সোমবার, ৭ জুন, ২০২১

আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষার্থে আমাদের আচরণবিধি

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৭২ সালে ৫ জুন এ দিনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তবে  ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতিবছর দিনটি পালিত হয়ে আসছে। চলতি বছর দিবসটি উদযাপনের  বিষয়বস্তু ধরিত্রীর বাস্তুতন্ত্র অর্থাৎ প্রকৃতি-পরিবেশ ‘পুুনর্মূল্যায়ন, পুনগঠন, পুনরুদ্ধার’ (Reimagine, Recreate, Restore) করা। তবে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের পরিবেশ দিবসটির আরেকটি গুরুত্ব আছে- আজ থেকে জাতিসংঘের বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার দশকও (২০২১-২০৩০) শুরু হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ, এত দিন ধরে আমরা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ আমাদের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে সমন্বিত পরিবেশের যে ক্ষতি করেছি, তা পুনরুদ্ধারের জন্য বিশ্বের সব কটি রাষ্ট্র আগামী এক দশক ধরে চেষ্টা করবে। 

পরিবেশ সুরক্ষার্থে ভাটিকানের ‘মানব উন্নয়ন’ নামক পুণ্য দপ্তর পুুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস এর আহ্বানকে সফলতা দান করতে আগামী ৭ বছর সময়কে "লাউদাতো সি কর্মসূচি প্লাটফর্ম" ঘোষণা করেছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে, পরিবার, ধর্মপল্লী, পালকীয় সেবা কমিশনসমূহ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোস্টেল, সেমিনারী, ব্রাদার হাউজ, সিস্টারদের কনভেন্ট, সংগঠন, ক্রেডিট ইউনিয়ন, প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং দলগতভাবে নিজেদের কিছু সুনির্দিষ্ট ও লিখিত অঙ্গীকার ও কার্যক্রম গ্রহণ করতে আহ্বান করেছেন। তবে আমাদের প্রত্যেকজনকে জানা দরকার, আমাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্র বা প্রকৃতি-পরিবেশ কেমন আছে? আর কী করলে এর পুনরুদ্ধার সম্ভব? আমার দায়িত্বটা কীভাবে আমি পালন করতে পারি। আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষার্থে পোপ ফ্রান্সিস এর সর্বজনীন পত্র ‘লাউদাতো সি’ এর অনুপ্রেরণায় করণীয় কিছু উপলব্ধি ও কিছু সুপারিশ এখানে প্রদান করা হল যা নিজেদের জন্য একটি "অভিন্ন বসতবাটি সুরক্ষা আচরণবিধি" তৈরি করতে সহায়তা করবে। 

১. নিজের বেদনাদায়ক কষ্ট অনুভব- অন্তরে গভীরভাবে উপলব্ধি করি আবর্জনা এখানে-সেখানে ছুড়ে ফেলে অপরিচ্ছন্ন-অস্বাস্থ্যকর নর্দমা তৈরি করেছি; গাছ কেটেছি কিন্তু রোপনে অবহেলা করে পরিবেশে ভারসাম্য নষ্ট করেছি; স্বার্থপরতা ও অতিভোগের কারণে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ করে ফেলেছি; প্রতিনিয়ত প্রচুর পানি অপচয় করছি, খাল ও নদীর জল বিষাক্ত করে ফেলেছি; এভাবে প্রকৃতি ও প্রতিবেশীদের প্রতি অনেক ক্ষতি  ইতোমধ্যে করেছি। এসব স্মরণ করে অনুতপ্ত হই ও মন-পরিবর্তন করি  এবং প্রকৃতি ও  প্রতিবেশীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে অঙ্গীকার করে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস এর সাথে আধ্যাত্মিকভাবে একাত্ম থাকি। 

২. সৃষ্টির মঙ্গলবার্তা বিশ্বাস- আমাদের আশা হল- ঈশ্বর, যিনি শূণ্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তিনি পৃথিবীতেও হস্তক্ষেপ করতে পারেন এবং সব ধরনের অমঙ্গলকে পরাস্ত করতে পারেন। তিনি আমার, আপনার সহযোগিতায় তা করতে চান। আজ থেকেই আমার ও আপনার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদক্ষেপে বড় কিছু অর্জন সম্ভব, কেননা আমরা জানি যে পরিবর্তন সম্ভব; এই বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করা;

৩. সৃষ্টি-কেন্দ্রিক উপাসনা প্রস্তুত- যারা পরিবেশ সংরক্ষণ ও বাস্তব্যবিদ্যা গবেষণা করেন তাদের প্রতিপালক আসিসির সাধু ফ্রান্সিস এর মধ্যস্থতায় প্রার্থনা করতে পারি; সৃষ্টি-কেন্দ্রিক বা লাউদাতো সি উপাসনা উদযাপনকে উৎসাহিত করতে পারি এবং পরিবেশগত ধর্মশিক্ষা, প্রার্থনা, নির্জনধ্যান ও মানব গঠন কার্যক্রম আয়োজন করা যায়; 

৪. পরিবারের যত্ন- আমি যেখানে বসবাস করছি সেটা একটি পরিবার; আমাদের পরিবার হল সৃষ্টি ও প্রকৃতির একটি অংশ; পরিবারের আরো বেশী যত্ন নিব। খাবারের সময়, অবসর সময়ে অথবা বিনোদনের সময়ে প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং দীনদরিদ্রদের অবস্থা নিয়ে সহভাগিতা করা; প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং গরীবদের জন্য ভাল কিছু উদ্যোগ নিতে সন্তানদের উৎসাহিত করা যায়;

৫. তিনটি ‘পি’ (three P’s)- ‘লাউদাতো সি’ পত্রটির নিবিড় সমন্বয় ও কার্যকরী সাড়াদানের ক্ষেত্রে তিনটি ‘পি’ (three P’s) অনুধ্যানে করণীয়সমূহ স্মরণ করতে পারি- plant বা গাছ-গাছড়া লাগানো, protect বা রক্ষণাবেক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও promote বা সংবর্ধিত করা অর্থাৎ ‘লাউদাতো সি’র মাণ্ডলিক শিক্ষা সকলের নিকট প্রকাশ ও প্রচার করা;

৬. পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা- নিজের দেহ থেকে শুরু করে জামাকাপড়, ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট, কর্মস্থল, সমাবেশস্থল, প্রভৃতির পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা; সন্তানদেরও অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করবো। বাড়ির চারিপাশের প্লাস্টিক, নর্দমা ও আবর্জনা পরিস্কার করতে উদ্যোগ গ্রহণ ও নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করা বা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা যায়;

৭. অপচয়রোধ ও ঋণ পরিশোধ- প্রয়োজন মাফিক কেনাকাটা, পরিমিত রান্না করা; প্রয়োজন অতিরিক্ত খরচপাতি, জিনিসপত্র ও দ্রব্যসামগ্রীর অপব্যবহার, ভোজনবিলাস ও অতি ভোগের মানসিকতা বর্জন করা; বাড়িতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিভিশন, এসি, পানির কল, বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহারের পর বন্ধ রাখাতে সর্বদা সচেতন থাকব। ক্রেডিট ইউনিয়নসহ সকল প্রকার ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা; ঋণ গ্রহণ করে বিনোদন বা উৎসব আয়োজন থেকে বিরত থাকা;

৮. স্বাস্থ্যসম্মত খাবার- শাকসবজি, ফুল ও ফলের বাগান করা এবং খাবার হিসেবে ব্যবহার করা। প্রকৃতিজাত, বিশুদ্ধ ও সুষম খাদ্য আহার ও পানীয় পান করা; মাংস গ্রহণ পরিমিত করা, পরিমিত পরিবেশন ও পরিমিত ভোগ, দেশীয় পণ্য ব্যবহার করার মনোভাব তৈরি করা; 

৯. বাগান ও জৈবসার- রান্নাঘরের অবশিষ্টাংশ, পাতা-লতা ও আবর্জনাগুলি মিশ্রিত করে উত্তম সার তৈরি করা যায় এবং এসব গাছের বৃদ্ধিতে আরও ভাল সার হিসেবে সহায়তা করে। গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা শহরে বাসাবাড়িতে টবে বারান্দায় বা ছাদে অথবা জানালার পাশে অথবা কর্মস্থলে শাক-সবজি-ফুল বাগান তৈরি করা ও নির্ধারিত গাছ, শাক-সবজি বা ফুলগাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সন্তানদের দায়িত্ব বন্টন করা; 

