সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯

বিশ্ব অভিবাসী ও শরণার্থী দিবস: কিছু উপলব্ধি ও সুপারিশ


রবিবার দিন ২৯শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে পূণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস এর আহ্বানে উদ্যাপিত হচ্ছে ১০৫তম বিশ্ব অভিবাসী ও শরণার্থী দিবস। ভাটিকান শহরের অবস্থিত পুণ্যপিতা পোপ মহোদয়ের অভিবাসী ও শরণার্থী সেকশন (Migrants & Refugees Section, DPIHD, Holy See, Vatican City) থেকে মূলসুর ঘোষণা করেছে- “এটা শুধুমাত্র অভিবাসীদের সম্পর্কে নয়” (It is no just about migrants)। পোপ ফ্রান্সিস তাঁর বাণীতে বলেছেন, “এটা শুধুমাত্র অভিবাসীদের সম্পর্কে নয়, কিন্তু আমাদের প্রত্যেকেরই।”  তাঁর  আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা- প্রথমতঃ অভিবাসী ও শরণার্থী দিবসে পোপ মহোদয়ের বাণীর মৌলিক শিক্ষা অনুধ্যান করতে পারি এবং দ্বিতীয়তঃ খ্রিস্ট বিশ্বাসী হিসেবে নিজেদের পরিবেশে কিছু উপলব্দি ও করণীয় উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে পোপ মহোদয়ের অনুপ্রেরণায় পথ চলতে পারি।
ক) পোপ ফ্রান্সিস এর বাণীর মৌলিক শিক্ষা অনুধ্যান
১. অভিবাসীদের জীবন উপলব্ধির একটি আহ্বান: তিনি বলেছেন, ভয় এবং বিতারণ সংস্কৃতি (a throw-away culture) কারণে যারা প্রত্যাখ্যান ও বাদ পরা জনগোষ্ঠী তারা আরো উন্নত জীবনের আশায় আশ্রয় খুঁজে বেড়ায় । পোপ ফ্রান্সিস আমাদের প্রত্যেককেই অভিবাসী, শরণার্থী, অভ্যন্তরীণ অভিবাসী ও পাচারে শিকার জনগোষ্ঠীর অবস্থার গভীর অর্থ বুঝতে আহ্বান করেছেন। তিনি বলেছেন, আরও ভাল জীবন খুঁজে বেড়াচ্ছে যারা আমরা কীভাবে তাদের স্বাগত জানিয়ে, সুরক্ষা দিয়ে, সংবর্ধিত করে ও সংযুক্ত করে ঈশ্বরের নগরী গড়ে তুলতে পারি তা অনুধ্যান করতে পারি। তিনি বলেন, এটি শুধুমাত্র তাদের সম্পর্কে নয়, কিন্তু আমাদের সকলেরই এবং মানব পরিবারের বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে। 

২. বিতারণ সংস্কৃতি বিস্তার: যুদ্ধ-সংঘাত, উন্নয়নের নামে মেগা প্রকল্প, সামাজিক ও ধর্মীয় বিভেদ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং অলীক জীবনমান স্বপ্ন ইত্যাদির প্রভাবে অনেককে বিতারণ সংস্কৃতির কারণে উন্নত জীবনের  আশায় আশ্রয় খুঁজে বেড়ায়। পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, ভাবনার বিষয় যে কেউই প্রান্তিক নয়, কিন্তু বর্তমান বিশ্বে অভিজাত শ্রেণি ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে এবং বিতারিত জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়তই নিষ্ঠুরতার স্বীকার হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, “যুদ্ধগুলি কেবল বিশ্বের কয়েকটি অঞ্চলে সংগঠিত হয়, তবুও যুদ্ধের অস্ত্রগুলি অন্যান্য অঞ্চলে তৈরি ও বিক্রি করা হয় তবুও এসব বিরোধসমূহ থেকে সৃষ্ট শরণার্থীদের গ্রহণে তারা অনিচ্ছুক।” 

৩. আমদের ভয়- প্রভুর সাক্ষাৎ পেতে বাধা দেয়: বিভিন্ন লক্ষণসমূহ প্রতিয়মান করে আমাদের চারিপাশের অন্যদের প্রতি, অচেনাদের প্রতি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি, বিদেশীদের প্রতি আমাদের ভয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। “এটা শুধুমাত্র অভিবাসীদের সম্পর্কে নয়। এটি আমাদেরও ভয়।” তিনি বলেছেন, যদি কখনও ভয় বৈধ হয় তবে তা বাধা স্বরূপ। যখন ভয়সমূহ আমাদের চিন্তাভাবনা ও আচরণে শর্ত দেয় তা আমাদেরকে অসহিষ্ণু করে তুলে, আমাদের গুটিয়ে ফেলে এবং এমনকি নিজের অজান্তেই আমাদেরকে সাম্প্রদায়িক করে তোলে। অন্য মানুষের মাঝে প্রভুর সাক্ষাৎ পেতে ভয় বাধা হয়ে দাড়ায়। অন্তরে স্মরণ রাখতে হবে যিশু বলছেন, ”সাহস হারিয়ো না! এ তো আমিই! কোন ভয় নেই তোমাদের!” (মথি ১৪:২৭)।

৪. ক্রমবর্ধমান এককবাদ ও বিশ্বব্যাপক ঔদাসীন্য: পোপ মহোদয় বলেছেন, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত সমাজগুলি ক্রমবর্ধমান চরম এককবাদের (individualism) দিকে চালিত হওয়ার সাক্ষ্য বহন করছে যা ‘সর্বাধিক সুখবাদ’ (utilitarian) মানসিকতার সাথে মিলে মিডিয়ার বদৌলতে জোরদার হয়ে একটি ‘বিশ্বব্যাপক ঔদাসীন্য’ (globalization of indifference) মনোভাব লালিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, অভিবাসী, শরণার্থী, বাস্তুচ্যুত এবং পাচারে শিকার জনগোষ্ঠী বাদ পড়ার প্রতীক হয়ে উঠেছে। তাদের বর্তমান অবস্থার মধ্যে যে সমস্যাগুলি বিদ্যমান আছে সেইগুলি ছাড়াও তাদের প্রায়শই তুচ্ছ করা হয় এবং গোটা সমাজের ক্ষতের উৎস হিসেবে তাদের বিবেচনা করা হয়। এই মনোভাবটি যদি আমরা বিতারণ সংস্কৃতিতে অব্যাহত রাখি তবে আমরা যে নৈতিক অবক্ষয়ের মুখোমুখি হব তা একটি বিপদজনক সতর্কতা সংকেত এখনই দেখতে পাচ্ছি। 

৫. খ্রিস্টিয় সাক্ষ্যদান চলমান রাখা: তিনি বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে যদি এমন অবস্থা অব্যাহত থাকে তবে যারা শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে সুস্থ হিসেবে গ্রহণীয় মানদন্ডের মধ্যে না পড়ে তারা প্রান্তিক এবং বিতারণ ঝুঁকিতে রয়েছে। এই কারণে অভিবাসী, শরণার্থী এবং অতি দুর্বল মানুষদের উপস্থিতি আমাদের খ্রিস্টিয় সাক্ষ্যদান এবং মানবতার মৌলিক দিক জাগ্রত করার আহ্বান জানাচ্ছে; যা উন্নত সমাজ দ্বারা উপেক্ষিত হতে পারে। এই কারণে এটি কেবল অভিবাসীদের সম্পর্কে নয়। তিনি আরো বলেছেন, আমরা যখন তাদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করি তখন আমরা নিজের জন্য ও সকলের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করি; তাদের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে, তাদের কথা শোনে আমরা নিজেরাই কথা বলতে পারি; আবার আমরা নীরব থাকতে পারি কারণ আজকাল এটা ভাল হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। 

৬. মানবতা ও দয়ার কাজের মাধ্যমে বিশ্বাসের প্রকাশ: পোপ মহোদয় বলেছেন, অভিবাসী এবং শরণার্থীদের বিষয়টি দয়ার কাজ ও মানবতার সাথেও জড়িত। দয়ার কাজের মাধ্যমে আমরা আমাদের বিশ্বাস প্রকাশ করি। দয়ার সঠিক মানদন্ড হল তাদেরই দয়া কর যারা প্রতিদান দিতে অক্ষম এবং সম্ভবতঃ বিনিময়ে আমাদের ধন্যবাদ জানাতেও অক্ষম। তিনি বলেছেন, আমাদের সহভাগিতামূলক মানবতা থেকে উৎসারিত সহানুভূতি আমাদের অন্য ব্যক্তির মধ্যে থাকা কষ্টকে অনুভব করতে শেখায় এবং তাদের প্রাণ বাচাঁনোর পদক্ষেপ গ্রহণে পরিচালিত করে। 

৭. ‘ব্যক্তিই’ প্রধান তাই কাউকে বাদ দেয়া যাবে না: পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন,  পিছে পরাদের প্রথমে রাখাই একজন খ্রিস্টভক্তের প্রকৃত মূলমন্ত্র। যিশু বলেেেছন,”তোমাদের মধ্যে যে বড় হতে চায়, তাকে হতে হবে তোমাদের সেবক; এবং তোমাদের মধ্যে যে প্রধান হতে চায়, তাকে হতে হবে তোমাদের সকলেই দাস” মার্ক ১০:৪৩-৪৪)। তিনি বলেছেন,“মঙ্গলসমারের যুক্তি অনুযায়ী, সর্বশেষ ব্যক্তিরা প্রথমে আসবে এবং আমাদের অবশ্যই তাদের সেবায় নিযুক্ত থাকা উচিত।” তিনি গোটা ব্যক্তি ও সকল লোক সম্পর্কে বলেছেন, প্রতিটি রাজনৈতিক কার্যকলাপ, প্রতিটি কর্মসূচিতে, প্রতিটি পালকীয় কাজে আমাদের অবশ্যই ব্যক্তিকে কেন্দ্রে স্থান দিতে হবে; সে পুরুষ বা মহিলা যাই হোক, তার বহুমাত্রিক বিষয়সমূহ, তবে অবশ্যই আধ্যাত্মিক দিকটাও।

৮. ঈশ্বর ও মানুষের নগরী স্থাপন: পরিশেষে, পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, এটি হবে ঈশ্বর ও মানুষের নগরী (City of God and man), যা তিনি উল্লেখ করছেন- প্রযুক্তিগত ও ভোগবাদী সুখভিলাষ স্থান (a technological and consumerist paradise) হিসেবে নয়। অভিবাসী ইন্দ্রিয়গোচর বিষয়টি তিনি খোলসমুক্ত করেন, একটি চলমান ক্রমবর্ধমান কল্পকাহিনীটি অনেককে শোষণের ভিত্তিতে সৃষ্ট যা থেকে মুষ্ঠিমেয় মানুষ উপকৃত হয়। তিনি উল্লেখ করেছেন, অভিবাসী ও শরণার্থীরা আমাদের ভাই-বোন এবং এটি একটি সুযোগ যেখানে দূরদর্শিতা মাধ্যমে আমাদের আরো বেশি ন্যায়সঙ্গত সমাজ, নিখুঁত গণতন্ত্র, আরও ঐক্যবদ্ধ দেশ, আরও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ বিশ্ব, এবং আরও উদার ও মঙ্গলসমাচার ভিক্তিক খ্রিস্টসমাজ  গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, “এটা শুধুমাত্র অভিবাসীদের সম্পর্কে নয়: এটা ঈশ্বর ও মানুষের নগরী স্থাপন করা।” যেমনটি সাধু পল বলেছেন, তাহলে দেখা যাচ্ছে, তোমরা এখন আর বিদেশী বা প্রবাসী নও, বরং তোমাদের পুণ্যজনদের সহনাগরিক এবং ঈশ্বরের আপনজন।” (এফেসীয় ২:১৯)

খ) অভিবাসী বিষয়ক জাতীয় পালকীয় কর্মশালা 
গত ৮ -১০ আগষ্ট ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে “National Pastoral Workshop on Migration – 2019”  শিরোনামে অভিবাসী, শরণার্থী, অভ্যন্তরীণ অভিবাসী ও পাচারে শিকার জনগোষ্ঠী বিষয়ক একটি কর্মশালা কাথলিক বিশপ সম্মিলনী’র ন্যায় ও শান্তি কমিশন এর উদ্যোগে আয়োজিত হয়। সভায় মহামান্য কার্ডিনাল মহোদয়সহ শ্রদ্ধাভাজন আর্চবিশপ মহোদয়, বিশপগণ, পুরোহিত, ধর্মসংঘের প্রতিনিধি, যুবক-যুবতী, সেমিনারীয়ান, পেশাজীবি, কাথলিক গণমাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিবর্গ, সমাজকর্মীগণ নিমন্ত্রিত ছিলেন। সভার উদ্দেশ্য ছিল- অভিবাসী বিষয়ক সেবাকাজের অভিজ্ঞতা সহভাগিতার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি, সমন্বিত (ডাইওসিস, কমিশন, স্কুল, প্রতিষ্ঠান, ওয়ার্ল্ড ভিশন, কারিতাস এবং অন্যান্য সংগঠন) উদ্যোগ গ্রহণ, কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে পালকীয় যতœ আরো বেগবান করা। কর্মশালাটি সিবিসিবি সেন্টার, ২৪/সি আসাদ এভিনিউ, মোহম্মদপুর, ঢাকা আয়োজন করা হয়। ভাটিকান শহরের অভিবাসী ও শরণার্থী সেকশন থেকে আগত প্রতিনিধির সহযোগিতায় কর্মশালাটি পরিচালিত হয়। সর্বমোট ৮৫জন অংশগ্রহণকারীদের মতামতের ভিত্তিতে অভিবাসী বিষয়ক কিছু উপলব্দি ও করনীয় সম্পর্কিত সুপারিশ মাণ্ডলিক পালকীয় সেবাকাজকে গতিশীল করবে।

১. অভিবাসী সম্পর্কিত কিছু উপলব্ধি 
১.১ আন্তর্জাতিক অভিবাসী ও শরণার্থী জনগোষ্ঠী: কর্মশালায় আমরা জেনেছি কুতুপালং ক্যাম্প, উখিয়া, কক্সবাজারে অবস্থানরত মিয়ানমার সেনাবহিনী কর্তৃক বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশা ও তাদের সংগ্রাম ও বেঁচে থাকার লড়াই। পূর্বে এবং বর্তমানে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ এবং প্রতি বছর বৃদ্ধির হার প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজারের কাছাকাছি।  তা ছাড়াও আমাদের দেশে পূর্বে বিহারী ও তেলেগু লোকজন পাকিস্থান ও ভারত থেকে এসে বসবাস করছে। অভিবাসী ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী তাদের আদিনিবাস ছেড়ে চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌছানোর যাত্রাপথে ও গন্তব্যে পৌছানোর পর অমানবিক দুর্দশা ও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে থাকে। তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ও পারিবারিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। 

১.২ দেশের অভ্যন্তরে অভিবাসী জনগণ: বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অভিবাসী জনগোষ্ঠী যারা প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ যেমন-বন্যা, নদীভাঙ্গন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জলবায়ু পরিবর্তনসহ কর্মসংস্থান, শিক্ষা গ্রহণ, আবাদযোগ্য জমির অপ্রাপ্যতা, মাটি ও পানির লবনাক্ততা বৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদন হ্রাসসহ বিভিন্ন কারণে তাদের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হচ্ছে। তাছাড়া প্রভাবশালীদের কর্তৃক বলপূর্বক ভূমি দখল, সরকারী উন্নয়ন প্রকল্পে আদিবাসীদের উচ্ছেদকরণ, বিভাগীয় শহরে কর্মসংস্থানের কম সুযোগ, উচ্চ পড়াশুনা, নেশাগ্রস্থ গৃহত্যাগ, উন্নত জীবনমানের জন্য শহরে আগমন ইত্যাদি। আমাদের কর্মজীবি অনেক লোক কাজের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অক্লাত পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করছে।

১.৩ অভিবাসনের ঝুঁকিসমূহ: অপরিকল্পিত অভিবাসী, চাকুরীতে অস্থিরতা, অদক্ষ শ্রমিক, সামাজিক বন্ধন ও শৃঙ্খলা দুর্বল, পারিবারিক বন্ধন দুর্বল, বিবাহ বিচ্ছেদ, মিশ্র বিবাহের কারণে আদিবাসী মেয়েরা ভূমি হারাচ্ছে, অভিবাসীদের সম্পর্কে কম তথ্যভান্ডার, পালকীয় সেবাযত্ন কম, মহিলা ও কিশোর-কিশোরীরা বেশী ঝুঁকিপূর্ণ, যুবকদের সাথে দুরত্ব বৃদ্ধি, মানবাধিকর লঙ্ঘন, আইনী সাহায়তা বঞ্চিত, খ্রিস্টিয় মূল্যবোধের ঘাটতি, কৃষ্টি-সস্কৃতি ঝুঁকি রয়েছে, শিকড়বিহীন হওয়া এবং এককবাদী হয়ে পড়ছে। অভ্যন্তরীন অভিবাসী জনগোষ্ঠীর নিরাপদ আবাসন সমস্যা, স্বল্প ও নিম্ন আয়ের কর্মজীবিদের দীর্ঘ কর্মঘন্টা, অসুস্থতায় ছুটি না পাওয়া, অন্যায্য মজুরী, কর্মজীবি বাবা-মায়ের সন্তানের সুরক্ষার অভাব, মাদকাসক্তি, বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্কের দূরত্ব, সর্বোপরি নতুন ‘বসতি সমাজ’ ব্যবস্থা, দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার অনবরত চাপ তারা অনুভব করে।  এসব কিছু মিলিয়ে নতুন গন্তব্যে অভিবাসীদের জীবন যাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে।  

১.৪ স্থায়ী নিবাসী ও গ্রহণকারী জনগণের মনোভাব: বিপরীত দিকে অভিবাসীদের প্রতি স্থায়ী নিবাসী ও গ্রহণকারী জনগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে ঘাটতি রয়েছে এবং প্রতিবেশী সুলভ আচরণ করতে এবং তাদের বিপদ-আপদে সহায়তার হাত বাড়াতে আমরা কুণ্ঠিত বোধ করি। ফলে বৃহত্তর সমাজের অংশ হতে তাদের দীর্ঘ সময় লেগে যায়, অথবা তারা বৃহত্তর সমাজের অংশ হতে পারেন না।

২. পালকীয় সেবাকাজে করণীয় কিছু সুপারিশ
২.১ অভিবাসী যত্নে সমন্বিত উদ্যোগ: আমরা দেখেছি জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক কারিতাস পরিবারের সহায়তায় বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী ও এর সমাজ উন্নয়নমূলক সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশ, সামাজিক সংগঠন, সংঘ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কীভাবে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা অভিবাসী ও বাস্তুচ্যুতদের সমস্যা ও প্রয়োজনগুলো উপলব্ধি করব, প্রতিবেশী হিসেবে তাদের গ্রহণ করব, তাদের ভালবাসব ও তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করব। যারা আমাদের পক্ষে অভিবাসী ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর যত্ন করছে সেসব সেবাকর্মীদের আধ্যাত্মিক ও মানসিক সেবা নেয় মাণ্ডলীর একটি পালকী দায়িত্ব। মাণ্ডলী যদি সেবাকর্মীদের সঠিক যত্ন নেয় তবে তারাও অভিবাসীদের সঠিক যত্ন নিতে সক্ষম থাকবে। অভিবাসী, বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী ও তাদের যারা যত্ন করছে তাদের জন্য নিয়মিত প্রার্থনা ও ঐশ অনুগ্রহ চেয়ে পিতা ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করা প্রয়োজন।

২.২ মাণ্ডলিক কিছু কর্ম-পরিকল্পনা: কর্মশালায় দলীয় ও উম্মুক্ত আলোচনার কিছু সার-সংক্ষেপ উল্লেখ করা হল যেন নিজ নিজ ডাইওসিস, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, কমিশন ও ধর্মপল্লীতে পদক্ষেপ নিতে পারে। অভিবাসী, শরণার্থী, বাস্তুচ্যুক জনগোষ্ঠী, অভ্যন্তরীণ অভিবাসী ও পাচারে শিকার মানুষদের সম্পর্কে মৌলিক ধারণা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন পর্যায় (ডাইওসিস, ধর্মপল্লী, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন) সচেতনতা সেমিনার, কর্মশালা ও শিক্ষ-প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যে সকল অঞ্চল, শহর, ডাইওসিস ও ধর্মপল্লীতে অভিবাসী জনগণের আগমন ঘঠছে সেখানে পালকীয় সেবা গতিশীল রাখা।  সেবাকাজ বিস্তারের জন্য অভিবাসী ডেস্ক স্থাপন, পালকী সেবা কেন্দ্র স্থাপন, শিল্প নগরী বা অঞ্চলসমূহে খ্রিস্টযাগের ব্যবস্থা করা, বিশেষ সেবাকর্মী নিয়োগ, আইনী ও মানবাধিকার বিষয়ক সেবা বিস্তার করা, তথ্য সংগ্রহ করা, পাচারে শিকার জনগণকে সুরক্ষা দেয়া, কর্মজীতি যুবক-যুবতীদের জন্য হোস্টেল ব্যবস্থা করা, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও সেমিনারের ব্যবস্থা, কৃষিকাজে উৎসাহ প্রদান, দক্ষ শ্রমিক তৈরির পদক্ষেপ গ্রহণ, কাথলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খ্রিস্টান ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার সুবিধা প্রদান ও অভিবাসী জনগণদের মাণ্ডলিক জীবনে অংশগ্রহণের বিষয় ভাবতে হবে।

