কথা না বলা, বিচারকি কথা-বার্তা পরিহার কর্মপরিবেশ সুন্দর রাখে। অযাচিত চাটুকারিতার স্বভাব সম্পর্কে সতর্ক থাকা; কাজের সময় অযথা অন্যের নিকট বসে সময় নষ্ট না করা বরং তাকে কাজ করতে দেয়া এবং নিজে ভাল কাজ করা, কাজে সৃজনশীল চিন্তা করা, অবসর সময়ে উদ্দীপনামূলক লেখা পড়ে নতুন চিন্তা আহরণ করা; 

২২. সত্য মতকে সত্যরূপে গ্রহণ- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিত্তিহীন গুজব ও ‘মতের অরণ্য’ থেকে  বেরিয়ে এসে মূলধারার গণমাধ্যমের উপর নির্ভর করা যেন যথার্থ আনন্দ, গভীর তৃপ্তি, প্রকৃত সত্য আহরণ করা যায়;

২৩. ছুঁড়ে ফেলার সংস্কৃতি বর্জন- অর্থনীতি, উৎপাদন ও জিনিসপত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে- সংগ্রহ কর-চাহিদা পূরণ কর-ছুঁড়ে ফেলার (take-make-dispose) বর্তমানযুগে প্রচলিত উন্নয়নের মডেলের পরিবর্তে লাউদাতো সি'র অনুপ্রেরণা- পুনর্নবীকরণ-পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ-অন্যের সাথে সহভাগিতার (renew-remake-share) রূপান্তরশীল প্রক্রিয়া প্রচলন ও অনুুসরণ করা;

২৪. পবিত্র আহ্বান হিসেবে গ্রহণ- নিজের কল্যাণের কথা ভেবেই প্রকৃতি, পরিবেশ এবং প্রতিবেশীর সুরক্ষা সুসংবাদটি পবিবারের আপনজন ও বন্ধুবান্ধবদের জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই এটি পবিত্র একটি আহ্বান হিসেবে গ্রহণ করা যায়;

২৫. নিজের অংশগ্রহণটা অপরিহার্য- ইতোমধ্যে যদি ভাল কিছু করি তবে 'আরো ভাল' কিছু করতে চেষ্টা করি, যদি আরো ভাল কিছু করে ফেলেছি তবে 'উত্তম কিছু' করতে চেষ্টা করি, আর যদি উত্তম কিছু করে থাকি তবে 'অতি উত্তম কিছু' করার জন্য উদ্যোগ নিতে পারি;

২৬. অবিরত প্রার্থনা করি- যদি কিছুই করতে না পারি তবে পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে সরাসরি যারা জড়িত তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করতে পারি। জলবায়ু পরিবর্তেনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের জন্যেও প্রার্থনা করুন। দীনদরিদ্র মানুষ যারা অমানবিক ও অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন তাদের জন্য প্রার্থনা অব্যাহত রাখুন। এই বিশ্ব জানতেও পারেনা প্রার্থনায় যে কতো আশ্চর্য্য কাজ হয়!     

করোনাভাইরাস মহামারী শিখিয়েছে আমাদের আরও বেশি যতœবান ও রক্ষণাবেক্ষণ মনোভাব প্রয়োজন। পোপ মহোদয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা ‘লাউদাতো সি সপ্তাহ’ উদ্যাপন করছি। ইতোমধ্যে অনেকে নীরবে কাজ করে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছি। ভাটিকানের ‘মানব উন্নয়ন’ নামক পুণ্য দপ্তর পোপ ফ্রান্সিসের এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে আগামী ৭ বছর অবিরত বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করবে। আসুন, একসাথে, একত্রে আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিজেদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাসমূহ "অভিন্ন বসতবাটির সুরক্ষায় আমাদের আচরণবিধি" অনুসরণ করি তবেই মহান কিছু অর্জন সম্ভব হবে। ধরিত্রীর বুকে আনবে নতুন ছন্দ, জাগাবে নতুন আশা; ‘আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর’ থাকি।



 পঞ্চাশত্তমী মহাপর্ব দিবস, রবিবার,  মে ২৩, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, লাউদাতো সি সপ্তাহ-২১

বুধবার, ১৯ মে, ২০২১

অধ্যয়ন, অনুধাবন ও অনুশীলন

 খ্রিস্টমণ্ডলীর কর্মনীতি বা কর্মকৌশল হলো  সদ্বিবেচনা বা বিবেক। সদ্বিবেচনা এমন একটি নৈতিক গুণ যা মঙ্গল-উদ্দেশ্য ও সঠিক পদ্ধতি জানার জন্য সাহায্য করে। সদ্বিবেচনার প্রক্রিয়ায় তিনটি ধাপ লক্ষ্যণীয়: (ক)  পরিস্থিতি জানা - “দেখা” (খ) যাচাই করা বা শুনা বা বিশ্লেষণ করা এবং (গ) কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া  বা কাজ করা।  সদ্বিবেবচনা এমন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে যা সঙ্গতিপূর্ণ, বাস্তবধর্মী ও দায়িত্বশীল।‌ আমরা যখন ‌'লাউদাতো সি সপ্তাহ -২১' পালন করছি তখন নিম্নের বিষয়সমূহ নিজেরা গভীরভাবে অনুধাবন এবং অনুশীলন  করে আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষার জন্য কিছু কিছু উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সপ্তাহটি অর্থপূর্ণ করতে পারি। 

(১) পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা- নিজের দেহ থেকে শুরু করে পোশাক-আশাক, ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট, কর্মস্থল, সমাবেশস্থল, প্রভৃতির পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা; 