১০. দূষণমুক্ত পরিবেশ- শব্দ, বায়ূ, জল এবং সকল প্রকার দূষণমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা; গণপরিবহন ব্যবহার করা এবং পরিবহনের দূষণকারী কর্মক্রিয়া পরিত্যাগ করতে হবে; 

১১. পানি অপচয়রোধ- যারা পানীয় জলের চরম সংকটে আছে তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা  স্নানে পরিমিত পানি ব্যবহার বা আগের চেয়ে একটু কম পানি ব্যবহার করা, হাতমুখ ধোয়ার সময় কলের পানি নষ্ট না করি, যতটুকু পান করতে চাই ততটুকু পানি গ্লাসে ঢেলে পান করতে পারি। আমাদের এমন ক্ষুদ্র ক্ষ্রদ্র অভ্যাস পানি অপচয় অনেক হ্রাস করবে; 

১২. প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতনতা- আমরা এমুহূর্তে প্লাস্টিক ব্যবহার সম্পূর্ণ বাদ দিতে পারছি না তাই সঠিকভাবে ব্যবহার ও প্লাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পলিথিন ব্যাগ একেবারেই বাদ দিতে হবে কারণ এর ক্ষতির ধরন বহুমাত্রিক এবং বাড়ছে- মাটি নষ্ট করে জমিতে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট করছে, শহরে নর্দমা বের হওয়ার পথ বন্ধ করে ব্যাপক ক্ষতি করছে এবং আগুনে দিলে গ্যাস হয়ে বায়ুদূষণ করে মানবদেহের সংঘাতিক ক্ষতি করবে; 

১৩. কাপড় ও পাটের ব্যাগ ব্যবহার- পাটের তৈরি চটের ব্যাগ অথবা ভারী ও শক্ত কাপড় পুনঃব্যহার করে ব্যাগ তৈরি করে বাজারে বা বাড়ির নিত্য প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়;

১৪. পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা- লাউদাতো সি পত্রটির অনুপ্রেরণায় সমন্বিত পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক শিক্ষা বিস্তার করা সম্ভব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ডাইয়োসিস, ধর্মপল্লী, ক্লাব, সংগঠন, ক্রেডিট ইউনিয়ন, পরিবারে, যোগাযোগ মাধ্যমে, ধর্মশিক্ষাদানে ও অন্যত্র। পরিবেশগত সচেতনতা এবং কর্মকাণ্ড তৈরি লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে পরিবেশগত চেতনায়নমূলক শিক্ষা পাঠ্যক্রম প্রস্তুত করতে পারে; 

১৫. পরিবেশ বিষয়ক বই ও পত্রিকা পড়া- ব্যক্তিগতভাবে এবছর পরিবেশ বিষয়ক একটি বই পড়ার অঙ্গীকার করা; প্রকৃতি ও পরিবেশ সংক্রান্ত পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের গ্রাহক হয়ে পাঠ করা; লাউদাতো সি বিষয়ক একটি শিক্ষা সেমিনারে অংশগ্রহণ করা; যা যা নতুন শুনছি তার কিছু অংশ মনে রাখতে চেষ্টা করা। আমরা যা শুনি তার মাত্র ১০ শতকরা এক বছর পর মনে রাখতে পারি। আগ্রহ অটুট থাকলে মনে রাখার শতকরা হারও বাড়বে;

১৬. অভিজ্ঞ সহায়ক নিমন্ত্রণ- নিজেদের সংঘের, বা প্রতিষ্ঠানের সেবাগ্রহণকারী অংশীজনের সাথে আপনার শিক্ষণ সহভাগিতার ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজনে আপনাকে সহায়তা করতে বাইরে থেকে অভিজ্ঞ সহায়ক বা বক্তা ডেকে আনুন;

১৭. নিজে জানুন ও অন্যকে জানান- আমাদের দেশে পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে সরকার কাজ করছে, দেশী সংস্থা কাজ করছে, বিদেশী সংস্থা কাজ করছে। তাদের কাজ সম্পর্কে জানা ও অপরকে জানানো, তাদের কাজে সহযোগিতা করা। প্রকৃতি ও পরিবেশ বা 'লাউদাতো সি' বিষয়ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জোটে (networking) যোগ দিন; নিজের চেষ্টায় পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ, ফলাফল ও প্রতিরোধ সম্পর্কে আরো বেশী করে জানুন। পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে মণ্ডলীর শিক্ষা কী, মহামান্য পোপ মহোদয় বার বার কী আহবান রাখছেন- তা জানুন;

১৮. একজনকে দায়িত্ব প্রদান- আপনার সংঘে বা প্রতিষ্ঠানে এমন একজনকে বাছাই করুন যে কী না আপনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আগামী বছর এই বিষয়ে নিজে আরো জানবেন, সংঘের বা প্রতিষ্ঠানের সকলকে জানাবেন ও বাইরে অন্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবেন; 

১৯. সহভাগিতা ও আলোচনা- আপনার যা যা নতুন শিক্ষণ (learning) তা তা আপনার সংঘের বা প্রতিষ্ঠানের ভেতরকার অংশীজনদের (stakeholders) জানান। যেসমস্ত চিঠি, দলিল, লেখা পাচ্ছেন তা সহভাগিতা করুন, তাদের কেন জানাচ্ছেন তা-ও ব্যাখ্যা করুন। আপনার প্রত্যাশা খুলে বলুন। কোনো নিয়মিত সভায় সকলের সাথে এই বিষয় আলাপ করতে ঘন্টাখানেক সময় বরাদ্দ রাখা যেতে পারে;

২০. কর্মস্থলে সচেতনতা- কর্মস্থলে প্রয়োজন ছাড়া কাগজে প্রিন্ট না করা, প্রয়োজনে কাগজের উভয় পৃষ্ঠায় প্রিন্ট করা এবং সুযোগ থাকলে কাগজ পুনঃব্যবহার করতে পারি; কম্পিউটার, প্রিন্টার ও অন্যান্য অফিস সরঞ্জামসমূহ ব্যবহারের পরে বন্ধ রাখব; দলীয়ভাবে গাড়ী ব্যবহার করার মাধ্যমে কার্বন ব্যবহার হ্রাস করতে পারি; 

২১. সৌহার্দ্যপূর্ণ কর্মপরিবেশ- কর্মস্থলে ‘ধন্যবাদ’ ও ‘স্বাগত’ এমন সৌজন্যসূচক শব্দ ব্যবহার, ইতিবাচক কথা বলা, ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার, নোংরা শব্দ পরিহার, সমালোচনামূলক কথা না বলা, বিচারকি কথা-বার্তা পরিহার কর্মপরিবেশ সুন্দর রাখে। অযাচিত চাটুকারিতার স্বভাব সম্পর্কে সতর্ক থাকা; কাজের সময় অযথা অন্যের নিকট বসে সময় নষ্ট না করা বরং তাকে কাজ করতে দেয়া এবং নিজে ভাল কাজ করা, কাজে সৃজনশীল চিন্তা করা, অবসর সময়ে উদ্দীপনামূলক লেখা পড়ে নতুন চিন্তা আহরণ করা; 

২২. সত্য মতকে সত্যরূপে গ্রহণ- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিত্তিহীন গুজব ও ‘মতের অরণ্য’ থেকে  বেরিয়ে এসে মূলধারার গণমাধ্যমের উপর নির্ভর করা যেন যথার্থ আনন্দ, গভীর তৃপ্তি, প্রকৃত সত্য আহরণ করা যায়;

২৩. ছুঁড়ে ফেলার সংস্কৃতি বর্জন- অর্থনীতি, উৎপাদন ও জিনিসপত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে- সংগ্রহ কর-চাহিদা পূরণ কর-ছুঁড়ে ফেলার (take-make-dispose) বর্তমানযুগে প্রচলিত উন্নয়নের মডেলের পরিবর্তে লাউদাতো সি'র অনুপ্রেরণা- পুনর্নবীকরণ-পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ-অন্যের সাথে সহভাগিতার (renew-remake-share) রূপান্তরশীল প্রক্রিয়া প্রচলন ও অনুুসরণ করা;

২৪. পবিত্র আহ্বান হিসেবে গ্রহণ- নিজের কল্যাণের কথা ভেবেই প্রকৃতি, পরিবেশ এবং প্রতিবেশীর সুরক্ষা সুসংবাদটি পবিবারের আপনজন ও বন্ধুবান্ধবদের জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই এটি পবিত্র একটি আহ্বান হিসেবে গ্রহণ করা যায়;

২৫. নিজের অংশগ্রহণটা অপরিহার্য- যদি ভাল কিছু করি তবে ‘আরো ভাল’ কিছু করতে চেষ্টা করি, যদি আরো ভাল কিছু করে ফেলেছি তবে ‘উত্তম কিছু’ করতে চেষ্টা করি, আর যদি উত্তম কিছু করে থাকি তবে ‘অতি উত্তম কিছু' করার জন্য উদ্যোগ নিতে পারি;

২৬. সুনির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন- সকল পযায়ে সুনির্দিষ্ট কৌশল থাকা দরকার। যেমন- প্রথমত, সমন্বিত পরিবেশ সরক্ষার্থে বিভিন্ন বাসস্তুতন্ত্র বা প্রকৃতি-পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের বর্তমান সঠিক অবস্থা জানা থাকতে হবে এতে সুনির্দিষ্ট কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা যায়। দ্বিতীয়ত, লোকজ জ্ঞানের সঙ্গে বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানের সমন্বয় করে পরিকল্পনা সাজানো দরকার। কারণ পৃথিবীব্যাপী প্রতিবেশ রক্ষায় লোকায়ত জ্ঞান, স্থানীয় সংরক্ষণ পদ্ধতি, জনগোষ্ঠীভিত্তিক সংরক্ষণ উদ্যোগগুলো বড় ভূমিকা রাখছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। তৃতীয়ত, স্থানীয় ও আঞ্চলিক সুরক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। চতুর্থত, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা এবং সবুজ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর জোর দেওয়ার সময় এখনই, সবাইকে তা মানতে হবে। প্রকৃতিকেন্দ্রিক ও জবাবদিহিমূলক মনিটরিং ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং তবেই সমন্বিত পরিবেশ সংরক্ষনের সুফল পাওয়া যাবে।

২৭. অবিরত প্রার্থনা করি- যদি কিছুই করতে না পারি তবে পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে সরাসরি যারা জড়িত তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করতে পারি। জলবায়ু পরিবর্তেনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের জন্যেও প্রার্থনা করুন। দীনদরিদ্র মানুষ যারা অমানবিক ও অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন তাদের জন্য প্রার্থনা অব্যাহত রাখুন। এই বিশ্ব জানতেও পারেনা প্রার্থনায় যে কতো আশ্চর্য্য কাজ হয়!     

করোনাভাইরাস মহামারী শিখিয়েছে আমাদের আরও বেশি যত্নবান ও রক্ষণাবেক্ষণ মনোভাব প্রয়োজন। পোপ মহোদয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা ‘লাউদাতো সি সপ্তাহ’ উদযাপন করছি। ইতোমধ্যে অনেকে নীরবে কাজ করে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছি। ভাটিকানের ‘মানব উন্নয়ন’ নামক পুণ্য দপ্তর পোপ ফ্রান্সিসের এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে আগামী ৭ বছর অবিরত বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করবে। আসুন, একসাথে, একত্রে আমাদের আবাসস্থল, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিজেদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাসমূহ  "অভিন্ন বসতবাটির সুরক্ষায় আমাদের আচরণবিধি" অনুসরণ করি তবেই মহান কিছু অর্জন সম্ভব হবে। ধরিত্রীর বুকে আনবে নতুন ছন্দ, জাগাবে নতুন আশা; ‘আমরা সবুজ, আমরা সুন্দর’ থাকি।