স্থায়ী নিবাসী ও অভিবাসী সবাইকে নিয়েই আমাদের সমাজ।  আমরা স্থায়ী নিবাসী ও গ্রহণকারী সমাজ  অনেকের জীবন পরিক্রমা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, আমাদের পূর্বপুরুষরাও কোন না কোন সময় অভিবাসী ছিলেন এবং তারাও বিভিন্ন সময়ে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে এবং তা মোকাবেলা করেছেন। আমাদের সম্মিলিত এই জীবনবোধ থেকেই অভিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে আরো  যত্শল হতে পারব। আমাদের পূর্বপুরুষ আব্রাহামও পিতা ঈশ্বরের নির্দেশে মিশরে গমন করেছিলেন। নাজারেথের পবিত্র পরিবারের সাথে স্বয়ং যিশু খ্রিস্টও অভিবাসী হিসেবে যাত্রা করেছেন। ঐশবাণীতে আলোকিত হয়ে অভিবাসনের চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে নিবিড় সমন্বয় ও কার্যকরী সাড়াদানের ক্ষেত্রে আমরা পুণ্য পিতা পোপ ফ্রান্সিসের চারটি করণীয় নির্দেশনা অন্তরে রাখি-স্বাগত জানানো, সুরক্ষা দেয়া, সংবর্ধিত করা ও সংযুক্ত করা। আমাদের প্রতিদিনকার প্রার্থনায়  দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত অভিবাসীদের স্মরণ করি।  

রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

অভিবাসী ও শরণার্থী দিবস উপলক্ষে- ঘোষণা পত্র



মানবজাতির প্রতি প্রভু যিশু খ্রিস্টের ভালবাসার শিক্ষা ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বজনীন কাথলিক মÐলীর সাথে একাত্মতায় গত ৮-১০ আগস্ট, ২০১৯ খ্রিস্টবর্ষে “National Pastoral Workshop on Migration – 2019” শিরোনামে অভিবাসী, শরণার্থী, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী, মানবপাচার ও জলবায়ু বিষয়ক একটি কর্মশালা কাথলিক বিশপ সম্মিলনী’র ন্যায় ও শান্তি কমিশন এর উদ্যোগে এবং Migrants & Refugees Section, DPIHD, Holy See, Vatican City'র সহযোগিতায় আয়োজিত হয়। সভায় বাংলাদেশ কাথলিক মণ্ডলীর আটটি ডাইওসিস থেকে মহামান্য কার্ডিনাল মহোদয়সহ শ্রদ্ধাভাজন আর্চবিশপ মহোদয়, বিশপগণ, পুরোহিত, ধর্মসংঘের প্রতিনিধি, যুবক-যুবতী, সেমিনারীয়ান, পেশাজীবি, কাথলিক গণমাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিবর্গ, সমাজকর্মীসহ ৮৫ জন অংশগ্রহণকারী নিমন্ত্রিত ছিলেন। কর্মশালার উদ্দেশ্য ছিল- অভিবাসী ও শরণার্থী বিষয়ক সেবাকাজের অভিজ্ঞতা সহভাগিতার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি, সমন্বিত ( ডাইওসিস,কমিশন, স্কুল, প্রতিষ্ঠান, ওয়ার্ল্ড ভিশন, কারিতাস এবং অন্যান্য সংগঠন) উদ্যোগ গ্রহণ, কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে মণ্ডলীতে পালকীয় যত্ন আরো বেগবান করা। কর্মশালাটি সিবিসিবি সেন্টার, ২৪/সি আসাদ এভিনিউ, মোহম্মদপুর, ঢাকায় আয়োজন করা হয়। কর্মশালার মূলভাব  “এশীয় প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে বাংলাদেশে অভিবাসী, শরণার্থী, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী, মানবপাচার ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রেক্ষাপট ও স্থানীয় খ্রিস্টমণ্ডলীর ভূমিকা”। এতে সম্মিলিতভাবে প্রার্থনা, খ্রিস্টযাগ, আলোচনা ও দলগত কর্ম-পরিকল্পনা প্রস্তুতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালাটি বিগত ১১-১৭ ফেব্রæয়ারী ২০১৯ খ্রিস্টবর্ষে কক্সবাজার, বাংলাদেশে এশিয়ার প্রেক্ষাপটে অভিবাসী, শরণার্থী ও মানবপাচার ও নবায়নযোগ্য জ্বালানী বিষয়ক সেমিনার-এর পরবর্তী ধাপ; যা এশীয় বিশপ সম্মিলনী’র ফেডারেশন অব এশিয়ান বিশপ কনফারেন্স (FABC)  এর অন্তর্ভুক্ত মানব উন্নয়ন অফিস (Office of Human Development, OHD), বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী’র শান্তি ও ন্যায্যতা কমিশন এবং এশিয়া প্যাসিফিক ন্যায্যতা ও শান্তি কর্মীদের নেটওয়ার্ক (APJPWN)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অভিবাসী ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী যারা প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ যেমন-বন্যা, নদীভাঙ্গন, ঝড়, জলোচ্ছ¡াস, জলবায়ু পরিবর্তনসহ কর্মসংস্থান, শিক্ষা গ্রহণ, আবাদযোগ্য জমির অপ্রাপ্যতা, মাটি ও পানির লবনাক্ততা বৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদন হ্রাসসহ বিভিন্ন কারণে তাদের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হচ্ছে। অভিবাসী ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী তাদের আদিনিবাস ছেড়ে চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছানোর যাত্রাপথে ও গন্তব্যে পৌঁছানোর পর যে অমানবিক দুর্দশা ও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সে বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ও পারিবারিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। বিপরীত দিকে গ্রহণকারী জনগোষ্ঠী হিসেবে অভিবাসীদের প্রতি আমাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে ঘাটতি রয়েছে এবং প্রতিবেশী সুলভ আচরণ করতে এবং তাদের বিপদ-আপদে সহায়তার হাত বাড়াতে আমরা কুণ্ঠাবোধ করি, যা মানুষ হিসেবে তাদের প্রাপ্য সম্মান ও ভালোবাসার ক্ষেত্রে দুরত্ব সৃষ্টি করে। 

যিশু যেমন বলেছেন, “তুমি তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতই ভালবাসবে।” যিশুর অনুসারী হিসেবে আমাদেরকেও সকল প্রতিবেশীর প্রতি মনোযোগী ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়নের ইতিহাসে দেখা যায় যে, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের দেশ আজ দরিদ্রতম দেশ থেকে মাঝারি আয়ের দেশের উপনিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৫ বছরের মধ্যে এমন যুগান্তকারী রূপান্তর সম্ভব হয়েছে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণ এবং দেশ গড়ার প্রেরণা এবং সংহতিবোধ থেকে। আমাদের সম্মিলিত এই জীবনবোধ থেকেই দেশের অভ্যন্তরীণ অভিবাসী ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও মানবাধিকার সম্পর্কে আরো  যত্নশীল হতে হবে। শুধু তাই-ই নয়, কর্মশালায় আমরা আরো জেনেছি কুতুপালং ক্যাম্প, উখিয়া, কক্সবাজারে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশা ও তাদের সংগ্রাম। আমরা দেখেছি জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক কারিতাস পরিবারের সহায়তায় বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী ও এর সমাজ উন্নয়নমূলক সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশ, সামাজিক সংগঠন, সংঘ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কীভাবে তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
  
