বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২১

লাউদাতো সি অ্যাকশন প্লাটফর্ম এর ঘোষণাপত্র

 প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষার্থে ‍"লাউদাতো সি অ্যাকশন প্লাটফর্ম" এ সক্রিয় হওয়ার আহ্বানে বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর ন্যায় ও শান্তি কমিশনের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র ২০২১ খ্রিস্টাব্দ 

জগতের আর্তনাদ, দরিদ্রদের আর্তনাদ

বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর ন্যায় ও শান্তি কমিশনের ঘোষণাপত্রটি গভীরভাবে অনুভব করছে- জগতের আর্তনাদ ও দরিদ্রদের আর্তনাদ যা নিশ্চিত করে যে, "আমােেদর সকল মানুষের হৃদয়, মন এবং আচরণে ব্যাপক  পরিবর্তন দরকার"। এতে ধর্মগ্রন্থ, ধর্মতাত্ত্বিক ঐতিহ্য, কাথলিক মণ্ডলীর সামাজিক শিক্ষা, জগতের প্রজ্ঞা এবং কোন দেশের প্রথম অধিবাসীদের জীবনধারা অনুধাবন করা হয়েছে। ঘোষনাপত্রটি ঐশতত্ত্বের অন্তর্নিহিত শিক্ষার উপর প্রতিষ্ঠিত এবং সুবিধাবঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া ক্ষতিগ্রস্থ আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগণের প্রতি সাড়া দিয়ে সৃষ্টির যত্ন নেওয়ার প্রচেষ্টাকে অনুপ্রাণিত করছে। ঘোষণাপত্রটি ত্রি-ব্যক্তি পরমেশ্বরের সৃষ্টির রহস্য অনুধান; সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর পবিত্রতা; মননশীল দৃষ্টিতে সৃষ্টির বিস্ময় ও সৌন্দর্য উপলব্ধি এবং জীবনের রূপান্তর ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের প্রয়োজন অনুভব করছে। 

ঘোষণাপত্রটিতে ন্যায় ও শান্তি কমিশন বাংলাদেশ বিশপ সম্মিলনীর পক্ষে বাংলাদেশের সকল খ্রিস্টভক্তজনগণকে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস -এর আমন্ত্রণ গ্রহণ করে 'লাউদাতো সি' পত্রটির মৌলিক সাতটি লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়ে সমন্বিত পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নের দিকে আগামী সাত বছর "লাউদাতো সি অ্যাকশন প্লাটফর্ম" (২০২১ থেকে ২০২৭ খ্রিস্টাব্দ) যাত্রায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। 'লাউদাতো সি' পত্রটির সাতটি লক্ষ্যসমূহ হল- (১) জগতের আর্তনাদে সাড়াদান, (২) দীনদরিদ্রদের আর্তনাদে সাড়াদান, (৩) পরিবেশগত অর্থনীতি বিস্তার, (৪) টেকসই সহজ-সরল জীবনধারা গ্রহণ, (৫) পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক শিক্ষা, (৬) পরিবেশ সংরক্ষণ উদ্দীপ্ত আধ্যাত্মিকতা অনুশীলন এবং (৭)  সমাজকে সম্পৃক্তকরণ ও অংশগ্রহণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ। সস্প্রতি পোপ মহোদয় বলেছেন- 'লাউদাতো সি’ শুধু সবুজ প্রৈরিতিক পত্র নয়, বরং একটি সামাজিক প্রৈরিতিক পত্রও।'

লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভাটিকানের 'মানব উন্নয়ন' নামক পুণ্য দপ্তরের নির্দেশনায় গোটা মÐলীকে সাতটি কর্মক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে- (১) পরিবার, (২) ধর্মপল্লী, (৩) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, (৪) সংগঠন ও ক্লাব, (৫) সামাজিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, (৬) হাসপাতাল এবং (৭) ধর্মসংঘসমূহ ইত্যাদি। এই নির্দেশনা দেশের প্রথম আধিবাসীদের জীবনধারা অনুধাবন করতে; জগতের আর্তনাদ ও দরিদ্রের আর্তনাদে ঐশতাত্ত্বিক ভিত্তি অনুধাবন করতে; এবং 'লাউদাতো সি'র লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মৌলিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করছে। সুতরাং বিগত দিন ধরে আমরা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ আমাদের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে সমন্বিত পরিবেশের যে ক্ষতি করেছি, তা পুনরুদ্ধারের জন্য আগামী সাত বছর ধরে অবিরত কর্মসূচি গ্রহণ করবো। 

