বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০২০

আমরা যেন শান্তির শিল্পী হয়ে উঠি



খ্রিস্টীয় আশা পোপ ফ্রান্সিস এর বিশ্ব শান্তি দিবসের বাণীর কেন্দ্রবিন্দু। নববর্ষের প্রথম দিন ১ জানুয়ারী ২০২০ খ্রিস্টাব্দ ছিল ঈশ্বর জননী মা-মারীয়ার পর্বদিন। একই দিনে কাথলিক মণ্ডলীতে পালিত হয়েছে ৫৩তম বিশ্ব শান্তি দিবস। কাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস ২০১৪ থেকে ২০২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সাতটি বিশ্ব শান্তি দিবসে বাণী রেখেছেন।  বিগত বছরসমূহে পোপ মহোদয়ে বাণী অনুধ্যান করলে আমরা বুঝতে পারি তিনি একটি ঐশ গুণকে কেন্দ্রে রেখেছেন তা হল ‘খ্রিস্টীয় আশা’। আশাই বিশ্বকে শান্তির পথ দেখায়- আমরা যেন শান্তির শিল্পী হয়ে উঠি। আধুনিক বিশ্বের চলমান চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলার পরামর্শের বাণীতে পোপ ফ্রান্সিস সর্বদা যিশুর মুখের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকাতে আহ্বান করেন। সেখান থেকেই বিশ্বের সকল মানুষ পেতে পারে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আশা ও অনুপ্রেরণা। এবছরের বিশ্ব শান্তি দিবস উপলক্ষে পোপ ফ্রান্সিস এর বিগত সাত বছরের বাণীর সারকথা অনুধাবন করতে পারি।

২০১৪ খ্রিস্টাব্দ: ভ্রাতৃত্ব - শান্তির ভিত্তি এবং পথ 
পোপ ফ্রান্সিস ১ জানুয়ারী ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বারের মতো বিশ্ব শান্তি দিবসের বাণী প্রেরণ করেছেন। তিনি সকলকে- প্রতিটি ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠির আনন্দ ও আশাপূর্ণ জীবন কামনা করেন। তাঁর বাণীর মূল বিষয় ‘ভ্রাতৃত্ব’, যা একটি অতি গুরত্বপূর্ণ মানবিক দিক কারণ আমরা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত মানুষ। তিনি বলেন ভ্রাতৃত্ব ছাড়া ন্যায্য সমাজ এবং খাঁটি ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তিনি বলেন প্রতিটি পরিবারই ভ্রাতৃত্বের ঝর্ণাধারা। পরিবারই শান্তির ভিত্তি ও প্রথম পথ, সাড়া বিশ্বে ভালবাসা ছড়িয়ে দেওয়া পরিবারের প্রধান আহ্বান। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ আমাদেরকে বিশ্বের জাতীসমূহের মধ্যে একতা ও  সম্মিলিত লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন করে থাকে। তিনি বলেন আমাদের আহ্বান প্রতিবেশী ভাইবোনদের নিয়ে একটি সমাজ গঠন করা যেখানে একে অন্যকে গ্রহণ ও যত্ন করবে কিন্তু দেখা যায় ‘উদাসানতার বিশ্বায়ন’ দ্বারা আহ্বানটি প্রায়ই অবহেলা করা হয়।  তিনি বলেন ঈশ্বরের পিতৃত্বের মধ্যেই ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি খুঁজে পাই। ঈশ্বরের পরিবারে যেখানে সকলেই একই পিতার পুত্র ও কন্যা তা অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। ভ্রাতৃত্ববোধ সামাজিক শান্তি আনয়ন করে কারণ এটি স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের মধ্যে, ব্যক্তিগত দায়িত্ব ও সমদায়িত্ববোধের মধ্যে, ব্যক্তির মঙ্গল ও সামগ্রিক মঙ্গলের মধ্যে একটি ভারসাম্য আনয়ন করে থাকে। 

২০১৫ খ্রিস্টাব্দ: তোমরা আর দাস নও, তবে ভাই এবং বোন 
পোপ ফান্সিস ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বাণীতে বলেন মানুষ দ্বারা মানুষ শোষণের স্বীকার, যা ভ্রাতৃত্ব ও সামগ্রিক মঙ্গল নষ্ট করা হচ্ছে। ‘দাসত্বের বহুবিধ রূপ’ শিরোণামে তিনি বলেন, আজ লক্ষ লক্ষ মানুষ স্বাধীনতা বঞ্চিত এবং দাসত্বের জীবন যাপন করছে, যদিও আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহ অসংখ্য বিপরিতমূখী চুক্তি গ্রহণ করেছে।  পোপ অনুধাবন করেছেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বিভিন্ন ভাবে আধুনিক দাসত্বের স্বীকার হচ্ছে- শ্রমিক, অভিবাসী, বাধ্যতামূলক বেশ্যাবৃত্তি, বিবাহের জন্য জোড়পূর্বক বিক্রি, মানব পাচার, সৈন্য হিসেবে অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে জোড়পূর্বক নিয়োগদান ইত্যাদি। অতীতের মতো বর্তমানেও মানুষকে বস্তুরূপে বিবেচনা করা হয় যা পোপ দাসত্বের কারণসমূহের মধ্যে অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যখনই পাপ মানুষের হৃদয়কে কলুষিত করে এবং আমাদেরকে সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিবেশীর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, তখনই মানুষকে আর সমান মর্যাদার মানুষ হিসাবে গণ্য করা হয় না। তখনই তাদেরকে বস্তুরূপে ব্যবহার করে নি:শেষ করা হয়। তিনি সমস্ত পুরুষ ও মহিলাদের অনুরোধ করেন যেন শয়তানের সঙ্গি না হন, বরং আমরা যেন খ্রিস্টের কষ্টভোগী দেহ স্পর্শ করি যিনি অগণিত অবহেলিত, নূন্যতম ভাইবোনদের মাঝে প্রকাশিত।

২০১৬ খ্রিস্টাব্দ: উদাসীনতা পরিহার কর এবং শান্তি জয় কর 
এবছর পোপ ফ্রান্সিস ‘উদাসীনতা’ পরিহার করতে সকলকে আহ্বান জানান। আমাদের দ্ব›দ্ব ও সংকটসমূহ চিহ্নিত করতে হবে যা ‘সত্যিকারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের খন্ড খন্ড লড়াই’ এবং পোপ সকলকে আহ্বানন করেন এসব মন্দকে পরিহার করতে। তিনি হালছাড়া ও উদাসীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করার মানবিক গুণের প্রতি আশা হারাতে মানা করেন। তিনি বিভিন্ন প্রকার উদাসীনতা চিহ্নিত করেন, প্রথমে ঈশ্বরের প্রতি উদাসীনতা যা প্রতিবেশী মানুষের প্রতি এবং পরিবেশের প্রতি উদাসীনতার দিকে পরিচালিত করে। উদাসীনতা ও প্রতিশ্রুতির অভাব কাটিয়ে নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী সমাজে মঙ্গলকাজ করতে হবে যা একটি মানবিক দায়িত্ব।  তিনি উদাসীনতার বদলে সমদায়িত্ববোধ, দয়া ও মমত্ববোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বলেন । যা করতে অন্তরের রূপান্তর প্রয়োজন, ঈশ্বরের অনুগ্রহ আমাদের পাথরের হৃদয়কে রক্তমাংসের হৃদয়ে পরিনত করতে পারে, যা অন্যদের প্রতি খাঁটি সমদায়িত্ববোধ জাগ্রত করে থাকে। শান্তি হল এ জাতীয় সংস্কৃতির ফল। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ ছিল দয়ার জয়ন্তী বর্ষ। জয়ন্তী বর্ষের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বকে মানবিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারি যা পরিবার, প্রতিবেশী ও কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করতে হবে ।  

২০১৭ খ্রিস্টাব্দ: অহিংসা - শান্তি স্থাপণে একটি রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য 
অহিংসা আমাদের জীবনযাত্রার সঠিক পথ অনুসন্ধান করতে মনোনিবেশ করায়। যখন সহিংসার ক্ষতিগ্রস্থরা প্রতিশোধ নেওয়ার প্রলোভনকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়, তখন তারা অহিংস শান্তি প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম হয়ে উঠে। সহিংসতা আমাদের ভগ্ন পৃথিবীর নিরাময় করতে পারে না তার বদলে কলকাতার মাদার তেরেজা, মহাত্মা গান্ধী এবং ডাঃ মার্টিন লুথারের দৃষ্টান্ত আমাদের ক্ষত নিরাময় করতে পারে। পর্বতের উপরে যিশুই শান্তি স্থাপণের একটি কৌশল ও নির্দেশনা প্রদান করেছেন। অষ্টকল্যাণ বাণী সেই ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি প্রদান করে যাকে অনুসরণে আমরা ধন্য, ভাল এবং খাঁটি হিসেবে চিহ্নিত হতে পারি। যিশু বলেছেন ধণ্য তারা যারা বিনয়ী কোমলপ্রাণ, যারা দয়ালু, যারা শান্তি স্থাপন করে, যারা অন্তরে খাঁটি, যারা ন্যায্যতার জন্য ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত (মথি ৫:১-১৩)। সক্রিয় অহিংসা প্রকাশ করে যে দ্বন্দ্বের  চেয়ে একতা আরো শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ। আমরা প্রার্থনাপূর্ণ ও সক্রিয়ভাবে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারি যেন আমাদের হৃদয়, কথা ও কাজ থেকে সহিংসতা দূরীভূত হয়। আমরা যেন অহিংস মানুষ হয়ে উঠি এবং অহিংস সমাজ গড়ে তুলতে পারি যা আমাদের বসতবাটির যত্ন নিবে।  

২০১৮ খ্রিস্টাব্দ: অভিবাসী এবং শরণার্থী- শান্তির খুঁজে পুরুষ ও মহিলা সকলে
যারা ইচ্ছাকৃতভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘ এবং বিপদসঙ্কুল পথ অতিক্রম করে ‘কোথাও শান্তিতে থাকার জন্য’ সন্ধানে আছে তাদের জন্য পোপ ফান্সিস ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের বিশ্ব শান্তি দিবসের বাণী উৎসর্গ করেছেন। যারা  যুদ্ধ ও ক্ষুধার যন্ত্রণায় পালিয়ে বেড়াছে, অথবা বৈষম্য, নিপীড়ন, দারিদ্র্য এবং পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণে বাধ্য হয়ে জন্মভূমি ত্যাগ করেছে তাদেরকে গভীর সমবেদনা নিয়ে গ্রহণ করতে পোপ মহোদয় সকলকে আহ্বান করেছেন। আদিপুস্তক ও মঙ্গলবাণীর বিশ্বাসের আলোকে পুন্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস চারটি করণীয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন যার মাধ্যমে আমরা আশ্রয় সন্ধানকারী, শরণার্থী, অভিবাসী এবং মানব পাচারের শিকার ভাইবোনদের অন্তরে শান্তি খুঁজে পেতে সুযোগ করে দিতে পারি।। সমসাময়িক কালের অভিবাসনের চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে নিবিড় সমন্বয় ও কার্যকরী সাড়াদানের ক্ষেত্রে এ চারটি করণীয় হল- স্বাগত জানানো, সুরক্ষা দেয়া, সংবর্ধিত করা ও সংযুক্ত করা। এখানে ‘স্বাগত জানানো’ এর অর্থ প্রবেশের জন্য আইনী পথকে প্রসারিত করা, ‘সুরক্ষা দেয়া’ এর অর্থ তাদের মর্যাদা স্বীকৃতি প্রদান ও রক্ষা করা যা আমাদের কর্তব্য, ‘সংবর্ধিত করা’ এর অর্থ তাদের অবিচ্ছেদ্য মানব বিকাশে সমর্থন দেয়া এবং ‘সংযুক্তি করা’ এর অর্থ সমাজে তাদের পুরোপুরি অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা। পোপ মহোদয় আমাদের স্মরণে রাখতে বলেছেন, “তোমরা নিশ্চিত হতে পারো যে, সকল কর্মের পেছনে যে শ্রম, তাতে অবশ্যই মণ্ডলীর অংশগ্রহণ আছে।” 

২০১৯ খ্রিস্টাব্দ: শান্তি পরিচর্যায় ভাল রাজনীতি   
রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক দায়িত্বপ্রাপ্তদের সামনে একটি চ্যালেঞ্জ উম্মুক্ত করে পোপ ফ্রান্সিস ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের বিশ্ব শান্তি দিবসে বলেন, যদি মানুষের জীবন, স্বাধীনতা এবং মর্যাদার প্রতি মৌলিক শ্রদ্ধা থাকে তবে রাজনৈতিক জীবন সত্যই অসামান্য সেবাকাজ হয়ে উঠতে পারে।  ভাল রাজনীতি মৌলিক মানবাধিকার  প্রতিষ্ঠা ও সম্মান করে যা বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস ও কৃতজ্ঞতার বন্ধনকে শক্তিশালী করে তুলে। অবশ্য এটা করা ভাল রাজনীতির দায়িত্বও। তিনি কতগুলো বিষয় তুলে ধরেছেন যা বিবেচনায় আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ- দুর্নীতি, ক্ষমতার অসততা প্রতিপালন, বর্ণবাদ এবং প্রকৃতিক সম্পদ লুন্ঠন এসব একটি বিশুদ্ধ গণতন্ত্রের আদর্শকে ক্ষুন্ন করে, জনজীবন কলুষিত করে এবং সামাজিক সম্প্রীতির হুমকীস্বরূপ। পোপ বলেন শান্তি হল মানুষের পারস্পরিক দায়িত্ববোধ ও আস্থার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি দুর্দান্ত রাজনৈতিক কর্মপ্রক্রিয়ার ফল। এই চ্যালেঞ্জটি নতুনভাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন। এটি হৃদয় ও আত্মার রূপান্তর জড়িত। পোপ বলেন এই রূপান্তরটি অভ্যন্তরীণ ও পরস্পর একাত্মবোধে সম্পৃক্ত। এর তিনটি অবিচ্ছেদ্য দিক রয়েছে- নিজের সাথে শান্তি, অন্যের সাথে শান্তি এবং সমস্ত সৃষ্টির সাথে শান্তি। আশার বিষয় হল- যা ঈশ্বর আমাদের অনুগ্রহ করে সৃষ্টির সময় দিয়েছে তা মাত্র পুনরুদ্ধার করতে আমাদের অংশগ্রহণ দরকার। 

২০২০ খ্রিস্টাব্দ: শান্তি হল আশায় পথচলা: সংলাপ, পুনর্মিলন এবং পরিবেশগত রূপান্তর 
‘আশা’ আবারো পোপ ফ্রান্সিসের ২০২০ খ্রিস্টাব্দের বিশ্ব শান্তি দিবসের বাণীতে কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। পোপ ফ্রান্সিস ৫৩তম বিশ্ব শান্তি দিবসে বলতে চান আশাই বিশ্বকে শান্তির পথ দেখায়, শান্তি হল আশায় পথচলা । যে বিষয়টি উম্মুক্ত করা হয় তা হল শান্তি একটি বিশিষ্ট ও অনন্য মূল্যবোধ যা আমাদের প্রত্যাশা এবং সমগ্র মানব পরিবারের আকাক্সক্ষাস্বরূপ। অন্যদিকে অবিশ্বাস ও ভয় পারস্পরিক সম্পর্ক দুর্বল করে যা সহিংসতার ঝুঁকি সৃষ্টি করে। শান্তির শিল্পী হওয়ার জন্য তিনি সকলকে আহ্বান করেন। পুর্ণমিলন ও সংলাপের স্থাপণ করে পরিবেশ বিপর্যয়মুক্তির যাত্রায় জীবনকে নতুনভাবে উপভোগের আশাতে এগিয়ে হওয়া যায়। মানুষের সৃষ্ট যুদ্ধ ও সংঘর্ষ দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং দুঃখ ও অন্যায্যতাকেই উৎসাহিত করে। ভ্রাতৃপ্রেম মানবতার পথে আনতে পারে তবে প্রতিটি যুদ্ধ ভ্রাতৃপ্রেম বিনষ্ট করে এবং মানব পরিবারের সহজাত ভালবাসার আহ্বানকে বিনষ্ট করে। মানুষে মানুষে যে অবিশ্বাস তা উত্তম ভ্রাতৃপ্রেম এবং একই ঈশ্বরের সৃষ্ট জীব হিসেবে আস্থা বৃদ্ধি, সংলাপ ও বিশ্বাসের অনুশীলন করে মোচন করা সম্ভব। শান্তির আকাক্সক্ষা মানুষের হৃদয় গভীরে বিদ্যমান তাই যারা পারমানবিক অস্ত্রের আঘাত থেকে বেঁচে আছেন তারা শান্তি স্থাপনের স্বাক্ষ্য বহন করে চলছে। অতীত গঠনার অভিজ্ঞতার ফল বর্তমানে ও ভবিষ্যতের শান্তির বাহক হয়ে উঠতে পারে। মানুষ সাময়িক লোভ চরিতার্থ করে প্রকৃতিক সম্পদকে বিনষ্ট করে নিজের বসতবাটিকে দুষিত করে তুলছে। পোপ সকলকে আহ্বান করেন যেন নিজে অন্তর থেকে অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তার থেকে দূরে থাকে এবং সকলকে ঈশ্বরের সন্তান ভেবে নিজের ভাই বোন হিসেবে গ্রহণ করে। ঈশ্বরের অনুগ্রহ মানুষের অন্তরে রয়েছে, সেই অনুগ্রহে মানুষ স্বার্থহীন ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একে অন্যের জন্য শান্তি উৎসর্গ করতে পারে। আশাই আমাদের শান্তির পথ দেখায় কারণ ঈশ্বর সৃষ্টিলগ্নে প্রত্যেক মানুষের অন্তরে শান্তি প্রদান করেছেন। আমাদের মন্দ কাজের ফল দ্ব›দ্ব, সংকট ও সংঘাত যা অশান্তির সৃষ্টি করে আবার আমাদের ছোট ছোট ভাল কাজের ফল বিশ্বের শান্তি। পবিত্র আত্মার পরিচালনায় আমরা শান্তির শিল্পী হয়ে উঠতে পারি।