(২) অপচয়রোধ- প্রয়োজন অতিরিক্ত খরচপাতি, জিনিসপত্র ও দ্রব্যসামগ্রীর অপব্যবহার, ভোজনবিলাস ও অতি ভোগের মানসিকতা বর্জন ; 

(৩) দূষণমুক্ত পরিবেশ- শব্দ, বায়ূ, জল এবং সকল প্রকার দূষণমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা; গণপরিহন ব্যবহার করা এবং পরিবহণের দূষণকারী কর্মক্রিয়া পরিত্যাগ করতে হবে; 

(৪) স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ- শাকসবজি, ফুল ও ফলের বাগান করা এবং খাবারের হিসেবে ব্যবহার করা। প্রকৃতিজাত, বিশুদ্ধ ও সুষম খাদ্য আহার ও পানীয় পান করা; মাংস গ্রহণ কমানো, পরিমিত পরিবেশন ও পরিমিত ভোগ, দেশীপণ্য ব্যবহার;

 (৫) সত্য মতকে সত্যরূপে গ্রহণ- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিত্তিহীন গুজব ও ‘মতের অরণ্য’ থেকে  বেরিয়ে এসে মূলধারার গণমাধ্যমের উপর নির্ভর করা যেন যথার্থ আনন্দ, গভীর তৃপ্তি, প্রকৃত সত্য আহরণ করা। সকলে সত্য মতকে অবিচল সত্যরূপে গ্রহণ করতে পারলে নানা প্রকার বিদ্রোহ, বিভ্রাট ও মনোবিকার যার ফলে সৃষ্ট এক ধরণের মানসিক আর্বজনা থেকে সমাজ রক্ষা পাবে এবং

(৬) ছুঁড়ে ফেলার সংস্কৃতি বর্জন- অর্থনীতি ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে সংগ্রহ কর-চাহিদা পূরণ কর-ছুঁড়ে ফেলার (Take-Make-Dispose) বর্তমানযুগে প্রচলিত উন্নয়নের মডেলের পরিবর্তে লাউদাতো সি'র অনুপ্রেরণা- পুনর্নবীকরণ-পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ-অন্যের প্রয়োজনে সহভাগিতার (Renew-Remake-Share) রূপান্তরশীল প্রক্রিয়া প্রচলন ও অনুুসরণ করা। 

আসুন, একসাথে, একত্রে আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিজেদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাসমূহ অবিরত চালিয়ে যাই; ‘আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর’ থাকি।



শনিবার, ১৫ মে, ২০২১

‘লাউদাতো সি সপ্তাহ’ - মে ১৬-২৫, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ

 LAUDATO SI WEEK 21, May 16-25, 2021

পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষার উপর মে ২৪, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে ‘লাউদাতো সি’ সর্বজনীন পত্রটি লিখেছেন। তাঁর আহ্বানে ‘লাউদাতো সি বছর’ (মে, ২০২০ থেকে মে, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ) পালনের সমাপ্তিতে মে ১৬-২৫, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ তারিখে ‘লাউদাতো সি সপ্তাহ’ উদযাপন হতে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারির এ অবরুদ্ধ সময়ে নিজের অবস্থানে থেকে আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষার জন্য কিছু কিছু উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থপূর্ণভাবে সপ্তাহটি উদযাপন করতে পারি। যেমন-

১. আমাদের জীবনযাপনে অপরিহার্য উপাদান (মাটি, বায়ু, আগুন, জল) নিয়ে গভীর মনোযোগ প্রদান করতে পারি; কিন্তু এসবই
এখন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন এবং আমাদের সকলকেই ভাবিয়ে তুলছে; আমরা সবাই ভুক্তভোগী;

২. দীনদরিদ্র, দুর্বল ও দুঃখকষ্টে জর্জরিত মানুষের আর্তনাদে আরও অধিক মনোযোগ দিতে পারি;

৩. একটি আরও ন্যায়-সঙ্গত, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই অর্থনীতির প্রতি মনোযোগ দিতে পারি যা কাউকে পিছনে
ফেলে রাখে না;

৪. সহজ-সরল জীবনযাপনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ-জীবন গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কিছু কিছু বিষয়ে সচেতনতা লাভ করা যায়- (ক)
পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, (খ) অপচয়রোধ, (গ) দূষণমুক্ত পরিবেশ, (ঘ) প্রকৃতিজাত, বিশুদ্ধ ও সুষম খাদ্য আহার ও পানীয় পান
করা;

৫. আমাদের অভিন্ন উৎপত্তি সম্বদ্ধে, আমাদের পারস্পরিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে এবং সম্পদসমূহ সবার সাথে সহভাগিতা করার
দায়িত্ব সম্বদ্ধে পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা, জ্ঞান ও সচেতনতা গ্রহণ করতে পারি;

৬. ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রকৃতির ধ্যানমগ্নতায় বিস্ময়বোধ, প্রশংসা, আনন্দ এবং কৃতজ্ঞতা অন্তরে অবিরত অনুভব করা; সৃষ্টি-কেন্দ্রিক
উপাসনা উদযাপনকে উৎসাহিত করা এবং পরিবেশগত ধর্মশিক্ষা, প্রার্থনা, নির্জনধ্যান ও মানব গঠন কার্যক্রম আয়োজন
করা যায় এবং

৭. এ সংকটকালে একযোগে এই ধরিত্রীকে বাঁচানোর চিন্তায় মনোযোগী হওয়া ও অংশগ্রহণমূলক বহুমাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ খুবই
প্রাসঙ্গিক ভাবনা।
আসুন, একসাথে, একত্রে আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিজেদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাসমূহ অবিরত চালিয়ে যাই; ‘আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর’ থাকি।