অভ্যন্তরীণ অভিবাসী জনগোষ্ঠীর নিরাপদ আবাসন সমস্যা, স্বল্প ও নিম্ন আয়ের কর্মজীবিদের দীর্ঘ কর্মঘন্টা, অসুস্থতায় ছুটি না পাওয়া, অন্যায্য মজুরী, কর্মজীবি বাবা-মায়ের সন্তানের সুরক্ষার অভাব, মাদকাসক্তি, অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্কের দুরত্ব, সর্বোপরি নতুন ‘বসতি সমাজ’ ব্যবস্থা, দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার অনবরত চাপ তারা অনুভব করে। এসব কিছু মিলিয়ে নতুন গন্তব্যে অভিবাসীদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অভিবাসীরা তাদের গন্তব্যে পরিচিতজনদের সাথে বা নিজ এলাকার লোকদের সাথে সম্পর্কের ভিত্তি প্রস্তুত করে। তথাপি গন্তব্য স্থানের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান বা সামাজিক নেটওয়ার্ক তাতে অভিবাসীদের প্রবেশ খুব সীমিত। ফলে, বৃহত্তর সমাজের অংশ হতে তাদের দীর্ঘ সময় লেগে যায়, অথবা তারা বৃহত্তর সমাজের অংশ হতে পারেন না।

আমরা প্রত্যয় করি যে, স্থায়ী নিবাসী ও অভিবাসী সবাইকে নিয়েই আমাদের সমাজ। যারা স্থায়ী নিবাসী তাদের জীবন পরিক্রমা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, তাদের পূর্বপুরুষরাও কোন না কোন সময় অভিবাসী ছিলেন এবং তারাও বিভিন্ন সময় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন ও তা মোকাবেলা করেছেন। আমাদের পূর্বপুরুষ আব্রাহামও পিতা ঈশ্বরের নির্দেশে মিশরে গমন করেছিলেন। নাজারেথের পবিত্র পরিবার সাথে স্বয়ং যিশু খ্রিস্টও অভিবাসী পরিবারের সদস্য। আদিপুস্তক ও মঙ্গলবাণীর বিশ্বাসের আলোকে আমরা পুন্যপিতা পোপ ফ্রান্সিসের চারটি করণীয় নির্দেশনা স্মরণ করি। সমসাময়িক কালের অভিবাসনের চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে নিবিড় সমন্বয় ও কার্যকরী সাড়াদানের ক্ষেত্রে এ চারটি করণীয় হল-স্বাগত জানানো, সুরক্ষা দেয়া, সংবর্ধিত করা ও সংযুক্ত করা। পোপ মহোদয় আমাদের স্মরণে রাখতে বলেছেন, “তোমরা নিশ্চিত হতে পারো যে, সকল কর্মের পেছনে যে শ্রম, তাতে অবশ্যই মণ্ডলীর অংশগ্রহণ আছে।” (Pope Francis, Address to Participants in the International Forum on Migration and Peace, 21 February 2017)

আমরা অঙ্গীকার করছি যে, খ্রিস্টমণ্ডলী হিসেবে প্রভু যিশুখ্রিস্টের শিক্ষা অনুসরণ করে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব। আমরা অভিবাসী ও বাস্তুচ্যুতদের সমস্যা ও প্রয়োজনগুলো উপলব্ধি করব, প্রতিবেশী হিসেবে তাদের গ্রহণ করব, তাদের ভালবাসব ও তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করব। ঈশ্বরের সৃষ্টির সেরা হিসেবে আমরা আমাদের হৃদয় ও মনকে পিতা পরমেশ্বরের ভালবাসায় পূর্ণ করি ও সেই ভালবাসা সমাজের সকলের মাঝে বিস্তার করি।

সংহতিতে,
বিশপ জের্ভাস রোজারিও, ডিডি
সভাপতি
শান্তি ও ন্যায্যতা কমিশন, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী, ঢাকা।
বিশপ, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ
তারিখ: ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ খ্রিস্টবর্ষ

ড. ফা. লিটন হিউবার্ট গমেজ, সিএসসি
সেক্রেটারি
শান্তি ও ন্যায্যতা কমিশন, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী, ঢাকা।
বিশপ, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ
তারিখ: ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ খ্রিস্টবর্ষ