ঘোষণাপত্রটিতে ন্যায় ও শান্তি কমিশন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয় সুপারিশ করছে- প্রথমতঃ আমাদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা মানব পরিবার ও আমাদের অভিন্ন বসতবাটির যে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করেছি তা অকপটে স্বীকার করে অকৃতিম অনুতাপ ও মরপরিবর্তন একান্ত প্রয়োজন; দ্বিতীয়তঃ প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় ছোটখাট আদান-প্রদানের গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশ-সংক্রান্ত বাস্তবতার অবনতি রোধকল্পে বৃহত্তর কর্মপন্থা আবিষ্কার করা যেখানে সমাজের প্রচলিত 'ছুঁড়ে ফেলার সংস্কৃতির' পরিবর্তে 'যত্নবান হওয়ার সংস্কৃতির' দিকে যাত্রা করতে হবে। 'একজন খ্রিস্টভক্ত, একটি বৃক্ষরোপণ' উদ্যোগটি ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে, বর্তমানে কার্বন নিঃসরণ কমানো উদ্যোগটি গ্রহণ বাস্তবসম্মত। একটি ইতিবাচক মনোভাব অন্তরে নিয়ে 'ভালবাসার সভ্যতাকে' আর্দশ করে- সবাই ভাইবোন মনোভাব লালন, সহজ-সরল জীবনধারা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ, পরিবেশ সংরক্ষণ উদ্দীপ্ত উপাসনা, ক্রেডিট ইউনিয়নসমূহে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আদিবনভূমি সংরক্ষণ, আদিবাসীদের ভূমি অধিকার সংরক্ষণ, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, পরিমিত পরিবেশন ও ভোগ, অপচয়রোধ, ঋণ পরিশোধ, জৈবসুরক্ষা, বাগান করা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রয়োজন মাফিক কেনাকাটা, প্লাস্টিক ব্যবহার হ্রাস, পলিথিন বর্জন, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ পরিমিত ব্যবহার, সকল প্রকার দুষণ হ্রাস, পাট ও মোটা কাপড়ের ব্যাগ প্রচলন, শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রী ও ধর্মীয় শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা সেমিনার বিস্তার, প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক পুস্তিকা প্রস্তুত, পুনরায় ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র ব্যবহার, ক্ষুদ্র সমাজভিত্তিক কর্মপরিল্পনা গ্রহণ, জলবায়ু বিপর্যয়ে বাস্তুচ্যুত অভিবাসী-শরণার্থীদের গ্রহণ, মানবপাচারের শিকার ঝুঁকিপূর্ণ মানুষজনের প্রতি মনোযোগ, নৈতিক বিনিয়োগ ও নবীকরণযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ এবং লাউদাতো সি নেটওয়ার্কে যোগদান ইত্যাদি।

প্রথম বছর (২০২১ খ্রিস্টাব্দ) নিজ নিজ অবস্থানে পরিকল্পনা গ্রহণের কাল, দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ বছর (২০২২ থেকে ২০২৬ খ্রিস্টাব্দ) হল কর্মসম্পাদন কাল এবং সপ্তম বছর (২০২৭ খ্রিস্টাব্দ) হবে সৃষ্টি উদ্যাপন কাল। জগতের আর্তনাদ ও দরিদ্রের আর্তনাদ সাড়াদানের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনাসমূহ আমাদের সামনে মোট সাত বছরের যাত্রা জুড়ে একটি কার্যকর শক্তি ও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে। আপনার ও আপনাদের প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকার অগ্রগতিসাধনের 'লাউদাতো সি'র লক্ষ্যভিত্তিক মৌলিক কার্যকর পদক্ষেপসমূহ ব্যাপকভাবে প্রশংসা করা হবে। পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিসের আহ্বানে  "লাউদাতো সি অ্যাকশন প্লাটফর্ম" পালন সফল হউক, সার্থক হউক।


ফা. লিটন হিউবার্ট গমেজ, সিএসসি

           সেক্রেটারি

এবং বিশপ জের্ভাস রোজারিও ডিডি

           সভাপতি

ন্যায় ও শান্তি কমিশন, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী